নরসিংদীতে শতবর্ষী ‘পলো বাওয়া’ উৎসবে মেতেছে হাজারো মানুষ 

নরসিংদীর রায়পুরায় শতবর্ষ পুরনো ‘পলো বাওয়া, উৎসবে মেতে উঠেছে হাজারো মানুষ। গ্রামীন মাছ শিকারীর দল বেধে শিকার করছে নানা প্রজাতির দেশীয় মাছ। সোমবার (৪ মার্চ) উপজেলার পলাশতলী ইউনিয়নের খলিলাবাদ খলিলাবাদ বিলে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও আয়োজন করা হয় দিনব্যাপী ‘পলো বাওয়া’ উৎসবের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার স্থানীয় জনগন থেকে শুরু করে, বহু দূর দূরান্ত থেকে মাছ শিকারিরা সকাল থেকে বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল, ব্যাটারি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মিনি ট্রাকযোগে হাজির হন বিলে। পলো নিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে দল বেঁধে হৈ হুল্লোড় করে নেমেছেন খলিলাবাদ বিলে। উৎসবে কিশোর থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ্ব বয়োবৃদ্ধও রয়েছেন। হাজারো অধিক শিকারী পানিতে নেমে পলো, মাছ রাখার থলে নিয়ে কচুরিপানা সড়িয়ে হই হুল্লোড়ে মাছ শিকার ও উৎসব পালন করতে দেখা গেছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই মাছ ধরার উৎসব। তাদের শিকার করা মাছের মধ্যে ছিল কৈ, মাগুর, শিং, পাবদা, টেংরা, পুঁটি, ডারকা, মলা, ঢেলা, চেলা, শাল চোপরা, শোল, বোয়াল, আইড়, ভ্যাদা, বুড়াল, বাইম, খলিসা, ফলি, চিংড়ি, মালান্দা, খরকাটি, গজার, শবেদা, চেং, টাকি, চিতল, গতা, পোয়া, বালিয়া, উপর চকুয়া, কাকিলা, গুত্তুম সহ নানা জাতের দেশীয় মাছ। যা আজ কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়ার পথে।
পলো উৎসবে আসা লোককজন জানান, শত বছরের উপর হল এই বিলে পলো দিয়ে মাছ ধরা হয়, প্রতি বছর আয়োজন হয় এই পলো উৎসবের। প্রতি বছর ফাল্গুন-চৈত্র মাসের কোন একদিনে এই উৎসব আয়োজন করা হয়। উৎসবটিকে ঘীরে নরসিংদীসহ পার্শ্ববর্তী জেলার গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মুন্সিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, রাজবাড়ী, ময়মনসিংহ সহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ২ হাজারো অধিক শিকারী প্রতি বছর এ উৎসবে অংশ নেয়। তবে বিলে পানি ও মাছের ওপর ভিত্তি করে বছরে দুইবারও উৎসব হয়। নরসিংদী থেকে যাওয়া আবদুস সামাদ  বলেন, ‘আমি প্রায় ১৭ বছর যাবত প্রতি বছর এখানে আসি। এবারও এসেছি। সবাই মিলে হাজারো জনতার মাঝে মাছ ধরার যে আনন্দ আসলেই উপভোগের । সবাই মিলে আনন্দ করছি, হৈ হুল্লোড় করছি এটাই অনেক মজা খুব আনন্দ। মাছ পাওয়া না পাওয়া কোন বিষয় না।
গাজিপুরের কালীগঞ্জ থেকে আসা ৭৪ বছরের বৃদ্ধ আরমান সরকার বলেন, ‘আমি একটি বড় বোয়ালসহ ছোট মাছ পেয়েছি। এতেই আমি খুশি। টাকা দিলেও এই মাছ আমি কিনতে পারবো না। এটা শখের জিনিস। আমি বাড়ি নিয়ে পরিবারকে নিয়ে মজা করে খাবো।’ স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি বছরই এই বিলে উৎসবমুখর পরিবেশে পলো-বাওয়া উৎসব হয়। এই বিল সবার জন্য উন্মুক্ত। সবাই এখানে সারা বছরই মাছ ধরতে পারে।’
শেয়ার করুন:

Recommended For You