বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপির আন্দোলন ১৫ বছরের অপশাসনের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের জনগণ, দেশের জাতীয়তাবাদের পক্ষের শক্তি দেশপ্রেমী নাগরিকগণ, সবার অংশগ্রহণে এক বিশাল আন্দোলনের সূচনা হয়েছে বাংলাদেশে। সূচনা হয়েছে, শেষ হয়নি। এ আন্দোলন অব্যহত আছে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে। জনগণের ভোট কেড়ে নেওয়া সন্ত্রাসী এ রেজিমের বাহিনীর বিরুদ্ধে এবং কিছু সুবিধাবাদী লোক যারা জনগণের সকল অধিকার ও ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। জনগণ বিএনপির পক্ষে রায় দিয়েছে। জনগণ এখনও তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করার অপেক্ষায় আছে। জনগণ এখনও তার অধিকার ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায় আছে।শুধুমাত্র কিছু লোক অবৈধ ও অনৈতিকভাবে একটি চক্র সৃষ্টি করে ক্ষমতায় বসে আছে। আওয়ামী লীগ ক্যু করে ক্ষমতা দখল করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। আন্দোলন আন্দোলনের জায়গা আছে, চলমান আছে। বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ এ আন্দোলন করছে। এটা বাস্তবায়িত হবেই।
তিনি শনিবার (২ মার্চ) বিকেলে নগরীর কাজির দেউরী নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের মাঠে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, উপজাতি বিষয়ক সম্পাদক ম্যা মা চিং, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দীন মজুমদার, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সি. যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক এনাম।
আমীর খসরু বলেন, বিএনপির আন্দোলন গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার আন্দোলন। এটা কোনো দলের বা ব্যক্তির একক আন্দোলন নয়। এ আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের সাংবিধানিকঅধিকার ফিরে পাব। কিন্তু সেই অপশক্তি বোমা, সাউন্ড গ্রেনেন্ড ব্যবহার ও গুম, খুনের মাধ্যমে জনগনের সে অধিকার আবার কেড়ে নিয়েছে। কিন্তু ভালো খবর হচ্ছে আন্দোলনের দাবি ছিল এ ফ্যাসিস্ট সরকারের অধীনে বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচনে যাবে না। সে আহবান বিএনপিসহ বাংলাদেশের সমস্ত রাজনীতিবিদ সাড়া দিয়েছে শুধু গুটি কয়েক ভিক্ষুক রাজনীতিবিদ ছাড়া। প্রায়ই সমস্ত রাজনৈতিক শক্তি একপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের সুশীল সমাজ একপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশের পেশাজীবি ও সাংবাদিক ভাইরাও একটি পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা বলেছিলাম তথাকথিত নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ অংশগ্রণ করবে না। বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ আমাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ভোটকেন্দ্রে যায়নি। এটা কোনো নির্বাচন নয়। নির্বাচনে তো দুই পক্ষ থাকবে। যেখানে দুই পক্ষ থাকবেনা সেটা নির্বাচন হতে পারে না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগে যোগ হয়েছিল গায়েবি মামলা, নির্বাচনের পর যোগ হয়েছে ডামি প্রার্থী। ডামি প্রার্থী, ডামি ভোটার আর ডামি নির্বাচন এসব শব্দ যোগ হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ ভোট কেন্দ্রে যায়নি। যারা গেছে তাদের স্থানীয় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা ভয় দেখিয়েছে যাওয়ার জন্য। সরকারি কর্মকর্তাদের সুযোগ সুবিধা ছিনিয়ে নেওয়ার ভয় দেখিয়েছে। সুবিধাবঞ্চিতদের কাছ থেকে সরকারি কার্ড পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এতকিছুর