বরগুনা প্রেসক্লাবে হামলা ও দখল চেষ্টার প্রতিবাদ এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। শনিবার (২ মার্চ) বেলা এগারোটার দিকে বরগুনা প্রেসক্লাব চত্বরে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধনে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আইনজীবী সমিতিসহ বরগুনার বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও সংবাদকর্মী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। এসময় বক্তারা ঐতিহ্যবাহী বরগুনা প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়ে দখল চেষ্টা এবং ফেসবুকে একপেশে তথ্য দিয়ে অপপ্রচারের নিন্দা জানান এবং দ্রুত আসামিদের গ্রেফতারের দাবি জানান।মানববন্ধন চলাকালীন সমাবেশে বরগুনা পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম স্বপন বলেন, বরগুনা প্রেসক্লাবে পরিচ্ছন্ন ও মেধাবী সংবাদকর্মীরা সদস্যপদ পেয়ে থাকেন। প্রেসক্লাবের এমন সম্মানিত সদস্যদের নিয়ে ফেসবুকে মুশফিক আরিফ যে ধরনের কথা বলেন তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। এই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে আপনারা সবাই পদক্ষেপ নেন; অন্যথায় আমরা বরগুনার সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দরা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব।
বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট মোঃ মাইনুল হোসেন বলেন, বরগুনা প্রেসক্লাবের নিন্দনীয় হামলার ঘটনা শুধু সাংবাদিক সমাজের জন্য নয়; শুধু প্রেসক্লাবের জন্য নয়; পুরো বরগুনাবাসীর জন্য এটি একটি কলঙ্কিত ইতিহাস। ঐতিহ্যবাহী বরগুনা প্রেসক্লাবে হামলার মতো এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমি আর কোনদিন শুনিনি। যারা এই দুঃসাহস দেখিয়েছে, যারা এই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট; অতি দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য আমি বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে অনুরোধ জানাচ্ছি। যদি এটা করা না হয়, তাহলে বরগুনা কলঙ্কিত হবে, ঐতিহ্যবাহী বরগুনা প্রেসক্লাবের সুনাম সুখ্যাতি নষ্ট হবে। এটা আমরা কামনা করি না। তাই আমরা চাই আসামীদের দ্রুত গ্রেফতার করা হোক।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক চ্যানেল টোয়েন্টিফোর এবং দৈনিক সমকালের বরগুনা প্রতিনিধি আবু জাফর মোঃ সালেহ বলেন, প্রেসক্লাবে ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় আমরা একটি মামলা দায়ের করেছি। আদালত পিবিআইকে মামলার তদন্ত করার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমরা একটি স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। এই মামলায় যারা অভিযুক্ত হয়েছেন – তাদেরকে আমরা গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানাচ্ছি।
দৈনিক যুগান্তরের স্টাফ রিপোর্টার ও বাংলাদেশ বেতারের বরগুনা প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট মজিবুল হক কিসলু বলেন, ঐতিহ্যবাহী বরগুনা প্রেসক্লাব নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছে তাদেরকে ধিক্কার জানাই। এ প্রেসক্লাবের একটি গঠনতন্ত্র আছে। সেই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী প্রেসক্লাব পরিচালিত হয়। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বরগুনা প্রেসক্লাবে যে ন্যাক্কারজনক হামলা হয়েছে তাতে পুরো বাংলাদেশের মানুষ হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন। একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠিত সংগঠনে যদি কেউ হামলা চালিয়ে দখল করার চেষ্টা করে এর থেকে ঘৃণিত কাজ আর কিছু হতে পারে না। এ ঘটনা জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাই আমি।।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাফর হোসেন হাওলাদার বলেন, মানববন্ধনের মত একটি শান্তিপূর্ণ প্রোগ্রামের মাধ্যমে আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছি। আইন অনুযায়ী পুলিশ আসামি গ্রেফতার না করলে আমরা এর থেকেও কঠোর কর্মসূচি দেব। প্রয়োজনে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। তবুও বরগুনা প্রেসক্লাবের সম্মান বিন্দুমাত্র ক্ষুন্ন হতে দেবো না আমরা। প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়ে আমাদের সহকর্মীদের আহত করা হয়েছে। প্রেসক্লাবের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা হয়েছে। ফেসবুকে প্রেস ক্লাবের বিরুদ্ধে একপেশে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তাই আমরা আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট গোলাম মোস্তফা কাদের বলেন, অপসংবাদিকতা রোধে যখন বরগুনা প্রেসক্লাব সোচ্চার, ঠিক সেই মুহূর্তে বরগুনা প্রেসক্লাবে হামলা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রেসক্লাবের যেসব সদস্য আহত হয়েছেন আমি তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। সকলের আন্তরিক সহযোগিতায় বরগুনা প্রেসক্লাব আমরা দখলের হাত থেকে রক্ষা করতে পেরেছি। তাই আমরা সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমরা আমাদের একটাই দাবি – আমরা অতি দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তার চাই।
বরগুনা প্রেসক্লাবের অধিকাংশ সদস্য ভারতে অবস্থানরত অবস্থায় গত ১৯ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের নেতৃত্বে বরগুনা প্রেসক্লাবে হামলা চালিয়ে দখলের চেষ্টা চালায় একটি স্বার্থান্বেষী মহল। এ ঘটনায় আহত হন বরগুনা প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও এনটিভির স্টাফ রিপোর্টার সোহেল হাফিজ, যমুনা টেলিভিশনের রিপোর্টার ফেরদৌস খান ইমন এবং সময় টেলিভিশনের রিপোর্টার সাইফুল ইসলাম মিরাজসহ ৭ জন সংবাদকর্মী। পরে এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫০ জনকে অভিযুক্ত করে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করে বরগুনা প্রেসক্লাব।