আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ২০৪১ সালের মধ্যে সুখী—সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি রাজনৈতিক অঙ্গীকার হলেও এর সাথে রয়েছে তাঁর গভীর সম্পর্ক। কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল সুখী—সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। গত ১৫ বছরের উন্নয়নের গতি—প্রকৃতি, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি সবকিছু বিচার—বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে তাঁর সরকার সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের এই গতি—পথকে মসৃণ ও গতিশীল রাখতেই দেশের সকল শ্রেণি—পেশার মানুষ আবারও জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নিরঙ্কুশভাবে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে। জনগণের বিশ্বাস, একমাত্র তিনিই পারবেন উন্নত—সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে।
রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) পিরোজপুরে সাড়ে ৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত আট তলা বিশিষ্ট চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং—এ যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী। আনিসুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু এমন একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী বিচার বিভাগের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে বিচারপ্রার্থী জনগণ দ্রুত ন্যায়বিচার পাবেন। তিনি শুধু এই স্বপ্নই দেখেননি, বাংলাদেশকে স্বাধীন করার পর একটি আইনি কাঠামোও তৈরি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের নৃসংস হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক শাসকদের জাতাকলে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন আর প্রস্ফুটিত হতে পারেনি।
আইনমন্ত্রী বলেন, ২০০৭ সালের ১লা নভেম্বর উচ্চ আদালতের একটি রায় অনুযায়ী নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পুরোপুরি পৃথক হলেও তখন স্বাধীনভাবে চলার মতো বিচার বিভাগের বিশেষ করে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসির নিজস্ব কোন অবকাঠামো ছিল না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর এই সমস্যা দূরীকরণে বেশকিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, যার মধ্যে অন্যতম পদক্ষেপ ছিল জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টে্রসির স্থান সংকুলানের জন্য প্রথম পর্যায়ে ২ হাজার ২৬০ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৪১টি জেলা শহরে আধুনিক সুযোগ—সুবিধা সম্বলিত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ। অত্যন্ত আনন্দের বিষয়, এই প্রকল্পের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ৪১টি চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। অবশিষ্ট ২৩ জেলাতেও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যেই ভূমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ হয়েছে। এখন সেখানে ভবন নির্মাণের জন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণ কার্যক্রম চলছে। নতুন এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের সকল জেলার জুডিসিয়াল ম্যাজিস্টে্রসির অবকাঠমো সংকট সম্পূর্ণ দূর হবে।
মন্ত্রী বলেন, বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকারকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে তথ্য—প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিচার বিভাগের আধুনিকায়ন অপরিহার্য। এই বিশ্বাসকে ধারণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বিচার বিভাগের ডিজিটাইজেশনে আইনি পদক্ষেপসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এক্ষেত্রে আদালত কর্তৃক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০ প্রণয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ সপ্রীম কোর্ট ও অধস্তন আদালতে ভার্চুয়াল কোর্ট প্রবর্তন— বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা ডিজিটাইজেশনে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পিরোজপুর—১ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী শ.ম. রেজাউল করিম, পিরোজপুর—২ আসনের সংসদ সদস্য মো. মহিউদ্দীন মহারাজ, পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ, জেলা প্রশাসক, চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার সহ প্রমুখ বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহা।