মাটি খেকোদের তাণ্ডব, রক্ষা পাচ্ছে না রবিশস্যও

ফেনীতে মাটি খেকোদের তাণ্ডব থেকে রক্ষা করা যাচ্ছে না রবিশস্য। এক শ্রেণীর মাটিদস্যু অবৈধভাবে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করে দেওয়ায় কৃষক, স্থানীয় জন প্রতিনিধি ও ভুক্তভোগীদের মাঝে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। 
স্থানীয়দের অভিযোগ এ দুর্বৃত্তদের হাত থেকে সরকারি খাসজমি, ফসলি জমি, রবিশস্য ও হিন্দুদের শ্মশানের মাটি পর্যন্ত রক্ষা পাচ্ছে না। বারবার
উপজেলা প্রশাসনের অভিযান সত্ত্বেও তারা চোর  খেলায় মেতে উঠেছে বলেও অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্থরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ইতোপূর্বে উপজেলার মহুরী প্রকল্প ও চর খোন্দকার এলাকায় সরকার ঘোষিত অর্থনৈতিক অঞ্চল এলাকার সরকারি জমি থেকে প্রায় দুই কোটি টাকার মাটি বিক্রি করে দিয়েছিল এ মাটিদস্যুরা।
পরবর্তীতে সরকারি জমির মাটি বিক্রি ও ক্ষতি সাধনের অভিযোগে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অজিত দেবের নির্দেশে ওখানকার ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আবুল কালাম বাদি হয়ে তিন ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেছিলেন।অথচ দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো ওই মামলা আলোর মুখ না দেখায় আরও ব্যাপোরোয়া হয়ে ওঠে ওই মাটিখেকোরা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুম এলে জেলার প্রত্যেকটি উপজেলার মাটিখেকোদের তাণ্ডব বেড়ে যায়। সরকারদল সমর্থিত এক শ্রেণীর অর্থলোভী দুর্বৃত্ত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে প্রতিটি এলাকার কৃষক ও জমির মালিকদের অর্থের লোভ দেখিয়ে অথবা জোরপূর্বক ফসলি জমি, রবি শস্য খেত এবং রাতের আঁধারে সরকারি খাসজমির মাটি কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে।
এ নিয়ে জেলা ও উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে বারবার আলোচনা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হলেও অদৃশ্য কারণে জড়িতদের কিছুই করা যাচ্ছে না। এনিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা প্রশাসন ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের মাটি কাটা বন্ধ করতে কঠোর উদ্যোগ নিচ্ছেন বলে জনগণকে একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিলেও মাঠপর্যায়ে তার বাস্তবায়ন দৃশ্যমান না হওয়ায় জনমনে বিভ্রান্তি ও নানা ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে।
এছাড়া একই উপজেলার চরছান্দিয়া ইউনিয়নের স্লুইসগেট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাটিদস্যুরা সবুজ রবিশস্যের আবাদকৃত জমির ফসলসহ মাটি এবং বগাদানা ইউনিয়নের আওরালখিল গ্রামের হিন্দুদের শ্মশানের মাটি জোর করে কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে।
এ সব বিষয়ে ভুক্তভোগীরা থানা ও উপজেলা প্রশাসনের নিকট অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না বলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানায়। এদিকে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে বারবার অভিযান পরিচালনা করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করলেও মাটিখেকোদের কিছুতেই দমানো যাচ্ছে না। ফলে একদিকে প্রতিদিন জেলার সবকয়টি উপজেলায় আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে অন্যদিকে আবাদি ভূমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে।
সোনাগাজীর চরছান্দিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলন বলেন, এসব মাটি খেকোরা আমাদের রাস্তাঘাট ফসলি জমি সব শেষ করে দিচ্ছে। এজন্য আমি ইতোমধ্যে উপজেলা প্রশাসনকে এসব মাটিখেকোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছি।
সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও কামরুল হাসান জানান, স্থানীয় জনগণের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অভিযান পরিচালনা করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক অনেকের জরিমানা করেছি। এছাড়া অনেক মাটি কাটা যন্ত্র অকার্যকর করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অভিযান অব্যাহত আছে। কোনো অবস্থায় ফসলি জমির মাটি বিক্রি করতে দেওয়া হবে না।
শেয়ার করুন:

Recommended For You