পরও বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনে যায়নি। অর্থাৎ এ গণভোটে বাংলাদেশের মানুষ এত চাপের মধ্যে, এত গুম, খুনের মধ্যে সে রেজিমকে প্রত্যাখান করেছে। এটা হচ্ছে আন্দোলনের সুফল। অনেক বলছে ক্ষমতা নিয়ে নিয়েছে। আরে ক্ষমতা! ক্ষমতা তো অনেকভাবে নেওয়া যায়। আমরা দেখেছি বাংলাদেশসহ অনেক দেশে সামরিক বাহিনী ক্যু করে ক্ষমতা নিয়ে নেয়। আওয়ামী লীগ সে ক্যু করেছে। জনগণের তো এখানে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ক্ষমতা জোর করে দখল করা আর ক্ষমতায় যাওয়ার মধ্যে বিশাল ব্যবধান আছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের মানুষ গণভোটে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করেছে। এটা একটা সফলতা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে গত ৭ জানুয়ারি যে গণভোট হয়েছে সেখানে জনগণের জয় হয়েছে। গণতন্ত্রের জয় হয়েছে। বিএনপির জয় হয়েছে। যারা এ আন্দোলন করতে গিয়ে রাজপথে জীবন দিয়েছে, জেলে গিয়েছে, খুন ও গুম হয়েছে তাদের জয় হয়েছে। এ জয়কে আগামী দিনে বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের আন্দোলনের যে ধারা সেটা চালিয়ে যেতে হবে। আমাদেরকে জেলে নিয়ে তারা মনে করেছিল বিএনপির নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙ্গে দেবে। কিন্তু সেটা তারা করতে পারেনি। আমি তো মনে করি আরও জোরদার হয়েছে। যারা জেলে আছে তারা এক কাপড়ে আছে। এত কষ্টের মধ্যেও তাদের কারো মনোবল ভাঙ্গেনি। তাদের মনোবল শক্ত আছে। এটাই বিজয়।
আমীর খসরু বলেন, বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে অনেক শক্তিশালী। নির্বাচনের পর আরও শক্তিশালী হয়েছে। আমার ব্যক্তিগতভাবে মনোবল আগে থেকে আরও শক্তিশালী হয়েছে। এটাই রাজনীতি, রাজনীতির জয়। এটাই বিএনপির সফলতা। বিএনপি অনেক শক্তিশালী অবস্থানে আছে তারেক রহমানের নেতৃত্বে। কর্মীরা কর্মসূচির অপেক্ষায় আছে। সামনে রমজান মাস আসছে। আমরা রোজা রাখবো, নামাজ পড়ব। সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির সব কর্মসূচিকে সফলভাবে পালন করতে হবে। এতে সবাই যেমন চাঙ্গা থাকবে তেমনি জনগণের কাছে যেতে পারবে। ইফতার পার্টি না করে ওই টাকা দিয়ে জনগণের কাছে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করব। বাংলাদেশের মানুষ বিএনপির রাজনীতির শক্তি। মানুষের কাছে যেতে হবে। সবাইকে ঐক্যবধভাবে কাজ করতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, চট্টগ্রামে খসরু ভাইয়ের অনুপস্থিতি আমরা উপলব্ধি করেছিলাম। আজকে উনার মুক্তিতে সকল নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আগামীতে তারেক রহমানের নেতৃত্বে আন্দোলন ত্বরান্বিত করা হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব। সরকারের সকল ষড়যন্ত্রকে চিহ্ন করে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাবো। বিজয় আমাদের হবেই। এস এম ফজলুল হক বলেন, আজকের মতবিনিময় সভা জনসভায় পরিণত হয়েছে। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের জন্য চার মাস জেল কেটেছেন। শেখ হাসিনা সারাদেশকে জেলখানা বানিয়ে রেখেছে। কারাবন্দীদের মুক্তির জন্য আমাদেরকে আন্দোলনের স্টাইল বদলাতে হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, বাংলাদেশের জনগণ সবসময় গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই করেছে। যতদিন দেশে গণতন্ত্র ফেরত না আসবে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার না আসবে ততদিন ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। চূড়ান্ত বিজয় না আসা পর্যন্ত তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির আন্দোলন চলবে। সভাপতির বক্তব্যে ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, চট্টগ্রামে বিএনপি প্রাণ ফিরে পেয়েছে। আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রামের মানুষকে প্রাণের সঞ্চার করেছেন। আমাদের আন্দোলন চলবে। আমাদের আন্দোলন ভোট ডাকাতদের বিরুদ্ধে। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার ও মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারের লড়াই। তারেক রহমানের নেতৃত্বে এই অবৈধ সরকারের পতন ঘটিয়ে জনগণের অধিকার আদায় করে ছাড়বো।
আবুল হাশেম বক্কর বলেন, অবৈধ ভাবে ক্ষমতায় বসেই আওয়ামীলীগ বেপরোয়া আচরণ শুরু করেছে। দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। দখলদার সরকারের নীতিই হচ্ছে গরিব মানুষের পকেট কাটা। ডামি সরকার জনগণের বাঁচা মরাকে পাত্তা দেয় না।
সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া, বান্দরবান জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাবেদ রেজা, উত্তর জেলা বিএনপি’র সি. যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হালিম, মহানগর বিএনপির সি. যুগ্ম আহবায়ক আলহাজ্ব এম এ আজিজ, যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ মিয়া ভোলা, এড. আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দিন, এস এম সাইফুল আলম, এস কে খোদা তোতন, নাজিমুর রহমান, শফিকুর রহমান স্বপন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, মো. শাহ আলম, ইসকান্দর মির্জা, আবদুল মান্নান, উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক ইউনুস চৌধুরী, নুরুল আমিন, নূর মোহাম্মদ, নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, সরওয়ার আলমগীর, কাজী সালাউদ্দিন, আহবায়ক কমিটির সদস্য এরশাদ উল্লাহ, মোশারফ হোসেন, জয়নাল আবেদীন জিয়া, হারুন জামান, মো. আলী, কর্নেল আজিম উল্লাহ বাহার, নিয়াজ মো. খান, এস এম আবুল ফয়েজ, নূরুল আনোয়ার, অ্যাড. ফোরকান, আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী, এম মঞ্জুর উদ্দিন চৌধুরী, কামরুল ইসলাম হোসাইনী, এস এম মামুন মিয়া, নাজমুল মোস্তফা আমিন, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, জাহাঙ্গীর আলম দুলাল, আবুল হাশেম, মন্জুর আলম মন্জু, আনোয়ার হোসেন লিপু, মন্জুর আলম চৌধুরী মন্জু, মো. কামরুল ইসলাম, এড. আবু তাহের, অধ্যাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী, অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন বাহার, আউয়াল চৌধুরী, সেলিম চেয়ারম্যান, শাহিদুল ইসলাম চৌধুরী, খোরশেদ আলম, মফজল আহমদ চৌধুরী, জামাল হোসেন, ভিপি মোজাম্মেল, মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী জাহেদ, হুমায়ন কবির আনসার, আমিনুর রহমান চৌধুরী, হাজী রফিক, ইসহাক চৌধুরী, হামিদুল হক মান্নান, নূরুল কবির, মঈনুল আলম ছোটন, শফিকুল ইসলাম চৌধুরী, মিশকাতুল ইসলাম চৌধুরী পাপ্পা, মহানগর যুবদলের সাধারন সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, বিভাগীয় শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহার, কেন্দ্রীয় মহিলাদলের যুগ্ম সম্পাদক ফাতেমা বাদশা, উত্তর জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সরোয়ার উদ্দিন সেলিম, মহিলাদলের সভাপতি নার্গিস আকতার, দক্ষিণ জেলা মহিলাদলের সভাপতি জান্নাতুন নাঈম রিকু, মহানগর ছাত্রদলের আহবায়ক সাইফুল আলম, সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন, দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক রবিউল হোসেন রবি, সদস্য সচিব কামরুদ্দিন সবুজ প্রমুখ।