
কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় সরকারি খাল থেকে অবৈধভাবে মাটি উত্তোলন করে বিক্রির মহোৎসব চলছে। অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় কালেমার পাড়া গ্রামের আবদুল আখের’র ছেলে রফিকুল ইসলাম ও ফরিদুল আলমের ছেলে মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে ওই খালের কয়েকটি অংশে বাঁধ দিয়ে এক্সাভেটরের সাহায্যে মাটি কেটে মোসাদ্দেক কোম্পানিকে প্রতি গাড়ি সাড়ে ৩শ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের চুল্লারপাড়া ও কালারমার পাড়া সংলগ্ন একটি সরকারি খাল আবহমান কাল ধরে প্রবাহিত হয়ে আসছে। খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার, প্রস্থ ২০ থেকে ৩০ ফুট। একসময় বর্ষার পানি এই খাল দিয়ে চার গ্রামের পানি প্রবাহিত হয়ে সাগরে গিয়ে মিশে যেত। খালের পানির ওপর নির্ভর করে প্রতিবছর চাষাবাদ হতো বিপুল পরিমাণ বোরো ধান আবাদ। বর্তমানে খালটি দুই পাশে দখল হয়ে যাওয়ায় ছোট হয়ে গেছে। আঁকাবাকা এই খালের সমাপ্তি হয়েছে কালারমার পাড়া সংলগ্ন বড় একটি কবরস্থান ঘেঁষে।
স্থানীয়রা বলছেন, খালের এই সমাপ্তি স্থলের জায়গা বেদখল করে মাটি বিক্রি করছে একটি চক্র। সেই চক্রে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের কথিত কিছু নেতা। যার ফলে গভীর খাদ তৈরি করে মাটি কখন করে বিক্রি করা হচ্ছে ওই স্থান থেকে। বর্ষাকালে গভীর খাদগুলো স্থানীয়দের জন্য মরণফাঁদে পরিণত হবে। স্থানীয়রা জানান, একাধিকবার বাধা দিলেও মাটি তোলা বন্ধ হয়নি। অপরিকল্পিতভাবে মাটি তোলার কারণে খালের তীরবর্তী ফসলি জমিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাঁরা উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এলাকাবাসী বলেন, খালের জায়গায় গভীর গর্ত খুঁড়ে মাটি কাটা হচ্ছে। এসব মাটি ফসলি জমির ওপর দিয়ে ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দ্বীপের বিভিন্ন প্রান্তে। মাটি কাটার বিষয়টি জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম জানান, জায়গাটা তাদের পূর্ব পুরুষের।তাদের কাছে আরএস,বিএস সব কাগজ পত্র আছে বলে দাবী করেন। নিজস্ব জায়গা থেকে মাটি কাটতে কারও অনুমতির লাগে না বলে তিনি জানান। সাংবাদিকদের আরএস খতিয়ান দেখান। কিন্তু বিএস খতিয়ানে জলাশয় উল্লেখ আছে বলে স্বীকার করেন তিনিসহ এলাকার আরও অনেকেই।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুতুবদিয়া উপজেলার সভাপতি নজরুল ইসলাম জানান, সরকারি খাল থেকে মাটি বিক্রির খবর পাওয়ার পর আমরা বাপার নেতৃবৃন্দ ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেছি। প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিষয়টি অবহিত করেছি। উত্তর ধূরুং ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হালিম সিকদার মাটি কাটার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, সরকারি জায়গা থেকে মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। আমার সামনে দিয়ে বড় লাল গাড়িতে করে এসব মাটি বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান তিনি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জর্জ মিত্র চাকমা জানান, মাটি কাটার বিষয়টি জানার পর অফিস থেকে লোক পাঠানো হয়েছে। সরকারি জায়গা থেকে মাটি উত্তোলন করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।