চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করায় আটক ১

খুলনায় চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ করায় ৬ বছর বয়সী মোঃ বাইজদি ইসলাম সাদ নামের এক শিশুকে আটক করেছে রেলওয়ে পুলিশ। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) খুলনা রেলওয়ে জেলা’র পুলিশ সুপারের পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক ১০ঃ৪৫ ঘটিকার সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী নকশী কাঁথা ট্রেন দৌলতপুর নয়াবাটি এলাকায় পৌঁছালে অজ্ঞাতনামা কে বা কাহারা পাথর মেরে একটি গ্লাস ভেঙ্গে ফেলে। উক্ত বিষয়ের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খুলনা রেলওয়ে জেলার পুলিশ সুপার মোঃ রবিউল হাসানের সার্বিক দিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেল মোঃ মজনুর রহমান, খুলনা রেলওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মোশাররফ হোসেন, দৌলতপুর রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির আইসি মোঃ শফিকুল ইসলাম ও সঙ্গী ফোর্সসহ এক সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে ট্রেনে পাথর নিক্ষেপকারীকে সনাক্ত ও আটক করা হয়। আটক  মোঃ বাইজিদ ইসলাম সাদ (৬) খালিশপুর থানার নয়াবাটি মোড় রেলওয়ে বস্তির মোঃ বাবুল হোসেনের ছেলে। পাথর নিক্ষেপ কারী শিশু হওয়ায় তার অভিভাবকের বিরুদ্ধে ১৮৬০ সালের রেলওয়ে আইনের ১৩০(১) ধারা মোতাবেক আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটায় সে বিষয়ে স্থানীয়ভাবে সকলকে বলা হয়। পাথর নিক্ষেপ করলে রেলওয়ে আইনের ১২৭, ১২৮, ১২৯ এবং ১৩০ ধারার শাস্তির বিধান রয়েছে। এক্ষেত্রে অপরাধীকে সনাক্ত করে মামলা রুজু করে আইনের আওতায় আনা হবে। সুতরাং সকলকে পাথর নিক্ষেপের মত ঘৃন্য কাজ হতে বিরত থাকার জন্য সচেতন হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন খুলনা রেলওয়ে পুলিশ মোঃ রবিউল হাসান।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, খুলনা রেলওয়ে পুলিশ কর্তৃক পাথর নিক্ষেপ প্রতিরোধ কার্যক্রম অব্যাহত আছে এবং তা অব্যাহত থাকবে। পাথর নিক্ষেপের মত ঘৃন্য কাজটি বন্ধের জন্য সবাইকে এগিয়ে এসে সচেতনতামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে পাথর নিক্ষেপ বন্ধে সহায়তা করুন এবং কেউ পাথর নিক্ষেপ করলে তাকে সনাক্ত/চিহিৃত করে আইনের আওতায় আনতে সহযোগিতা করুন ও ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বন্ধের ব্যবস্থা নিন এবং যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণ নিশ্চিত করুন। পাথর নিক্ষেপ প্রতিরোধে খুলনা রেলওয়ে পুলিশ কর্তৃক জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। চলন্ত ট্রেনে অসচেতনতার ফলে পাথর নিক্ষেপের ফলে অনেক সময় ট্রেন যাত্রী আহত হন এবং সরকারী সম্পত্তি ক্ষতি সাধিত হয়ে থাকে। অনেক সময় দেখা যায় কেউ মজার ছলে বা খেলার ছলে পাথর নিক্ষেপ করে থাকে। কিন্ত এতে অনেক সময় মারাত্বক দূর্ঘটনা সংঘটিত হতে পারে। একটি দূঘর্টনা, সারা জীবনের কান্না। এই দূর্ঘটনায় আক্রান্ত ব্যক্তি আমাদের যেকোন কারো পরিবারের সদস্য হতে পারে, হতে পারে কারো মা-বোন হতে পারে কারো বাবা-ভাই। এতে একটি পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে থাকে। সুতরাং পাথর নিক্ষেপ প্রতিরোধে হটস্পট স্থানগুলো চিহিৃত করে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সম্মানিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সম্মানিত