পতেঙ্গা সমুদ্র সৈতক এখন নানা অপকর্মের অভয়ারণ্য

অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি চট্টগ্রাম পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত। চট্টগ্রামের যে কয়টি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে তার মধ্যে শীর্ষে এই সমুদ্র। প্রতিবছর দেশে বিদেশের লক্ষ লক্ষ পর্যটক একটু  সমুদ্রের লোনা জনের মন মাতানো ঢেউ আর সমুদ্র পাড়ের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ছুটে আসেন পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। সৌন্দর্য উপভোগকে পুঁজি করে পতেঙ্গা সমুদ্র গড়ে উঠেছে স্থানীয় চাঁদাবাজদের দৌরত্ব। সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট সৈকত এলাকায় পাঁচ শতাধিক দোকান বসিয়ে পুরো এলাকা দখল করে নিয়েছে। এক পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকা থেকে লোকাল প্রশাসনের মাসিক মাশোয়ারা ২০ লাখ টাকার উপরে।

এসব অবৈধ দোকান ঘিরে চলছে মাদক ব্যবসা ও অসামাজিক কার্যকলাপ।  প্রতিনিয়ত চলে জাহাজ থেকে  চোরাই তেলের রমরমা কারবার। সেই সাথে শব্দ বিহীন স্পিড বোট ব্যবহার করে ঢুকে পড়ছে মাদকের বড় বড় চালান। সাথে সৈকতের ওয়াক ওয়েতে ঘোড়া, ঘোড়ার গাড়ি, বীচ বাইক, নাগর দোলা, সাম্পান ও চরকি বসিয়ে পর্যটদের চলা ফেরায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। আবার এইগুলো থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হচ্ছে চাঁদাবাজ, পতেঙ্গা থানার কতিপয় পুলিশ সদস্য ও  টুরিস্ট পুলিশের মাঝে এমন অভিযোগও রয়েছে।

সূত্র বলছে, মুছা, ওয়াহিদ চৌধুরী, নিজাম, হাসান, সোলাইমান বাবুলসহ আরো কয়েকজনের তত্ত্বাবধানে প্রতিদিন বিদেশি নামীদামী ব্রান্ডের হুইস্কি, ভিয়ারসহ মদের ৪ থেকে ৫ বক্স নামে সমুদ্র সৈকতের স্পিট বোর্ড ঘাঁট দিয়ে। একই সাথে ১৮ থেকে ২০ কার্টুন বিদেশি সিকেরেট আসে একই পথে। ইদানিং বড় বড় ইয়াবা কারবারিরা এই রুট ব্যবহার করছে। সম্প্রতি ৬ ফেব্রুযারী ২ লাখ পিস ইয়াবার একটি চালানও আটক করে rab সৈকত এলাকা থেকে। অভিযোগ আছে টহল পুলিশের নাকের ডগায় এই চালানটি পাচার হলেও নিরব ভূমিকা ছিল পতেঙ্গা থানা পুলিশের। এছাড়াও পতেঙ্গার ফুলছড়ি পাড়া এখন মাদক পাড়া নামে খুব সু-পরিচিত।

জানা গেছে, পতেঙ্গা সৈকতে গড়ে ওঠা পাঁচ শতাধিক স্থাপনার মধ্যে পতেঙ্গা সৈকত দোকান মালিক সমিতি’র নামে মুছা মামুন সিন্ডিকেটের ওয়াহিদুল আলম ওরফে ওয়াহিদ মাস্টারের তত্ত্বাবধানে চলে সাড়ে ৩ শতাধিক দোকান আর পতেঙ্গা সৈকত হকার্স, ক্যামেরাম্যান শ্রমজীবি সমবায় সমিতি’র নামে টাকা তোলেন নুর মোহাম্মদ ও শাহাব উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে নুর মোহাম্মদের ছেলে মাসুদ করিমের নেতৃত্বে চলে ১শত ৩০ টি দোকান। যেগুলো থেকে তার প্রতিদিন ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা উত্তোলন করে। এই টাকা দুগ্রুপের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দোকানিরা  জানান, এখানে দুটি সমিতির নাম ব্যবহার করা হলেও মূলত প্রশাসনসহ গুটিকয়েকজন মানুষের পকেটে যায় চাঁদাবাজির টাকা।
এছাড়াও অনুসন্ধানে জানা যায়, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এলাকায় গড়ে ওঠা চারটি আবাসিক হোটেল ব্রীজ পয়েন্ট, সী কুইন, পতেঙ্গা টুডে ও বরিশাল হোটেলে পতিতাবৃত্তি ও দেহ ব্যবসা ওপেন সিক্রেট। অভিযোগ আছে  থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে চলে আবাসিক হোটেলের আড়ালে এইসব ব্যবসা।

