ধনু নদীর অব্যহত ভাঙন টেকানো না গেলে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ হাওরের প্রায়াগ বিলের নির্মাণাধীন স্বপ্নের ফসল রক্ষা বাঁধটি চরম ক্ষতির মুখে পড়বে। এতে বন্যার পানিতে তলিয়ে যেতে পারে উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের প্রায় এক হাজার একর কৃষি জমির ফসল। ফলে বহুল প্রত্যাশিত স্বপ্নের বাঁধটি নিয়ে চরম উৎকন্ঠায় রয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা।
হাওরের প্রবেশদ্বার বলে পরিচিত করিমগঞ্জ উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নে ধনু নদীর তীর ঘেঁষে প্রায় ২ কি.মি দীর্ঘ প্রায়াগ বিল ফসল রক্ষা বাঁধের অবস্থান। সরকারের হিসেব অনুযায়ী একহাজার একর কৃষি জমি রয়েছে বাঁধের ভেতরে। মৌসুমে প্রায় পৌনে চার হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হয় এখানে। আগাম বন্যার হাত থেকে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি রোধে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প- ২ এর অধীনে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বাঁধের মাটি ভরাটের কাজ সম্পন্ন হয়। গত বুরো মৌসুম থেকেই যার সুফল ভোগ করা শুরু করেছে আশেপাশের পাঁচটি গ্রামের কয়েক হাজার কৃষক পরিবার।
সম্প্রতি পরিদর্শনে গেলে দেখা যায়, একই প্রকল্পের অধীনে ২২-২৩ অর্থবছরে আরও ১ কোটি ৯৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৪০০ মিটার জুড়ে ব্লক বসানোর কাজ চলমান রয়েছে। ব্লক নির্মাণ ও স্থাপনে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইব্রাহীম কন্সট্রাকশনের সত্ত্বাধিকারী কাজী মনিরুল হাসান লিটু জানান, চুক্তি অনুযায়ী কাজের প্রায় ৯৫ শতাংশ তারা সম্পন্ন করতে পেরেছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বাকি কাজ শেষ করার বিষয়ে তারা আশাবাদী। বাঁধ নির্মাণে কাজের মান নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে স্থানীয় কৃষক মোঃ জাকির হোসেন বলেন, বাঁধটি আমাদের খুবই উপকারে এসেছে। কিন্তু দুই কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে মাত্র ৪০০ মিটার অংশে ব্লক বসিয়ে পুরো বাঁধ রক্ষা করা সম্ভব না।
এদিকে নির্মাণাধীন বাঁধের স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে সাগুলী প্রায়াগ বিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, ধনু নদীর ভাঙ্গনের ফলে তীব্র হুমকির মুখে পড়েছে প্রায়াগ বিল ফসল রক্ষা বাঁধ। গত একবছরের ব্যবধানে বাঁধের পূর্ব অংশে নদী ভাঙ্গন প্রায় ৫০ মিটারের মধ্যে চলে এসেছে। জরুরি ভিত্তিতে নদী ভাঙ্গন ও বাঁধ সুরক্ষায় ব্যবস্থা না নিলে পুরো উদ্যোগটিই ভেস্তে যাবে।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে করিমগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. বখতিয়ার হোসেন বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনা করে ৪০০ মিটার অংশে ব্লক দিয়ে প্রতিরক্ষামুলক কাজ বাস্তবায়িত হচ্ছে। আরো ব্লকের প্রয়োজন হলে, আমরা নতুন করে প্রস্তাব পাঠাবো। নদী ভাঙ্গনের বিষয়টি নিয়ে তিনি আরও জানান, নদী থেকে নিরাপদ দূরত্বে বাঁধ নির্মাণ করা হলেও ধনু নদীর ব্যাপক ভাঙ্গনের কারণে বাঁধটি এখন হুমকির মুখে। বিষয়টি আমি সরজমিনে পরিদর্শন করেছি। কৃষকদের শঙ্কা অমূলক নয়। প্রাথমিকভাবে নদীর ৩০০ মিটার অংশে ভাঙ্গন রোধে জরুরি উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে, আমার ধারনা। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
কিশোরগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো:আমিরুল ইসলাম কৃষকদের স্বার্থে ব্যাবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মতিউর রহমান বলেন, আপাতত ঐ এলাকায় তাদের কোনো প্রকল্প নেই। তবে ধনু নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে অনুমোদনের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হবে।