ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে আমাদের অঙ্গীকার ছিল ২৪টি পার্ক ও মাঠ নির্মাণ ও উন্নয়ন করে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া। আজ শহীদ ডাঃ ফজলে রাব্বি পার্কের উদ্বোধনের মাধ্যমে আমরা জনগণকে দেওয়া অঙ্গীকার রক্ষা করতে পেরেছি। এর মাধ্যমে ২৪টি পার্ক ও মাঠের কাজ সম্পন্ন হলো। ফজলে রাব্বি পার্কটি একটি আধুনিক ব্যতিক্রমধর্মী পার্ক। এই পার্কের চারদিকে শব্দদূষণ রোধে জার্মানি থেকে আমদানিকৃত দৃষ্টিনন্দন ট্রান্সপারেন্ট নয়েজ ব্যারিয়ার দেয়া হয়েছে। এর ফলে বাহিরের তুলনায় পার্কের ভিতরে পঞ্চাশ শতাংশ কম নয়েজ থাকবে।’
বৃহস্পতিবার (০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪) বিকেলে গুলশানের শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি পার্কের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম। মেয়র বলেন, ‘সবাই বলে বিদেশে দেখা যায় সুন্দর সুন্দর পার্ক। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি আজকে উদ্বোধন হওয়া ডাঃ ফজলে রাব্বি পার্কসহ, শাহাবুদ্দিন পার্ক, শহীদ তাজউদ্দীন পার্ক এবং শহরের সবগুলো পার্ক আমরা দেশের সেরা স্থপতি ও প্রকৌশলীদের দিয়ে ডিজাইন করিয়েছি। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মতামত নিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে। আমরা নারী, পুরুষ, যুবক, শিশুসহ সকল বয়সের মানুষের সঙ্গে আলাপ করে পার্কের ডিজাইন করেছি। সবাইকে সম্পৃক্ত করে পার্কের ডিজাইন ও উন্নয়ন করায় ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রফিস এওয়ার্ড পুরস্কার অর্জন সম্ভব হয়েছে।
মেয়র আরও বলেন, ‘এই পার্কটির উন্নয়ন কাজ শুরু হলে করোনার কারনে বেশ কিছুদিন বিলম্ব হয়েছে। সোসাইটির সবাই আমাকে প্রতিনিয়ত বলতেন পার্কটি কেন দেরি হচ্ছে, যে অবস্থায় আছে খুলে দেন। কিন্তু আজ উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরে সবাই বুঝতে পেরেছে কেন সময়টা লেগেছে। এখানে ন্যাচারবেজড সবকিছু করা হয়েছে। আমরা আজকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও কিন্তু উন্মুক্তভাবে করেছি। মানুষের সুবিধার বিষয় যেমন বিবেচনা করা হয়েছে তেমনি পাখিদের কথাও বিবেচনা করা হয়েছে।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘গুলশান বনানী নিকেতন বারিধারা সোসাইটিকে আমি অনুরোধ করে বলতে চাই— পার্কটির পাশ দিয়ে যে লেকটি আছে সেখান দিয়ে নৌকা চলাচলের ব্যবস্থা করেন, যেন মানুষ নৌকা দিয়ে চলাচল করতে পারে। এখান থেকে নৌকা দিয়ে চলে যাওয়া যাবে সার্কেল পর্যন্ত। সেখান থেকে রাস্তাটা পার হয়ে আবার সেখানে নৌকা সার্ভিস থাকবে, সেখান থেকে নৌকায় চড়ে আবার চলে যাওয়া যাবে বনানী কবরস্থান পর্যন্ত।
মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘একইভাবে গুলশানের যে লেকটি আছে, সেটা দিয়ে নৌকায় করে চলে যেতে পারবেন কালাচাঁদপুর পর্যন্ত। মাঝখানের রাস্তা শুধু পার হবেন, এরপর থেকে আরেক নৌকা সার্ভিস থাকবে। সোসাইটিগুলোকে বলব— আপনারা যে কোনো কিছু রেডিমেড না নিয়ে এমন ইনোভেটিভ কিছু করুন। এটা নিয়ে কাজ করুন, আমাদের কাছে আসুন আমরা সার্বিক সহযোগিতা করব। এসব সোসাইটিতে যারা আছেন তারা নিজেরা সমন্বয় করে এই খেয়াগুলোতে, লেকগুলোতে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জন্য পরিবেশবান্ধবভাবে নৌকা নামিয়ে দিন। পরিবেশ বান্ধব বাহন সৃষ্টি হবে। এমন পদক্ষেপ আপনারা গ্রহণ করবেন, আপনারা এক পা আগাবেন, আমি, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন দশ পা আগাবো সহযোগিতার জন্য।’
এ সময় ডিএনসিসি মেয়র গুলশান ও নিকেতন সোসাইটিকে ফজলে রাব্বি পার্কটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আহবান করেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় বলেন, ‘ভিশন, রুচি ও চেষ্টা থাকলে অনেক কিছু করা যায়। অনেক সময় বড় কিছু করতে গেলে অনেকে অনুৎসাহিত করার চেষ্টা করবে, আটকে দেয়ার চেষ্টা করবে। অনেক বড় কিছু করার চিন্তা ও তা চেষ্টা করা হলে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদল হয়। দৃষ্টিভঙ্গি বদল হলে অনেক বড় কিছু অর্জন করা যায়। গত ১৫ বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তার বিভিন্ন নজির আমরা দেখেছি। দেশের মানুষ যা কিছু চিন্তা করতে পারেনি সে ধরণের উন্নয়নের ঘটনা বাংলাদেশে ঘটে গেছে। ১৫ বছর আগে যদি বলা হতো, ঢাকা শহরে মেট্রোরেল চলবে, সেটা কেউ বিশ্বাস করতো না। যদি বলা হতো বাংলাদেশের শতভাগ মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাবে, সেটা কেউ বিশ্বাস করতো না। পদ্মা সেতু আমরা নিজের টাকায় করবো, বাংলাদেশের মানুষ এটাও বিশ্বাস করেনি।
তিনি আরও বলেন, ‘গত ১৫ বছরে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে গেছে। আমরা অনেক সাহসী হয়েছি, আমরা এখন অনেক বড় স্বপ্ন দেখতে পারি এবং তা বাস্তবায়ন করতে পারি। সেই জায়গা থেকেই ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরের বিষয় চলে এসেছে।’
অনুষ্ঠানে অনুভূতি প্রকাশ করেছেন শহীদ ডাঃ ফজলে রাব্বির সন্তান ওমর রাব্বি। বক্তৃতা শেষে উন্নয়নকৃত শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি পার্কের উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন ডিএনসিসি মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম এবং তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত। পরে ডিএনসিসি মেয়র অন্যান অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে বৃক্ষরোপণ, পার্ক পরিদর্শন এবং পার্কের পূর্বপাশে ডিএনসিসি কর্তৃক নবনির্মিত দৃষ্টিনন্দন ট্রাফিক পুলিশ বক্স উদ্বোধন করেন।
১৯ নং ওয়ার্ডের সম্মানিত কাউন্সিলর জনাব মোঃ মফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন গুলশান সোসাইটির সভাপতি ড. এটিএম শামসুল হুদা, নিকেতন সোসাইটির সভাপতি ডাঃ এম এ বাশার, ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগে. জেনা. মুহঃ আমিরুল ইসলাম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. জেনা. ইমরুল কায়েস চৌধুরী, শহীদ ডাঃ ফজলে রাব্বি পার্কের নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবুল কাসেম, ডিএনসিসির সকল বিভাগীয় প্রধান ও ডিএনসিসির কাউন্সিলরবৃন্দ এবং অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।