ফেনীর অমর একুশে বইমেলা দর্শনার্থী, বই প্রেমী ও বই ক্রেতাদের পদচারণায় রূপ নিয়েছে প্রাণের মেলায়। শহরের ট্রাংক রোডের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে আয়োজিত বইমেলা জমজমাট চলছে। মেলা আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে মেলার সময় আরো দুইদিন বাড়িয়ে আট দিন করা হয়েছে।
ফেনীবাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত বইমেলা দারুনভাবে জমে উঠেছে। শহীদ মিনারের চারপাশে মোট ১৬টি স্টলে বই বিকিকিনি চলছে। মাঝের ফাঁকা জায়গায়, গেইটে সামনের ফুটপাতে মঞ্চের দুইপাশ মিলিয়ে বইপ্রেমী নারী পুরুষের উপছেপড়া ভিড়। অমর একুশে মঞ্চে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৃত্যনাট্যের বাদ্যযন্ত্রের সুর মূর্ছনা ও নৃত্যের ঝংকারে বইমেলা হয়ে উঠে প্রাণবন্ত।
মেলায় প্রতিদিন উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। বিক্রয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন স্টল মালিকেরা। বিকেল থেকে চত্বরে দ্রুত ভিড় বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার আগেই মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর ভিড়ের তীব্রতা বেড়ে যায়। মেলায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করছেন বিভিন্ন বয়সী দর্শকরা। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়েও মেলায় আসছেন। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের প্রেরণা যোগাতে নিয়মিত মেলা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়ে ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী ও মেলা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহেরসহ অন্যান্যরা। মেলায় বিভিন্ন স্টলে গিয়ে দেখা যায়, পাঠকরা সবাই বেশ উৎসুক। কেউ বই কিনছেন, কেউবা বইয়ের পাতা উল্টে দেখছেন। আবার অনেকে বই কিনে প্রিয় মানুষদের উপহার দিচ্ছেন। বিভিন্ন জায়গায় আড্ডা জমতে দেখা যায়। অনেকেই বই উল্টেপাল্টে দেখছিলেন। সন্ধ্যা গড়ালে বেড়ে ওঠে বিক্রয় কর্মীদের ব্যস্ততা। সব মিলিয়ে অমর একুশে বইমেলার চিরচেনা রূপটা দেখা গেছে।
কবি ও লেখক নুরুল আমিন হৃদয় বলেন, দীর্ঘদিন পর ফেনীতে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, এতে আমরা আনন্দিত। এখানে ফেনী ছাড়াও আশ-পাশের বিভিন্ন জেলার লেখক-পাঠকের সম্মিলন ঘটছে। মেলাটি আগামীতে আরো বড় পরিসরে আয়োজন করা যেতে পারে। ব্যাপক প্রচারণা চালালে প্রত্যন্ত গ্রামের পাঠকরাও মেলায় আসবে। তাদের প্রিয় লেখকের বইগুলো সংগ্রহ করবে। লেখকদের মাঝে নতুন নতুন বই প্রকাশের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে।
মেলায় আগত লেখক ও সাংবাদিক তানভীর আলাদিন জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ফেনীতে আবার বইমেলা চালু হওয়ায় পাঠকরা খুবই উজ্জীবিত। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কৃষ্ণচূড়া স্টলের সভাপতি সুরঞ্জিত নাগ বলেন, মেলায় বইয়ের বেচা-বিক্রি বেশ ভালো হচ্ছে। ফেনীতে বই মেলা হচ্ছে এটাই আনন্দের। পাঠক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের কাছে এ মেলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পাঠক এখানে এসে বই দেখেন, বই ক্রয় করেন। এজন্য এ বই মেলা প্রতিবছর যেন আয়োজন করা হয়।
ঢাকা থেকে আসা সাহিত্যদেশ স্টলের মিল্লাত আল জিসাদ বলেন, ফেনীতে বই পড়ার প্রতি মানুষের আগ্রহ বেশি। ঢাকায় অনেকে শুধু ছবি তোলে। এখানে ছবি তোলার চেয়ে পাঠক ও বইয়ের ক্রেতা বেশি। এটা দেখে আমার ভালো লাগছে এবং বিক্রিও ভালো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ২২ ফেব্রুয়ারি ফেনী পৌরসভা আয়োজনে বই মেলা উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোছাম্মৎ শাহীনা আক্তার। ফেনী পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজীর সভাপতিত্বে ও সাংস্কৃতিক সংগঠক অ্যাডভোকেট রাশেদ মাজহারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, জেলা পুলিশ সুপার জাকির হাসান। মেলা চলবে আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ মেলা পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত। পাশাপাশি ফেনীর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রতিদিন চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।