প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, দেশে গোল্ড রিফাইনারি স্থাপন করার জন্য বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে অভিনন্দন। গোল্ড রিফাইনারি স্থাপনের ফলে সোনা রপ্তানির সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে রপ্তানি শুরু করার আগে একটি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও একটি ডিজাইন ইনস্টিটিউট স্থাপন করতে হবে।
রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার নবরাত্রি হলে গতকাল বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) আয়োজিত জুয়েলারি শিল্প বিকাশে অর্থায়নের চ্যালেঞ্জ ও করণীয় শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. বিরূপাক্ষ পাল। বক্তৃতা করেন বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী, খ্যাতনামা ব্যাংকার মোহাম্মদ নুরুল আমিন, মোহাম্মদ শামস-উল-ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. তাবাসসুম জামান, বাজুসের সাবেক সভাপতি কাজী সিরাজুল ইসলাম, ডা. দিলীপ রায়, সাবেক সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন, বাজুসের ভাইস প্রেসিডেন্ট গুলজার আহমেদ, সমিত ঘোষ অপু, আইডিএলসি ফাইন্যান্সের হেড অব করপোরেট আতাউর রহমান প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন বাজুসের সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায়। উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক আহমেদ ইব্রাহিম সোবহান, কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাজুসের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিজনেস এডিটর রুহুল আমিন রাসেল। সভাপতির বক্তব্যে বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা আমার প্রিয় চাচা সালমান এফ রহমান বলেছেন, এখন জুয়েলারি সেক্টরের উন্নয়ন হবে। আমরা অনেকবার অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু চাচা আমাকে কথা দিয়েছেন- জুয়েলারি সেক্টরের যা যা নীতি সংস্কার দরকার, ভ্যাট, ট্যাক্সসহ যত ধরনের সমস্যা আছে, সব সমাধান করে দেবেন। উপদেষ্টা আরও একটি বিষয়ে বলেছেন, উনার সঙ্গে আমি একমত। অভ্যন্তরীণ বাজার এবং রপ্তানির নীতিমালা কিন্তু এক না। এত দিন আমরা এই বিষয়টি বিবেচনায় নিইনি। এখন আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করব। তার জন্য আমাদের অভিজ্ঞতা দরকার। উপদেষ্টার মূল্যবান মতামত আমরা মাথায় রাখব। আমাদের যেসব প্রস্তাব আছে, আপনি দেখবেন। আমাদের পাশর্^বর্তী দেশগুলো কীভাবে এগিয়ে গেছে, আমরা সেই আঙ্গিকেই প্রস্তাবগুলো দেব। আমরা যেন কোনোভাবে পিছিয়ে না থাকি। আমরা নাম দিয়েছি সোনার বাংলাদেশ। সোনার বাংলাদেশ গড়ার জন্য আপনাদের যদি ঠিকমতো পেট্রোনাইস না হয়, নামটা নামই রয়ে যাবে কোনো কাজ হবে না।
সালমান এফ রহমান বলেন, সোনা রপ্তানিতে কী কী নীতিসহায়তা দরকার, আর অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য কী কী নীতিসহায়তা দরকার- এগুলো আগে ঠিক করতে হবে। আমাদের স্থানীয় বাজার শক্তিশালী করার পরই রপ্তানির পরিকল্পনা করতে হবে। রপ্তানি করার জন্য প্রশিক্ষণ লাগবে। দক্ষ জনবল দরকার। দক্ষ জনবল তৈরি করতে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তুলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংক ঋণ পাওয়ার জন্য আপনাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলে করতে হবে। তাহলে ব্যাংকগুলো সহজেই আপনাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাবে। যদিও বর্তমানে এসএমই ঋণ বিতরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তফসিলি ব্যাংকগুলোকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা সহজেই এসএমই ঋণ পাচ্ছেন। আপনাদের কাছে যদি ইনফরমাল গোল্ড থাকে, সেটা ফরমাল করে নিন। সেটা কীভাবে করবেন আপনারা পরামর্শ দেবেন। আমি সব বিষয়ে সহায়তা করব। আমার খুবই ভালো লাগছে জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা একটি ট্রেড বডি হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। আজকে একটি ফেয়ার আয়োজন করতে পেরেছেন। এটাই ট্রেড বডির কাজ। গোল্ড নিয়ে আমাদের সার্বিক চিন্তা করতে হবে। এ জন্য বাজুস থেকে একটি সেল গঠন করেন।
বেঙ্গল ব্যাংকের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন, জুয়েলারি শিল্পের উন্নয়নে অর্থ, বাণিজ্য, শিল্প মন্ত্রণালয়, এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সমন্বয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করতে হবে। যাতে কেউ কারও ওপর দায় চাপিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আটকে না থাকে। কাউকে বাদ দিয়ে নীতিমালা করলে তারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে চান না।
চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জের সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন, জুয়েলারি শিল্পের উন্নয়নে আমরা একসঙ্গে কাজ করব। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিজাম চৌধুরী বলেন, সোনার ব্যবসা অথেনটিক না হওয়ার কারণে ব্যাংক ঋণ পায় না। একটি ইনভেন্টরি করে সব ইনফরমাল সোনা ফরমাল করে ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেন শুরু করলেই ঋণ পাওয়া সহজ হবে। সমাধান পাওয়ার জন্য নীতিমালা সংশোধন করতে হবে।
সাবেক ব্যাংকার মোহাম্মদ শামস উল ইসলাম বলেন, তৈরি পোশাকের মতো ব্যাক টু ব্যাক এলসি সুবিধা দিতে হবে সোনা রপ্তানির জন্য। সাবেক ব্যাংকার মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের পরিচয় সংকট দূর করতে হবে। তাহলে ঋণ পাওয়া সহজ হবে। গোল্ডকে মেগা প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. তাবাসসুম জামান বলেন, ঋণ পাওয়ার বিষয়টি উদ্যোক্তাদের অবগত হওয়া দরকার। গোল্ড ব্যাংক করা গেলেও মূলধন পাওয়া সহজ হবে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের। আমদানি সহজ করে ভ্যালু অ্যাডিশন করে রপ্তানি করা গেলেও ঋণ পাওয়া যাবে।
এদিকে ‘অর্থনীতিতে জুয়েলারি শিল্পের অবদান ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এম এ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, স্কুল অব ইকোনমিকসের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। আরও বক্তব্য দেন বাজুসের সহসভাপতি গুলজার আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক বাদল চন্দ্র রায়, অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন, বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের (বেজা) নির্বাহী পরিচালক সালেহ আহমদ, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরী, অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম, ইনস্টিটিউট ফর ইনক্লুসিভ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী, ট্যারিফ কমিশনের উপপ্রধান মো. মাহামুদুল হাসান, বাজুস সদস্য মো. আবদুস সালাম। বাজুসের ভাইস প্রেসিডেন্ট গুলজার আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সোনা চোরাচালান বন্ধে করণীয় শীর্ষক সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) উপপ্রধান কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম, বাজুসের সহ-সভাপতি মো. রিপনুল হাসান, কার্যনির্বাহী সদস্য মো. আলী হোসেন, মো. দিদার আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফআইইউর অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ মহসিন হোছাইনী।