স্কুলের শিক্ষক, সম্মানিত মসজিদের ইমামসহ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনসহ সম্মানিত জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে প্রতিদিন জনসচেতনতামূলক বিট পুলিশিং সভা করা হচ্ছে এবং তা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। ইতিমধ্যে খুলনা রেলওয়ে জেলার থানার আওতাধীন সকল রেলওয়ে স্টেশনে জনসচেতনতামুলক সভা করা হয়েছে। উক্ত সভাগুলোতে সম্মানিত অভিভাবকরা যেন তাদের সন্তানদের পাথর নিক্ষেপের কুফল সম্পর্কে বর্ণনা করেন, তার জন্য বলা হয়েছে। সম্মানিত স্কুলের শিক্ষকগন যাতে পাঠদানের সময় ছাত্রছাত্রীদের পাথর নিক্ষেপের কুফল সম্পর্কে বর্ণনা করেন, তার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। সম্মানিত মসজিদের ইমানগন জুমার নামাজের খুতবার আগে সম্মানিত মুসল্লিদের পাথর নিক্ষেপের কুফল সম্পর্কে অবহিত করেন, তার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। সর্বোপরি রেললাইনের পার্শ্বে বসবাসকারী জনসাধারণগন যাতে নিজেরা সচেতন হন এবং তাদের সন্তানদের সচেতন করেন তার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। পাথর নিক্ষেপ প্রতিরোধে খুলনা রেলওয়ে জেলা পুলিশের পক্ষ হতে লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে এবং মোটিভেশন করা হচ্ছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকবৃন্দদেরকে বিনীতভাবে অনুরোধ করে বলা হয়েছে, আপনারা যাতে নিয়মিতভাবে পাথর নিক্ষেপের কুফল সংক্রান্তে প্রচার করে খেলার ছলে বা মজার ছলে পাথর নিক্ষেপ হতে বিরত রাখার সহায়তা করুন। সকলেই নিজে নিজের অবস্থান থেকে সচেতন থেকে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালালে, গণমান্য ব্যক্তিবর্গ তাদের আশে পাশে সকলকে সচেতনতার উপদেশ দিলে, সম্মানিত শিক্ষকগণ পাঠদানে ছাত্র/ছাত্রীদের পাথর নিক্ষেপের কুফল সম্পর্কে বর্ণনা করলে, সম্মানিত ইমাম সাহেবরা জুমার নামাজে খুতবার আগে মুসল্লিদের পাথর নিক্ষেপের কুফল সম্পর্কে অবহিত করলে ক্রমান্বয়ে সকলেই সচেতন হবেন এবং পাথর নিক্ষেপের মত ঘৃন্য কাজ বন্ধ হবে। খুলনা রেলওয়ে জেলা পুলিশ পাথর নিক্ষেপ প্রতিরোধে জনসচেতনতামুলক কার্যক্রম যেমন চালু রেখেছে তেমনি পাথর নিক্ষেপকারীদের সনাক্তের কাজ করে চলছে এবং কেউ সচেতন না হলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। এক্ষেত্রে আমরা রেললাইন বরাবর বসবাসকারী সম্মানিত অভিভাবকবৃন্দ, সম্মানিত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ আমরা আপনাদের মাধ্যমে আহবান করছি তারা যেন সবাইকে সচেতন করার পাশাপাশি কেউ আইন অমান্য করে পাথর নিক্ষেপ করলে তাকে যেন আইনের আওতায় আনার জন্য সহযোগিতা করবেন। চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ একটি অপরাধ। এই আইনে (১)১৮৯০ সালের বাংলাদেশ রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারায় ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ এর জন্য যাবজ্জীবন জেল অথবা দশ বৎসর কারাদন্ডর বিধান রয়েছে (২) উদ্দেশ্যেমুলকভাবে পাথর নিক্ষেপে রেলযাত্রীর মৃত্যুর কারণ হলে প্রমাণিত হলে দন্ডবিধি ৩০২ ধারায় মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড তদুপরি জরিমানার বিধান রয়েছে (৩) ১৮৯০ সনের রেলওয়ে আইন অনুয়ায়ী অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানের অপরাধের ক্ষেত্রে অভিভাবকের শাস্তির বিধান রয়েছে।
শেয়ার করুন:

Recommended For You