২০১১ সালে প্রতিষ্ঠা হয়েও সংকটের শেষ নেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ক্লাসরুম থেকে শুরু করে শিক্ষক, আবাসন, এমনকি পরিবহন সংকটও আছে ববিতে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় এখনো পূর্ণাঙ্গতা পায়নি বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বৈশ্বিকভাবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাতের ন্যূনতম মানদণ্ড ধরা হয় ১:২০। অর্থাৎ প্রতি ২০ জন শিক্ষার্থীর জন্য অন্তত একজন শিক্ষক থাকবেন। সেখানে প্রায় নয় হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থীকে পাঠদান দিচ্ছেন মাত্র ১৬৫ জন শিক্ষক। যার অনুপাত দাড়ায় প্রতি শিক্ষকে প্রায় ৫৫ জন শিক্ষার্থী। সবচেয়ে করুণ অবস্থায় আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগটি, যেখানে ছয়টি ব্যাচের পাঠদান দিতে হচ্ছে মাত্র তিনজন শিক্ষককে। শিক্ষক সংকটে থাকায় ব্যাঘাত ঘটছে পাঠদান, সেশনজটে পড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে জানান অনেক শিক্ষার্থী।
তবে সংকটের শেষ নেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে, আছে ক্লাসরুমের সংকটও। ছয়টি অনুষদের আওতায় ২৫টি বিভাগ রয়েছে। অথচ বিভাগগুলোর জন্য ক্লাসরুম রয়েছে মাত্র ৩৬টি। ফলে প্রায়ই সব বিভাগের ব্যাচগুলোকে শ্রেণিকক্ষ ভাগাভাগি করতে হচ্ছে। এর মধ্যে সামাজিকবিজ্ঞান অনুষদের আওতাধীন অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, লোকপ্রশাসন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের জন্য একটি করে ক্লাসরুম বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে যাত্রা শুরু করা সমাজকর্ম বিভাগের কোনো ক্লাসরুম না থাকায় লাইব্রেরির ২য় তলায় ক্লাস রুমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কলা ও মানবিক অনুষদের অন্তর্ভুক্ত ইংরেজি ও ইতিহাস বিভাগের জন্য একটি করে ক্লাসরুম। উর্দ্ধতন-কর্মকর্তাদের এব্যাপারে বারবার জানানোর পরেও সমস্যার কোনো সমাধান হয় নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য (রুটিন দায়িত্ব) ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, শ্রেণিকক্ষ সংকট সমাধানে ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব সংকট কাটাতে কাজ করছে।
এছাড়াও আবাসন, পরিবহন সংকট তো আছেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৯ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর জন্যে রয়েছে মাত্র ৪ টি হল। যেখানে ছেলেদের জন্যে দুইটি ও মেয়েদের জন্যে দুইটি। থাকতে হয় বেড শেয়ার করে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, একটি বেডে দুইজন শিক্ষার্থীকে থাকতে হয়। পরীক্ষার সময় বেশ অসুবিধা হয় তাদের। হলে স্থান না হওয়ায় ক্যাম্পাস থেকে দূরে থাকতে হয়, এতে পড়তে হয় নানা ঝামেলায় বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। পরিবহনের সীমাবদ্ধতা থাকায় গাদাগাদি করে আসতে হয় শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস বরিশাল শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, চলাচল করে নথুল্লাবাদ, বরিশাল ক্লাব এবং নতুন বাজার রুটে। দূর যাত্রার জন্যে শিক্ষার্থীরা বাসের দাবি করলেও এখনো এ- ব্যাপারে কোনো কথা বলেন নি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন।
সংস্কৃতি চর্চার জন্যে ববিতে নেই কোনো অডিটোরিয়াম। এক যুগেও কেনো হলোনা অডিটোরিয়াম, এটি শিক্ষার্থীদের কাছে একটি বড় ক্ষোভ প্রকাশের জায়গা তৈরি হয়েছে। রুটিন দায়িত্ব উপাচার্য ড.মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেন, তাঁর আশা রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি মডেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরিত করার। সাংস্কৃতিক চর্চার কেন্দ্রবিন্দু একটি অডিটোরিয়াম তৈরি করারও ইচ্ছে আছে তাঁর। পূর্নাঙ্গ উপাচার্য হিসেবে যেই আসবে তাঁর কাছে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা থাকবে অডিটোরিয়াম করার।
এ বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয় যখন তৈরি হয় তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মাস্টার প্লান থাকে এবং এই মাস্টার প্লান অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়টিকে অনুমোদিত করা হয়েছে। এ সমস্ত বাজেটগুলো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় এই তিনটার সমন্বয়ে এসে থাকে। অর্থাৎ এককথায় সরকারের পক্ষ থেকেই বাজেট এসে থাকে। আমরা প্রতিবছরই বলে থাকি আমাদের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ক্লাস রুম সংকট, আমাদের অডিটোরিয়াম নেই। এমন নানা সমস্যার কথা আমরা বলে থাকি। কিন্তু আসলে সরকার তার নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা থেকে বাজেট প্রদান করে থাকে। আর সেই অনুযায়ী আমরা আমাদের কাজগুলো করে থাকি।
যথেষ্ট ড্রেনেজ ব্যাবস্থা ও ডাসবিন অভাব, ক্যাম্পাস অপরিষ্কার সহ শত সমস্যার মধ্যে দিয়েই চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। শিক্ষার্থীদের ধারনা এসব অভাব দূর করতে পারলেই ববিকে একটি মডেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরিত করা সম্ভব।