কক্সবাজারের উনচিপ্রাং সীমান্তে নাফ নদীর এপারে রমজান আলীর (৪৫) ৬০ একর চিংড়ি ঘের রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চিংড়ি ঘেরে চাষের সাথে জড়িত এই চাষি। কিন্তু হঠাৎ করে নতুন আতঙ্ক ভর করেছে তাঁর। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে গতকাল শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারী) ভোর থেকে ৪ ঘন্টা বৃষ্টির মতো গোলাগুলি হয়েছে উনচিপ্রাং সীমান্তে। এছাড়া সারাদিন থেমে থেমে গোলাগুলি হয়েছে।
রমজান বলেন, আমার নাফ নদীর এপারে ৬০ একর চিংড়ি ঘের আছে। আমি বর্গা নিয়ে চাষ করছি। বার্ষিক বর্গা দিতে হয় ৯ লক্ষ টাকা। চাষের সাথে জড়িত ২০ জন শ্রমিক। ওপার থেকে মুহুর্মুহু গুলির আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। গতরাত থেকে মাছ তুলতে পারিনি, খাবারও দিতে পারিনি। আমার কর্মচারীরাও আতঙ্কিত, আমরাও আতঙ্কিত। এরকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে চরম লোকসান গুণতে হবে।
সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারে দেশটির সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বিদ্রোহীদের মধ্যে প্রচণ্ড গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় এপারে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের বাসিন্দারা রয়েছেন আতঙ্কে। দিন রাত থেমে থেমে গুলির শব্দে কেঁপে উঠছে সীমান্তের গ্রাম। এমন পরিস্থিতিতে চিংড়ি ঘেরে যেতে না পারায় আয় উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে হওয়ার পথে চাষিদের। সময় মতো ঘেরে মাছের পরিচর্যা ও মাছ তুলতে না পারলে বড় ধরনের লোকসানের পথে চাষিরা। এতে স্থবির হয়ে পড়ার পথে উখিয়া-টেকনাফ চিংড়ি চাষিদের জীবনযাত্রা, অর্থনীতির চাকা।
শনিবার (১০ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত টেকনাফ অংশে মিয়ানমারের বিস্ফোরণের শব্দ আসছে। টেকনাফ উনছিপ্রাং এলাকার চিংড়ি চাষি জুনায়েদ বলেন, গতবছর বন্যা ও সীমান্তের উত্তেজনার কারণে ঘের থেকে তেমন মাছ তুলতে পারিনি। যার কারণে বড় ধরনের লোকসান হয়েছে। এবছর ৫লক্ষ টাকার বাগদা চিংড়ি মাছের পোনা দিয়েছি। মাছও বেশ বড় হয়েছে। কিন্তু সীমান্তে এই বছরও উত্তেজনার কারণে ঘেরে যেতে পারছি না। এতে বড় ধরনের লোকসানের ঝুঁকি বাড়ছে। কিছু করার নেই। যে হারে মায়ানমার থেকে ছোড়া গুলি ও মর্টার শেল বিস্ফোরণ হচ্ছে। এতে আমাদের জীবন ঝুঁকিতে।
ঝিমংখালীর চিংড়ি চাষি আকতার আহমদ বলেন, কয়েকদিন ধরে মায়ানমারে ভিতরে যুদ্ধ চলছে। এতে আমাদের সাধারণ মানুষকে সীমান্তের কাছাকাছি চিংড়ি চাষিদের ঘেরে যেতে দিচ্ছে না বিজিবি। আমরা ব্যাংক থেকে অনেক টাকা লোন নিয়ে এসব চিংড়ি চাষ করছি। সময়মত মাছ না ধরলে মাছ মারা যাবে। এভাবেই চলতে থাকলে মাছ তো দূরের কথা কিছু পাবো না। আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো।
টেকনাফ উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, টেকনাফের হোয়াইক্যং এবং হ্নীলা ইউনিয়নের বেড়িবাঁধের আশপাশে ২ হাজার ৪০০ হেক্টর জায়গা জুড়ে ৪০০ চিংড়ি ঘের রয়েছে। যেখানে ৮ শতাধিক চাষি জড়িত। যদি মিয়ানমারে যুদ্ধ বিগ্রহ শুরু হওয়ার আশঙ্কা থাকে তাহলে খামারিরা খাবার দিতে পারবে না, মাছ তুলতে পারবে না। এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
উখিয়া উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা সৌরভ মাহমুদ বলেন, উখিয়ায় নাফ নদীর এপারে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ১২১ টি মৎস্য ঘের রয়েছে। তবে তারা সবসময় মাছ চাষ করে না। সেখানে গোলাগুলি হচ্ছে তাই শুনেছি তারা আতঙ্কে আছে। কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, আমি নিজে নাফ নদীর এপারে মৎস্য ঘেরগুলো পরিদর্শন করেছি। চাষিদের সাথে কথা বলেছি। আমার মনে হয়না এপারে তেমন কোন প্রভাব পড়বে।