লক্ষ্মীপুর পৌরসভার জন বসতিপূর্ণ এলাকা ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে থাকা পুকুরে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে সপ্তাহখানেক যাবৎ লক্ষ্মীপুর পৌর কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে স্কুল সহ আশেপাশে ছাড়াচ্ছে দুর্গন্ধ।এতে শ্বাসকষ্ট সহ নানান সমস্যার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীও এলাকাবাসী আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইটেরপুল এলাকার দক্ষিণ দারগাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও আশপাশের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সড়কে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এতে কিছু সময় যান চলাচল বন্ধ থাকে ওই সড়কে। পরে দুর্গন্ধে পাঠদান বন্ধ রেখে বাড়ি চলে যেতে বাধ্য হয় শিক্ষার্থীরা৷ পৌর কর্তৃপক্ষের এমন খামখেয়ালিপনায় বিদ্যালয়সহ আশপাশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। যদিও পাশেই পৌরসভার নির্ধারিত ডাম্পিং স্টেশন রয়েছে। সেখানে না ফেলে পুকুর ভরাটের উদ্দেশ্যে উন্মুক্ত স্থানে ময়লা ফেলছে পৌরসভার লোকজন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্দিষ্ট ডাম্পিং স্টেশনে ময়লা না ফেলে পৌর কর্তৃপক্ষ যত্রতত্র স্থানে আবর্জনা ফেলে পরিবেশ দূষণ করছে। পৌরসভার ইটের পুল এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল হাসান, মো. রনি, তুহিন হোসেন জানান, লক্ষ্মীপুর-রায়পুর মহাসড়কের ইটেরপুর টার্নিং পয়েন্টে সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি পুকুর রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে পৌর বাসিন্দাদের ব্যবহৃত ময়লা এনে ওই পুকুরে ফেলা হচ্ছে। আবর্জনার দুর্গন্ধে এলাকাবাসীর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। এতে রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তারা জানায়, পুকুরের অপর পাশে প্রাথমিক বিদ্যালয়। আবর্জনার দুর্গন্ধে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে থাকতে পারছে না। এতে বাধ্য হয়ে তারা পাঠদান বন্ধ রেখে সড়কে এসে আন্দোলন করেছে। স্থানীয় দিদারুল ইসলাম বলেন, ইটেরপুল এলাকাটি একটি জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এখানে বিদ্যালয়ের পাশাপাশি মানুষের ঘর-বাড়ি রয়েছে। দোকানপাট রয়েছে। ময়লার দুর্গন্ধে মানুষজন থাকতে পারছে না।
পুকুরের উত্তর পারে থাকা একটি বাড়ির বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাড়ির পাশেই ময়লা ফেলা হচ্ছে। পুকুর ভরাট করতে হলে বালু বা মাটি দিয়ে ভরাট করুক। কিন্তু ময়লা আবর্জনা দিয়ে ভরাট করতে হবে কেন? সামনে রমজান মাস আসছে। তখন বসবাস করা আরও কষ্ট হবে। পৌর কর্তৃপক্ষ যাতে পুকুরটি ময়লা দিয়ে ভরাট না করে। ময়লাগুলো অপসারণের দাবি জানান তিনি। সড়কের দক্ষিণ পাশে থাকা চা দোকানদার নুরুল আমিন বলেন, ময়লার দুর্গন্ধে কাস্টমাররা দোকানে আসতে পারে না। তাই দোকানের বেচাবিক্রিও কমে গেছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দারগাবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নেই তেমন।সবাই মাস্ক পড়ে বসে আছে । অনেকেই শ্বাসকষ্টে ভূগছে। শিক্ষার্থী না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক ঝর্ণা রায় বর্মন বলেন, শিক্ষার্থীরা ময়লার দুর্গন্ধে শ্রেণীকক্ষে থাকতে পারে না। সকালে সব শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে রাস্তায় গিয়ে ময়লা ফেলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলো। বিষয়টি আমি মোবাইল ফোনে মেয়র মহোদয়কে জানিয়েছি। তিনি বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন না করার অনুরোধ করেছেন। এছাড়া ময়লাগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।কিন্তু তীব্র গন্ধের কারনে ও ময়লা ফেলা অব্যাহত রাখার কারনে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসছে না। প্রধান শিক্ষক বলেন, বিদ্যালয়ে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তারা শ্রেণিকক্ষে থাকতে পারে না। তাই তারা নিজেরাই বিদ্যালয় থেকে চলে গেছে বুধবারও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কের বাঁকা অংশ সোজা করার জন্য পুকুরটি ভরাট করা প্রয়োজন। কিন্তু সেটি পৌরসভাকে ময়লা দিয়ে ভরাট করতে বলা হয়নি। প্রয়োজনে বালু বা মাটি দিয়ে ভরাট করা হবে। পৌরসভাকে পুকুর ভরাটের কোন দায়িত্বও দেয়া হয়নি। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হবে। পৌর মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভুঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে বিদ্যালয় চলাকালীন ওই স্থানে আপাতত ময়লা ফেলা হবে না। তিনি এর বাহিরে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য,লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভুঁইয়া মেয়র এর দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বিতর্কিত কর্মকান্ডে অতিষ্ট পৌরবাসী। সড়ক মেরামত না করা, পানির সমস্যা, বঙ্গবন্ধু চত্তরে ময়লার ভাগার করে পরিবেশন দূষণ, পুকুর ভরাট সহ নানান অভিযোগে প্রায়ই সমালোচিত হয়ে থাকেন।