মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট জালাল চৌধুরীর মৃত্যু বার্ষিকী আজ

আজ ভাষা সৈনিক মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর মৃত্যু বার্ষিকী। তিনি চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও চান্দগাঁও আ/এ কল্যান সমিতির বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট জিয়াউদ্দিন আহমেদ এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের  নিজাম উদ্দীন নিজু’র শ্রদ্ধেয় পিতা।

অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরী ১৯২৬ সালে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানাধীন হুলাইন গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। স্কুল ও কলেজ জীবন হতেই তিনি ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত। মুসলিম ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পাকিস্তান আন্দোলনে অংশগ্রহন করেন এবং পাকিস্তান সৃষ্টির পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে ৫২’র ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহন করেন। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত হন এবং ১৯৬৪ সালে সম্মিলিত বিরোধী দলের প্রার্থী হিসাবে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্যের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থান করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের অনুপ্রাণিত ও সংগঠিত করে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেন এবং ট্রেনিং প্রাপ্তদের প্রয়োজনীয় আশ্রয়,  চিকিৎসা ও আর্থিক সহায়তা দানের মাধ্যমে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেন।

মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের কারণে ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে আলবদর বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে সৌভাগ্যক্রমে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসেন। বিজয়ের বেশ কিছু দিন আগে থেকেই অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে হাবিলাসদ্বীপ হাইস্কুলে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প করা হয়  যেখানে আশেপাশের পাকিস্তানি সৈন্যরা আত্মসমর্পণ করে এবং আশেপাশের রাজাকারদের উক্ত ক্যাম্পে ধরে আনা হয়।

চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতিতে পরপর দু’বার সাধারণ সম্পাদক ও একবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।  একজন বিজ্ঞ, দক্ষ ও মেধাবী আইনজীবী হওয়া সত্ত্বেও তিনি আইন পেশাকে নিছক ব্যবসা হিসাবে না নিয়ে একটা সেবামূলক পেশা হিসাবে গ্রহণ করে দরিদ্র ও অসহায়দের বিনামূল্যে কিংবা নামমাত্র ফিতে আইনি সহায়তা প্রদান করেন। তাছাড়া তিনি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যেমন: চট্টগ্রাম রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির সভাপতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ওয়াসা, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স, সোনালী ব্যাংক, বাংলাদেশ রেলওয়ে, টি এন্ড টি বোর্ড, ফায়ার সার্ভিস ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আইন উপদেষ্টা হিসাবে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি তাঁর নিজ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসাবে সততার সহিত দ্বায়িত্ব পালন করেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় পাঁচরিয়া দীঘির পাড়ে মেটারনিটি হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি বিভিন্ন শিক্ষা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। তাঁরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাবিলাসদ্বীপ উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘ ত্রিশ বছর কার্যনির্বাহী কমিটিতে সংশ্লিষ্ট থেকে  একটানা ১০ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং হুলাইন সালেহ নুর কলেজের গোড়াপত্তনে উনার বিরাট ভূমিকা ছিল এবং উনি হুলাইন সালেহ নুর কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও চান্দগাঁও আ/এ কল্যাণ সমিতির সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তৎকালীন প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান তাঁকে ১৯৭৭ সালে ঢাকায় সেনা কুঞ্জে দু-দুবার আমন্ত্রণ জানিয়ে জিয়ার উপদেষ্টা নিয়োগের প্রস্তাব করলে তিনি সম্মানের সহিত সরাসরি উক্ত প্রস্তাবে অসম্মতি জানান। ১৯৮৮ সালে ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লালদিঘীর ময়দানে সমাবেশ স্থলে গনহত্যা শুরু হলে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার জীবন রক্ষার জন্য আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসাবে সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত চান্দগাঁও হাজেরা-তজু ডিগ্রী কলেজের প্রথম পরিচালনা পরিষদ এর সভাপতি ছিলেন।

কর্মজীবনে, রাজনীতিতে ও ব্যাক্তিজীবনে অত্যন্ত সাহসী, সৎ, স্বচ্ছ ও বিনয়ী এডভোকেট জালাল উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর আজ ১৮ তম মৃত্যু বার্ষিকী। আল্লাহ কাছে প্রার্থনা করি আল্লাহ যেন উনাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। আজকের এই দিনে আমাদের গ্রামের এই গর্বিত সন্তান ভাষা সৈনিক বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম এডভোকেট জালাল উদ্দীন আহমেদ চৌধুরীর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

Recommended For You