এদিকে ব্যাপক চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কথিত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ওয়হিদুল আলম ওরফে ওয়াহিদ মাস্টার। তিনি বলেন, আমি কোন চাঁদাবাজি করিনা। তবে নাগর দোলা থেকে দৈনিক ৪ হাজার নিয়ে থাকি । আর আমি এখানে বৈধ সমিতি চালাই। পতেঙ্গা সৈকত হকার্স, ক্যামেরাম্যান শ্রমজীবি সমবায় সমিতির নুর মোহাম্মদও চাঁদাবাজির কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি বা আমর সংগঠনের কেউ কোন ধরনের চাঁদাবাজি করি না। আমরা সমিতির নামে ২০ টাকা করে প্রতিদিন ১৩০ টি দোকান থেকে উত্তোলন করি। যা সৈকতের পরিচ্ছন্নতার কাজে ব্যয় করে থাকি।

পতেঙ্গা সৈকত হকার্স, ক্যামেরাম্যান শ্রমজীবি সমবায় সমিতি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ করিম বলেন, আমরা সৈকত এলাকায় কোন ধরনের চাঁদাবাজি করি না। আমরা প্রতিদিন সকালে আমাদের সমিতি থেকে টাকা দিয়ে সৈকত পরিচ্ছন্নতা করায় ও এখানকার দোকানিদের সকল সমস্যা এগিয়ে এসে তাদের পাশে দাঁড়াই।

পতেঙ্গা সৈকত ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) ইসরাফিল মজুমদার বলেন, আমি অল্প জনবল নিয়ে পর্যটকদের সেবা দিয়ে থাকি। আমি বা টুরিস্ট পুলিশ কোন রকম মাশোহারা নিয় না। আর মাশোহারা নেওয়ার প্রশ্ন  উঠে না। কেউ যদি বলে থাকে তাহলে তারা আমাদের কার্যকলাপে ঈর্শান্বিত হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তিনি বলেন‌ আমি ইতিপূর্বে এই চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে উর্ধ্বতন মহলেও অভিযোগ করি, এতে চাঁদাবাজরা ক্ষিপ্ত হয়ে টুরিস্ট পুলিশের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশও প্রেরণ করে।

তিনি আরো বলেন, এ সৈকতে অবৈধভাবে ২০০টির মতো দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকানের জন্য সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে।পতেঙ্গা সী বীচে বেড়াতে এসে পর্যটকদের বিভিন্ন হয়রানির মুখে পড়তে হয়। তাছাড়া অনেকে ছোট বাচ্ছাদের হারিয়ে ফেলে। এখানে হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে পর্যটকদের সেবায় ট্যুরিস্ট পুলিশ তাৎক্ষনিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে।  পুরো সী বীচ এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসছি। গতকাল থেকে সিসি ক্যামেরাও বসেছে। এছাড়াও বাচ্চাদের নিরাপদ দুগ্ধ সেবন করার জন্য বেবী ফিডিং বক্স চালু করেছি।
পতেঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ কবিরুল ইসলামের সাথে প্রতিবেদক মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, মশোয়ার বিষয়ে আমি অবগত নই। কোন ধরনের মাশোয়ারা আমাদের নামে উতোত্তিল হলে সঠিক তথ্য পেলে আমি তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থায়া নিবো, সেটি আমার পুলিশ সদস্য হলেও তাকে ছাড় দিব না।

Recommended For You