শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একটি বিদ্যালয়ের বিশেষ ক্লাসের বেতন না দেয়ায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।  এই ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম গোলাম মোর্শেদ খান এর নিকট লিখিত অভিযোগ দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। (২৮ ফেব্রুয়ারি) বুধবার বেলা ১১ টার দিকে পৌর শহরের কমলপুর হাজী জহির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে এই ঘটনাটি ঘটেছে। 
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়,  এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন বিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস বন্ধ থাকায় দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের নিয়ে মাসিক বেতনে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। সেই ক্লাসের বেতন না দেয়ায় বুধবার সকালের দিকে দশম শ্রেণীর ২০-২৫ জন শিক্ষার্থীদের সাথে অসদাচরণ করে শ্রেণীকক্ষ থেকে বের করে দেয় শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ের শিক্ষক এনায়েত উল্লাহ, লোকমান হোসেন, আজিজুল হক নামে তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তারেক মিয়া বলেন, এসএসসি পরীক্ষার জন্য আমাদের কোন ক্লাস হচ্ছে না। তবে বিশেষ ক্লাসের নামে একটি ক্লাস চালু রয়েছে। আমরা সকল ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষ ক্লাস বাধ্যতামূলক করতে হয়। আমাদের ক্লাসের বেতন ধরা হয়েছে ৫শ টাকা। মাসিক পরিক্ষার ফি ১শ টাকা। মোট ৬শ টাকা আমাদের দিতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের ক্লাসে সকল শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছু শিক্ষার্থী রয়েছে অস্বচ্ছল পরিবারের। আমাদের অনেকের বাড়তি টাকা দিয়ে বিশেষ ক্লাস করার সামর্থ নেই। তাই টাকার জন্য আমরা বিশেষ ক্লাস ও পরীক্ষা অংশগ্রহন করতে পারি নাই সেই জন্যই ক্লাসে না গেলে ৫০ টাকা জরিমানা করা হয়।  জরিমানার টাকা ও বিশেষ ক্লাসের বেতন দেয়নি তাই আজ সকালে শিক্ষকরা অসাধাচরণ করে ক্লাস থেকে বের দেয়।
আরেক শিক্ষার্থী সুরভী আক্তার বলেন, বিশেষ ক্লাসের নামে ৫০০ টাকা বেতন দেয়া লাগে। আর যদি ক্লাস না করি তাহল ৫০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। টাকা দেয়নি বলে ক্লাস শিক্ষকরা লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বলেন। এছাড়া আমাদের কাছে টাকা না থাকলে প্রয়োজনে রক্ত বিক্রি করে টাকা দিতে বলেন। তাও যদি না পারো তাহলে তোমাদের মা-বাবাদের ভিক্ষা করে টাকা এনে দিতে বলেন শিক্ষকরা । এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, সকাল ১১ টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ক্লাস হয়। গত তিনদিন যাবত আমাদের ক্লাস নিচ্ছে না। আমরা যারা বেতনের টাকা দিতে না পারছি তিনদিনই ধরেই আমাদের ক্লাস থেকে বের করে দিচ্ছে।
এ বিষয়ে কমলপুর হাজী জহির উদ্দিন উচ্চ  বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লেফটেন্যান্ট মো. অহিদুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে আমার কাছে কেউ কোন কিছু জানাইনি। তবে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শুধুমাত্র দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ক্লাস নেয়া হচ্ছে । শিক্ষার্থীদের অভিযোগের জবাবে তিনি আরো বলেন, যদি কোন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সাথে বাজে ব্যবহার করে ক্লাস থেকে বের করে দেয় তার প্রমাণ পাওয়া গেলে অব্যশই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের জবাবে অভিযুক্ত শিক্ষক এনায়েত উল্লাহ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমরা তাদের সাথে কোন রকম খারাপ ব্যবহার করিনি। তারা আমাদের বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলছে।
উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার স্বপ্না বেগম বলেন, বিষয়টি জেনেছি। ইউএনও স্যার বিষয়টি অবগত হয়েছেন। আমরা খোঁজ নিয়ে দেখছি কি করা যায়। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম গোলাম মোর্শেদ খান মুঠোফোনে জানান, গতকাল সন্ধ্যায় বিদ্যালয়ের কয়েক জন শিক্ষার্থী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে কথা বলবেন বলে তিনি জানান।

Recommended For You