বেশ বড় মাত্রায় কাটছাঁট হচ্ছে বাজেটে!

এবার রাজস্ব আয় কম তবে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ও মূল্যস্ফীতির হার বাড়তি। এই অবস্থায় মূলত অর্থায়ন নিশ্চিত করতে না পারার কারণেই ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চলতি অর্থবছরে আর্থিক চাপ থাকবে, তা আগেই ধারণা করা হয়েছিল। বৈশ্বিক এবং নির্বাচন কেন্দ্রিক নানা কারণে অর্থনীতি সংকুচিত হবে বলে আভাস দিয়ে আসছিলেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের আর্থিক খাতে সৃষ্ট টানাপড়েনের কারণে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এই বাস্তবতায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে বেশ বড় মাত্রায় কাটছাঁট করা হচ্ছে। এই পরিমাণ হতে পারে ৬০ হাজার কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। ছয় মাসে রাজস্ব ঘাটতি ২৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। একই সঙ্গে বিদেশি সহায়তাও কমে আসছে। এসব কারণে বাজেট বাস্তবায়নও কম হচ্ছে। বাজেটে সরকারি-বেসরকারি প্রকল্প (পিপিপি), ব্যাংক পুনর্ভরনখাতে অর্থ বরাদ্দ রয়েছে। তাই এই খাতে আর অর্থ ব্যয় করতে হবে না। একই সঙ্গে সরকার যে কৃচ্ছতা নীতি অবলম্বন করছে, তার ফলেও বছর শেষে সাশ্রয় হবে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। ফলে বাজেট কাটছাঁট করলেও চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার কমবে মূল বাজেটের চেয়ে সাত থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ। আগামী মার্চ মাসে বাজেট বাস্তবায়ন সম্পর্কিত সম্পদ কমিটির সভায় বাজেট সংশোধনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।

সূত্র জানায়, চলতি বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এই টার্গেট এখন কমিয়ে দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হচ্ছে। সংশোধিত বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ প্রাক্কলন করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু বছর শেষে এটি ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলে মনে করছে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, শেষ পর্যন্ত এটি সাত শতাংশের উপরেই থাকবে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল সাত দশমিক ৫ শতাংশ। এখন এই জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় এক শতাংশ হ্রাস করে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। শুধু যে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমিয়ে আনা হয়েছে তাই নয়, একই সঙ্গে মূল বাজেটের আকারও কাটছাঁট করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী না হওয়া এবং বিদেশি ঋণ ও অনুদান কম আসায় ব্যয় কমিয়ে সাত লাখ দুই হাজার টাকা করা হবে। আগামী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট প্রাথমিকভাবে প্রাক্কলন করা হয়েছে আট লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ১৩.৩৮ শতাংশ বেশি।

একই সঙ্গে অর্থনৈতিক মন্দাভাব শিগগিরই কাটছে না, এমন পূর্বাভাস থেকেই আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও সংকোচনমূলক বাজেট প্রণয়নের পথে হাঁটছে সরকার।এদিকে চলমান ডলার সংকট কাটিয়ে উঠতে অর্থনীতিবিদরা মুদ্রা বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিলেও এখনই তা কার্যকর করতে পারছে না সরকার। মুদ্রা বিনিময় হার ক্রলিং পেগ পদ্ধতি হবে এমন ঘোষণা রয়েছে।অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অংশে কমানো হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা এবং পরিচালন ব্যয় অংশে ৩২ হাজার কোটি টাকা কমবে। চলতি বাজেটে এডিপির আকার নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এই টার্গেট সংশোধিত বাজেটে কমিয়ে দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা করা হতে পারে। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও বাস্তবতায় এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে সরকার বাজেট কাটছাঁট করছে বলে জানান অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

Recommended For You