লক্ষ্মীপুরের শিক্ষার্থীদের ভিসি হওয়ার স্বপ্ন বুনতে হবে : ড.মাকসুদ কামাল

“স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত রাজনীতি ও ধূমপানমুক্ত” শ্লোগানকে উপজীব্য করে জাতীয় মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার লক্ষ্যে ২০১১ সালে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায়  ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে  প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল এন্ড কলেজ।  

শনিবার (৩রা ফেব্রুয়ারি) একযুগ পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রতিষ্ঠানটির এক স্টুডেন্টস ফোরাম। এতে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ও শিক্ষক মন্ডলী অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন  ঢাবি ভিসি ড.মাকসুদ কামাল, সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যাক্ষ নুরুল আমিন। এ সয়ম বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদার , রায়পুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমা বিনতে আমিন, পৌর মেয়র গিয়াসউদ্দীন রুবেল ভাট ,সাবেক অধ্যাক্ষ মাইন উদ্দিন পাঠান, নিশাত বড়ুয়া ,ড.ফেরদৌস প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ড.মাকসুদ কামাল বলেন শিক্ষার্থীদের ভিসি হওয়ার স্বপ্ন বুনতে অণুপ্রেরণামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভালো মানুষ হয়ে দেশ গড়ার কাজে লেগে যেতে অনুরোধ করেন।

প্রতিষ্ঠার শুরুতেই রায়পুর উপজেলার পশ্চিম-উত্তর রাখালিয়া ও চরমোহনা গ্রামে দীর্ঘদিন কোন হাইস্কুল ও কলেজ ছিল না। ১৯৭৯ সালে ও ১৯৯৫ সালে দু’দুবার চরমোহনা হাই স্কুল নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে যোগ্য নেতৃত্বের অভাবে স্কুলটি বেশিদূর অগ্রসর হতে পারেনি। ২০১১ সালের প্রথম দিকে এ এলাকার জনগণ এক সভা করে পুনরায় আরেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ঢাকা কমার্স কলেজের উদ্যোক্তা, প্রতিষ্ঠানা ও সাবেক অধ্যক্ষ এবং Bangladesh University of Business and Technology (BUBT) এর উদ্যোক্তা ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত প্রফেসর কাজী মোঃ নূরুল ইসলাম ফারুকীকে অনুরোধ করেন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির নাম প্রস্তাব করেন প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল এন্ড কলেজ।

তিনি জনসভাকে আশ্বস্ত করেন যে, আপনাদের সহযোগিতা পেলে এলাকায় একটি মানসনম্পন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি ও অর্থের যোগান দেয়া হবে। এ লক্ষ্যে প্রফেসর কাজী ফারুকী কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হয়। উক্ত সভায় প্রয়েসর কাজী ফারুকীকে আহবায়ক করে ৯ সদস্যের একটি সাংগঠনিক ও বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়। অতঃপর স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১ বৈশাখ ১৪১৮/ ১৪ এপ্রিল ২০১১ তারিখে প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল এন্ড কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু হয়।

প্রফেসর কাজী ফারুকী নিজের ও পরিবারের সঞ্চিত অর্থ, ৬০ লক্ষ টাকা ব্যাংক ঋণ এবং ঢাকার ধানমন্ডিতে অবস্থিত একটি ফ্ল্যাট বিক্রয়লব্ধ অর্থব্যয়ে ‘প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কু এন্ড কলেজ’র ৬ তলাবিশিষ্ট ভবন নির্মান করেন। সরকারি বিধি মোতাবেক স্কুল ও কলেজের জন্য ২ একর জমি প্রফেসর কাজী ফারুকী দান করেন। তাছাড়া স্কুল ও কলেজের নাম প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকীর নামে হওয়ার কারণে সরকারি নীতি অনুযায়ী স্কুলের জন্য ১০ লক্ষ টাকা এবং কলেজের জন্য ১৫ লক্ষ টাকার FDR করতে হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কুমিল্লা বরাবর প্রতিষ্ঠানের পাঠদানের অনুমতির জন্য আবেদন করলে ১৫ জানুয়ারি’১২ তারিখে কলেজের পাঠদানের অনুমতি প্রদান করে। ২০১৫ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে স্কুল ও কলেজকে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। শান্তি-শৃঙ্খলা, পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা, অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা পদ্ধতি এবং শিক্ষা সহায়ক কার্যক্রমে এ কলেজের স্বাতন্ত্র ও সাফল্য আজ সর্ব মহলে প্রশংসিত। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংরাদেশ সরকারের বাস্তবমূখী শিক্ষার পদক্ষেপের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল এন্ড কলেজ।

কলেজের প্রিন্সিপাল নুরুল আমিন বলেন, শিক্ষঙ্গণের তমসাচ্ছন্ন চাদর ভেদ করে আলোর এই সূর্য এনেছেন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ, শিক্ষানুরাগী ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পথিকৃৎ, ঢাকা কমার্স কলেজের উদ্যোক্তা, প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক অধ্যক্ষ এবং Bangladesh University of Business and Technology (BUBT) এর উদ্যোক্তা ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত প্রফেসর কাজী মো. নুরুল ইসলাম ফারুকী। তাঁর নিবিড় তত্ত্বাবধানে এবং দিক নির্দেশনায় এগিয়ে চলছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তাদের মেধা, মনন, দক্ষতা, দেশপ্রেম, মানবিক মূল্যবোধ ও সৃজনশীলতা দিয়ে ভবিষ্যতে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করবে। তারা জাতির প্রত্যাশা পূরণে সদা সচেষ্ট থাকবে। সেই লক্ষ্যেই শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষাদানে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রতিটি সেকশনে মানসম্মত শিক্ষাদানের লক্ষ্যে অনধিক ৪০-৪৫ জন শিক্ষার্থীর পৃথক আসনের সুব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি পর্ব পরীক্ষা শেষে আসন পুনর্বিন্যাস শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করে। শ্রেণির পাঠ শ্রেণিতেই সম্পন্ন হয়, তাই শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়তে হয় না। যথা সময়ে সিলেবাস সম্পন্ন করতে আমরা প্রণয়ন করি একাডেমিক ক্যালেন্ডার ও পাঠ পরিকল্পনা। শিক্ষার শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে দেশে প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা বিস্তারে এবং বিজ্ঞান মনষ্ক সুনাগরিক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এ প্রতিষ্ঠানটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। উল্লেখ্য যে, ২০১৯ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানে কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মাধ্যমিক পর্যায়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে ভোকেশনাল শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

এছাড়া দক্ষ্য মানবশক্তি বিনির্মাণে ও কারিগরী শিক্ষা প্রসারে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী ইনস্টিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি শুরু হচ্ছে।শিক্ষার্থীরা পুরো বছর ধরে অভ্যন্তরীণ ও জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও খেলাধূলায় অংশগ্রহণ করে প্রতিভা ও সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখেছে। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে আয়োজন করছে বহুবিধ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানা। সাহিত্য অঙ্গণে এ কলেজের শিক্ষার্থীদের পদচারণা প্রশংসনীয়। শিক্ষার্থীদের লিখনী শক্তিকে ধারালো করতে প্রতিবছর বের হচ্ছে চমৎকার লেখা সংবলিত বার্ষিকী “গুবাক তরু”।

 

শেয়ার করুন:

Recommended For You