মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের আন্দোলন সংগ্রামে যে পরিবারের ভূমিকা অনন্য

সাতক্ষীরায় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের আন্দোলন সংগ্রামের প্রাণপুরুষ রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ। ১৯৬৭ সালের ২৪ নভেম্বর সাতক্ষীরা শহরের রাধানগর এলাকার এক প্রগতিশীল পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন তিনি। পিতা মরহুম অ্যাড. নেয়ামত উদ্দীন এবং মাতা জেলেখা বেগমের আট সন্তানের ৬ষ্ঠ সন্তান আবুল কালাম আজাদ মৌলবাদ সাম্প্রদায়িকতা স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের অগ্রসৈনিক।

আবুল কালাম আজাদ ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে উঠা গণজাগারণ মঞ্চের সাতক্ষীরা জেলা সভাপতি, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সাতক্ষীরার সংগঠক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি, সাতক্ষীরার দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও আশির দশকের মাঝামাঝি সময় হতে সাতক্ষীরার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

১৯৯৭ সালের ১২ সেপ্টেম্বর জামাত-শিবিরের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে নৃশংস হামলা চালিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা চালায়।যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজম বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়ে ১৯৯৪ সালের ২৯ মার্চ প্রথম প্রকাশ্য জনসভা করতে সাতক্ষীরায় এলে তাকে প্রতিহত করার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন আবুল কালাম আজাদ।

বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব, মানবাধিকার কর্মী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্ঠা অ্যাড. সুলতানা কামাল প্রতিষ্ঠিত মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন’র সাতক্ষীরার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতোপূর্বে তিনি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং আহবায়ক হিসেবে কমপক্ষে ৭বার নির্বাচিত হয়ে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এছাড়াও তিনি স্থানীয় দৈনিক পত্রদূত’র উপদেষ্টা সম্পাদক, দৈনিক সাতক্ষীরা চিত্রের নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক পূর্বাঞ্চল ও দৈনিক টেলিগ্রামের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি, দৈনিক কাফেলার স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে ১৯৯০ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

টিআইবি গঠিত সনাক-সাতক্ষীরার সভাপতি, কেন্দ্রীয় ভূমি কমিটির সভাপতি, বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সহ-সভাপতি, সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরি, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যুক্ত থেকে সামাজিক সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি।

সাতক্ষীরার ঐতিহাসিক ভূমিহীন আন্দোলনের অন্যতম প্রধান সংগঠক আবুল কালাম আজাদ দেবহাটা-কালিগঞ্জ ভূমিহীন উচ্ছেদ প্রতিরোধ সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন।এছাড়া ইসলামপুর চর আন্দোলনসহ সাতক্ষীরার খাস জমির লড়াই, সাতক্ষীরা জলাবদ্ধতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা স. ম আলাউদ্দীন হত্যার বিচার আন্দোলন, সন্ত্রাসী-চোরাকারবারী-গড়ফাদার বিরোধী আন্দোলন, দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলন, স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি মৌলবাদ জঙ্গিবাদ বিরোধী নানা আন্দোলনসহ বিভিন্ন নাগরিক ইস্যুতে তিনি অসামান্য অবদান রাখেন। ভূমিহীন ও স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের কারণে ১৯৮৮ সালের ৪ অক্টোবর থেকে প্রায় এক বছর তিনি কারাভোগ করেন।

এ্যাড.আবুল কালাম আজাদের বড় বোন নুরুন নাহার জুলু তৎকালীন পূর্ব পাকিন্তান ছাত্র ইউনিয়ন মতিয়া গ্রুপের সাতক্ষীরা মহাকুমা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তার সেজ বোন আকতারুন্নাহার ময়নাও ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা পাক হানাদার মুক্ত হয়। ঐদিন সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউসের পাক হানাদারদের ক্যাম্পে তার বোন নুরুন নাহার জুলুসহ অন্যান্যরা স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। মুক্তিযুদ্ধে সাতক্ষীরার যে কয়জন নারী ভূমিকা পালন করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি। মূলত বড় বোনের হাত ধরে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে শিশুকাল থেকেই এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ প্রগতিশীল রাজনীতির সংস্পর্শে আসেন। ১৯৮৪ সালে এসএসি পাশ করার পর খুলনায় বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হন। ১৯৮৫ সালে ঐ সংগঠনের বৃহত্তর খুলনা জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পাটির সদস্যপদ লাভ করেন।পরবর্তীতে বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সভাপতি এবং পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী ও যুব মৈত্রীর সাতক্ষীরা জেলা কমিটির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সময় তিনি পার্টিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯৭ সালের শুরুর দিকে তিনি ঘোষণা দিয়ে ওয়ার্কার্স পাটি থেকে পদত্যাগ করেন। তার পর থেকে সামাজিক সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড এবং নাগরিক অধিকার ও স্থানীয় বিভিন্ন সমস্যা ভিক্তিক আন্দোলন সংগ্রামের সাথে যুক্ত হন।

১৯৯৬ সালের ১৯ জুন দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা স. ম আলাউদ্দীন পত্রিকা অফিসে কর্মরত অবস্থায় ঘাতকের গুলিতে নিহত হওয়ার পর চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে গড়ে উঠা ব্যাপক গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দেন এবং তারই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে স. ম আলাউদ্দীন তনয়া ও বর্তমানে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক লায়লা পারভীন সেজুঁতির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। আবুল কালাম আজাদ এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের জনক।কন্যা নুশরিকা আজাদ অদ্রি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী এবং পুত্র আরিব আফনান সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।

শেয়ার করুন:

Recommended For You