বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। তাই জনগণের কষ্ট লাঘবে সরকার সবসময় সচেষ্ট মন্তব্য করে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নোত্তর পর্বে ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজমের লিখিত প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান সরকারপ্রধান। অধিবেশনে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সকল প্রকার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে আমরা ভোগ্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিকে অনেকাংশে সংযত করতে পেরেছি। তবে, বিশ্ববাজারের কয়েকটি পণ্য যেমন জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, গম, সারসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, ভোগ্যপণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের দেশে আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে। আসন্ন রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণসহ মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ সমূহ:
• মূল্যস্ফীতি কমাতে বিভিন্ন শুল্কছাড় দেওয়া হচ্ছে;
• অপরিশোধিত সয়াবিন, পরিশোধিত/অপরিশোধিত পাম তেল আমদানিতে আমদানি পর্যায়ে ১০% এবং উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আরোপিত সমুদয় ভ্যাট হতে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে;
• পবিত্র রমজানে খেজুরের চাহিদা বিবেচনায় খেজুর আমদানিতে শুল্কায়নের ক্ষেত্রে যৌক্তিক মূল্যকে ভিত্তি ধরে শুল্কায়ন করা এবং কাস্টমস শুল্ক ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (CD) ও RD) রহিত করার ৭ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে আরোপণীয় আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
• অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিবেচনায় পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্কহার পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে;
• চাল আমদানিতে আরোপণীয় সমুদয় আমদানি শুল্ক হইতে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে এবং রেগুলেটরি ডিউটি ২৫% এর পরিবর্তে ৫% নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকারপ্রধান বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে নীতি (রেপো) সুদহার দফায় দফায় বাড়িয়ে মে ২০২২ এর ৪.৭৫ শতাংশ হতে সর্বশেষ ৮.০০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। পাশাপাশি, রিভার্স রেপো রেট (এসডিএফ) বৃদ্ধি করে ৬.৫০ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে এবং ঋণের সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া হয়েছে। নীতি সুদহার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বৃদ্ধি করায় বাজারভিত্তিক গড় সুদ হারে দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে। আশা করা যায় যে, খুব শিগগিরই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। এছাড়া, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে ক্রলিং পেগ ভিত্তিক মুদ্রা বিনিময় নীতি গ্রহণ করা হচ্ছে। নির্ধারিত করিডোরভিত্তিক এ ব্যবস্থা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের অস্বাভাবিক উত্থান-পতন রোধ করবে বলে আশা করা যায়। ফলে এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হবে।
তিনি জানান, আগামী রোজায় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার অভিপ্রায়ে নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত যোগানের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। অন্যতম নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য হিসেবে ভারত সরকারের কাছে ১ লাখ মেট্রিক টন চিনি এবং ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ সরবরাহের জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর বাইরেও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দৈনিক ভিত্তিতে কৃষিপণ্যের বাজারদর প্রকাশ করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আসন্ন পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষ্যে নিম্ন আয়ের মানুষের নিরাপদ প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ ও দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে ঢাকা মহানগরীর ২৫টি স্পটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে দুধ, মাংস ও ডিম বিক্রির পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, পবিত্র রমজান উপলক্ষ্যে আমদানি সংশ্লিষ্ট শুল্ক স্টেশনসমূহ ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মসুর ডাল ও খেজুর দ্রুত খালাসকরণে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা এবং বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দপ্তর/সংস্থা এবং ব্যবসায়ী নেতাদের অংশগ্রহণে সভাসমূহে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা, অভ্যন্তরীণ চাহিদা নির্ণয়, স্থানীয় উৎপাদন, মজুদ পরিস্থিতি, আমদানির পরিমাণ ইত্যাদি ধারাবাহিকভাবে পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিম কর্তৃক ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার নিয়মিতভাবে পরিদর্শন করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর মূল্য, মজুদ ও সরবরাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। কোনরূপ অস্বাভাবিক অবস্থা/পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হলে সে সম্পর্কে তাৎক্ষণিকভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়ে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার জন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক ঢাকা মহানগরীসহ সারা দেশে সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার জন্য সারা দেশে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নেতৃত্বে জেলা ও উপজেলায় গঠিত জেলা-উপজেলা টাস্কফোর্স নিয়মিত সভা করে থাকে। ওই টাস্কফোর্স জেলা ও উপজেলা বাজারসমূহে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি নিরবচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে আমদানির এলসির সর্বনিম্ন মার্জিন গ্রহণসহ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলার জন্য এবং প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহ রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সব ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে।
এসব পদক্ষেপের ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী বিশেষ করে দরিদ্র পরিবার, বয়স্ক, বিধবা, স্বামী নিগৃহীতা মহিলাসহ নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রায় যেমন স্বস্তি আসবে, তেমনি পবিত্র রমজান মাসে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে থাকবে এবং বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দামে লাগাম টানা সম্ভব হবে বলে আশা করেন সরকার প্রধান।