‘আমার বাবাকে মারধর করে মেঝেতে ফেলে রেখেছিল,আহতাবস্থায় একটু পানি খেতে চেয়েছিল, কিন্ত খুনিরা এতটাই নির্মম যে বাবাকে একটু পানি পর্যন্ত খেতে দেয়নি। কি এমন অপরাধ করেছিল বাবা! আমার বাবা প্রেসক্লাবে কেন গিয়েছিল এই অপরাধে তাকে মেরে ফেলতে হবে।’ প্রেসক্লাবে আটকে রেখে মারধরে মৃত্যু সাংবাদিক তালুকদার মাসউদের মেয়ে সাদিয়া তালুকদার তন্নি বাবা হত্যার বিচার চেয়ে মানবন্ধনে বক্তব্যে এ কথা বলেন।
সাংবাদিক তালুকদার মাসউদ হত্যার বিচারের দাবি ও আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। মঙ্গলবার (০৫ মার্চ) সকাল ১০টায় এলাকাবাসীর উদ্যোগে বরগুনা শহরের পৌর সুপার মার্কেটের সামনের সড়কে এ কর্র্মসূচি পালিত হয়। নিহত সাংবাদিক তালুকদার মাসউদের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসী এবং বরগুনা সদর উপজেলা ইউপি সদস্য এসোসিয়েশন মানববন্ধনে অংশ নেয়।
মানবন্ধন চলাকালীন সমাবেশে বক্তব্যে নিহত তালুকদার মাসউদের স্ত্রী সাজেদা, মেয়ে সাদিয়া তালুকদার তন্নি ও ছেলে তানহা তালুকদার বক্তব্য রাখেন। বাবার নির্মম হত্যাকান্ডের বিবরণ তুলে ধরে মেয়ে সাদিয়া তালুকদার তন্নি বলেন, ‘বাবা হারানোর কি বেদনা যাদের বাবা নেই শুধুমাত্র তারাই বুঝতে পারে। ঘটনার সময় বাবা আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, আমাকে প্রেসক্লাবে আটকে রেখে মারধর করা হচ্ছে। আমি ছুটে এসেছিলাম, কিন্ত আমাকে প্রেসক্লাবে ঢুকতে দেয়া হয়নি। পরে পুলিশ আহতাবস্থায় আমার বাবাকে উদ্ধার করে নিচে নিয়ে এসে এম্বুলেন্সে তুলে দেয়। আমার বাবাকে কারা কিভাবে মেরেছে সব ভিডিওতে বলেছে। আমার বাবা আহতাবস্থা কাতরাচ্ছিলেন, একটু পানি খেতে চেয়েছিলেন, তাকে পানি পর্যন্ত দেয়া হয়নি। আমি আমার বাবার হত্যাকারীদের দ্রæত গ্রেফতার চাই, আমি রাষ্ট্রের কাছে ন্যায় বিচার চাই।’ ছেলে তানহা তালুকদার বাবা হত্যার বিচার চেয়ে আসামীদের দ্রæত গ্রেফতার ও বিচারের দাবি জানান। মামলার বাদি ও তালুকদার মাসউদের স্ত্রী সাজেদা বলেন,‘ মামলার পর আসামীরা আমাকে কল করে হুমকি দিচ্ছে,আমাকে মামলা উঠাতে ২০ লাখ টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেয়। আমি ন্যায় বিচার নিয়ে শঙ্কিত, আমরা অনিরাপদ। আসামীদের দ্রæত গ্রেফতার করে ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা হোক। খেলাঘর বরগুনা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুশফিক আরিফ বলেন, এনটিভির সাংবাদিক সোহেল হাফিজ প্রেসক্লাবে সিন্ডিকেট গড়ে তুলে সাংবাদিকতার নামে গুন্ডা বাহীনি সৃষ্টি করেছিল। সেই বাহীনির হাতে নির্মমভাবে তালুকদার মাসউদ নিহত হয়েছে। ওদের পরিচয় কেবল খুনি, হত্যাকারী। সোহেল হাফিজ গ্যাং এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। আসামীদের দ্রæত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
সমাবশে বরগুনা পৌরসভার প্যানেল মেয়র রইসুল আলম রিপন, বরগুনা সদর উপজেলা ইউপি সদস্য এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বশির উদ্দীন, খেলাঘর বরগুনা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মাছরাঙা টিভির বরগুনা প্রতিনিধি মুশফিক আরিফ, সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন ফসল, রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রুদ্র রুহান, সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের বরগুনায় কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ তালুকদার মাসউদসহ কয়েকজন সাংবাদিককে মারধর করে জিম্মি করে রাখার খবর পেয়ে আমরা প্রেসক্লাবে গিয়ে তাদের উদ্ধার করি। এতেও কয়েকজন বাধা দিয়েছিল। তালুকদার মাসউদের মৃত্যুর খবর শুনেই আসামীরা গা ঢাকা দিয়েছে। আমরা আসামীদের যতদ্রæত সম্ভব আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।