ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিররতির আলোচনা স্থগিত করলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। একইসঙ্গে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে হামাসের দাবিগুলো ‘বিভ্রান্তিকর’ বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু শনিবার বলেছেন- মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অনুরোধে ইসরায়েল কায়রোতে যুদ্ধবিরতি আলোচনার জন্য আলোচকদের পাঠিয়েছিল। কিন্তু তারা আরও বিস্তৃত আলোচনায় করতে পারেনি। কারণ হামাসের দাবিগুলো বিভ্রান্তিকর।
নেতানিয়াহু আরও বলেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের সাথে একটি রাষ্ট্রীয় চুক্তির বিষয়ে ‘আন্তর্জাতিক হুকুম’ মেনে নেবে না। তার দাবি, শুধুমাত্র পূর্বশর্ত ছাড়াই সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে এমন লক্ষ্যে পৌঁছানো যেতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছাতে এবং হামাস ও অন্যান্য প্রতিরোধ গোষ্ঠীর হাতে আটক থাকা শতাধিক ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির জন্য মিশর ও কাতারের মধ্যস্থতায় হওয়া আলোচনায় এখনও কোনও ফলাফল আসেনি। গত মঙ্গলবার কায়রোতে এক দফা সিদ্ধান্তহীন আলোচনা শেষ হয়েছে।
ইসরায়েলি আলোচকরা কেন আরও আলোচনার জন্য কায়রোতে ফিরে আসেননি, শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন করা হলে নেতানিয়াহু বলেন, “হামাসের কাছে থেকে বিভ্রান্তিকর দাবি ছাড়া আমরা কিছুই পাইনি।” তিনি বলেন, “এই দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে যুদ্ধের অবসান এবং হামাসকে আগের মতোই ছেড়ে দেওয়া, ইসরায়েলি কারাগার থেকে ‘হাজার হাজার খুনিকে’ মুক্ত করা, এমনকি জেরুজালেমের বিষয়েও তাদের (হামাসের) দাবি রয়েছে।”
তিনি বলেন, কায়রোতে ইসরায়েলি প্রতিনিধিরা ‘বসেছিলেন এবং সবার কথা শুনেছিলেন। এবং এতে কোনও পরিবর্তন হয়নি। এক মিলিমিটার তো নয়ই- এক ন্যানোমিটারও পরিবর্তন হয়নি’। নেতানিয়াহু বলেন, আমরা পরিবর্তন না দেখা পর্যন্ত আবারও (আলোচনায়) ফিরে যাওয়ার কোনও কারণ নেই।
এদিকে হামাসের সাথে চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য নেতানিয়াহুর ওপর চাপ প্রয়োগের লক্ষ্যে হাজার হাজার ইসরায়েলি তেল আবিবের সামরিক সদর দফতরের বাইরে জড়ো হয়েছিল। তারা এসময় জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান জানিয়ে ছবি এবং নানা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করে। এর মধ্যে একটিতে লেখা ছিল, “সময় ফুরিয়ে আসছে!”
উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের অভ্যন্তরে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। এতে প্রায় এক হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হয়। আহত হয় দুই হাজারের বেশি। এছাড়া ইসরায়েলি ভূখণ্ড থেকে আড়াই শতাধিক মানুষকে জিম্মি করে গাজায় আনে হামাস যোদ্ধারা। এর মধ্যে শতাধিক জিম্মিকে সাময়কি যুদ্ধবিরতির আওতায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এখনও হামাসের হাতে আটক রয়েছে শতাধিক ইসরায়েলি।
এদিকে, ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে ওই উপত্যকার হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলের আক্রমণের কারণে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখানে অন্তত ২৮ হাজার ৭৭৫ জন নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। এছাড়া আহত হয়েছে আরও ৬৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি গাজাবাসী বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স