সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ুক সারাদেশের সবখানে : মন্ত্রিপরিষদ সচিব

সারাদেশে একযোগে শুরু হয়েছে জাতীয় পিঠা উৎসব ১৪৩০। গতকাল বুধবার বিকাল ৫.০০টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব জনাব মোঃ মাহবুব হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব খলিল আহমদ, মঞ্চসারথি জনাব আতাউর রহমান, একাডেমির সচিব জনাব সালাহউদ্দিন আহাম্মদ এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলী লাকী। 

প্রথম পর্বে একাডেমির বাউলকুঞ্জের সামনে বেলুন উড়িয়ে জাতীয় পিঠা উৎসব ১৪৩০ এর শুভ উদ্বোধন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। এরপর পরিবেশিত হয় গ্রামবাংলার জনপ্রিয় লাঠি খেলা। ঢাকের তালে মঞ্চে পরিবেশিত হয় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রতিশ্রুতিশীল নৃত্যশিল্পীদলের ঢাকী নৃত্য। উদ্বোধনী আয়োজনে প্রদর্শিত হয় জাতীয় পিঠা উৎসব ১৪৩০ এর ভিডিওচিত্র।

আলোচনা পর্বে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব এবং জাতীয় পিঠা উৎসব ১৪৩০ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক জনাব সালাহউদ্দিন আহাম্মদ। প্রবন্ধ পাঠ করেন লেখক ও গবেষক বাশার খান। পিঠার পূর্বের সময়কার ঐতিহ্য লুপ্ত প্রায় ৪ শতাধিক ধরন নিয়ে আলোচনা উপস্থাপন করেন তিনি। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন ২১শে পদক ও স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত গুণি নাট্যজন মঞ্চসারথি জনাব আতাউর রহমান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব খলিল আহমদ। তিনি বলেন, আমাদের মায়েদের হাতে যে প্রক্রিয়ায় পিঠা তৈরী হয়, যেভাবে যত্ন করে বংশ পরম্পরায় তৈরী করা হয় সেটাই আমাদের সংস্কৃতি। আমরা আগামীতে সকল উপজেলাকে যুক্ত করে আরো বৃহত্তর পরিসরে সক্রিয়ভাবে এই পিঠামেলার আয়োজন করবো। আমরা পিঠাকেও ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজে অন্তর্ভূক্ত করার উদ্যোগ নেবো।”

আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জনাব মোঃ মাহবুব হোসেন বলেন ‘আমাদের এই স্বাধীন দেশকে উন্নত, স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়তে হবে। জঙ্গী মুক্ত সমাজ গড়ার জন্য আমাদের যুব সম্প্রদায়কে নানা ধরনের গ্রামীণ খেলাধূলা এবং সংস্কৃতির সাথে যুক্ত করতে হবে। বাঙালি হিসেবে পিঠার প্রতি আমাদের যে জায়গা সেটাও আমাদের বুঝতে হবে। পিঠা আমাদের সংস্কৃতির অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই যুক্ত। কিন্তু ধীরে ধীরে তার অনেকটা হারাতে বসেছে”। এই সময়ে এ ধরনের উদ্যোগের প্রসংশা করেন তিনি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “পিঠার চর্চা শুধু আয়োজনের মধ্যে না রেখে যদি নিজ নিজ ঘরে সবাই অনুশীলন করি তাহলে পিঠার ঐতিহ্যের জায়গায় আরো সম্প্রসারিত হবে”।

একাডেমির মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলী লাকীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিকে অনন্য উচ্চতায় এগিয়ে যাক। শিল্পকলা একাডেমির মাধ্যমে সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ুক সারাদেশের সবখানে। এক্ষেত্রে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পৃষ্টপোষকতা অব্যাহত রাখার কথাও জানান তিনি।

সারাদেশে মিষ্টি মেলা আয়োজনের ঘোষণা দিয়ে সভাপতির বক্তব্যে একাডেমির মহাপরিচালক জনাব লিয়াকত আলী লাকী বলেন- “পিঠা উৎসব আমাদের জন্য গৌরবের। আমাদের দেশের হাজার হাজার মনিষী আমাদের মাথা উচু্ করে দাঁড়াতে শিখিয়েছেন। আমরা মাথা উচুঁ করেই আমাদের সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে হাজির করবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন ১০ টা বক্তৃতায় যা না হয়, একটা নাটকে তার থেকে বেশি কাজ হয়। সংস্কৃতি এমনই শক্তিশালী মাধ্যম।”

তিনি আরো বলেন- “আমরা ইতিহাস ঐতিহ্যের লুপ্ত প্রায় যে ধরনের ৪০০ রকমের পিঠার কথা বলা হচ্ছে আমরা তা ফিরিয়ে আনবো। আমাদের অনেক খাবার এরই মধ্যে জিআই ভুক্ত হয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে বেশ কয়েকটি পিঠাকে আমরা ইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজের অন্তভুক্ত করার চেষ্টা করবো। আগামি বছরের মধ্যে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণারয়ের মাধ্যমে আমরা তার প্রক্রিয়া শুরু করবো।”এবারে পিঠা মেলায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৫ টি পিঠাশিল্পীকে পুরস্কার এবং জেলায় জেলায় ৫ জন পিঠাশিল্পীকে পুরস্কৃত করা হবে বলেও ঘোষণা দেন মহাপরিচালক।

আলো পর্বের পর শুরু হয় লোক- সাংষ্কৃতিক পরিবেশনা 
শুরুতেই অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ লোকসঙ্গীতানুষ্ঠান-বাংলাদেশেরে অপরিমেয় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য আবহমান বাংলার লোকনন্দন পরিবেশনা। এরপর আহসান উল্লাহ তমাল পরিবেশন করেন একক আবৃত্তি। একক সংগীত পরিবেশন করেন অনিমা মুক্তি গোমেজ এবং আবুবকর সিদ্দীক।

এরপর কবিরুল ইসলাম রতন এর পরিচালনায় ও নৃত্যালোক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিবেশনায় হয় সমবেত নৃত্য। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন রেজিনা ওয়ালী লীনা । এরপর রবিউল ইসলাম শান্ত (শিশু ) পরিবেশন করেন শাহ আব্দুল করিম এর গাওয়া গান। রংপুরের আঞ্চলিক সংগীত পরিবেশন করেন এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান। সৈয়দ শায়লা আহমেদ লীমার পরিচালনা ও ভঙ্গিমা ডান্স থিয়েটারের পরিবেশনায় সমবেত নৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ডালিয়া আহমেদ পরিবেশন করেন একক আবৃত্তি। জাহিদুল কবির লিটন পরিবেশন করেন শাহের গান ও সৃজনী সরকার জিতু (শিশু) পরিবেশন করেন আব্দুল লতিফ এর গান। আবারো পরিবেশিত হয় কবিরুল ইসলাম রতন এর পরিচালনায় ও নৃত্যালোক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিবেশনায় সমবেত নৃত্য। এরপর আবার বাবু সরকার পরিবেশন করেন জালাল খা এর গান; সুমী মীর্জা পরিবেশন করেন আরকুম শাহ এর গান এবং মাটি রহমান পরিবেশন করেন সাধক চাঁন মিয়া। সবশেষ সৈয়দ শায়লা আহমেদ লীমার পরিচালনা ও ভঙ্গিমা ডান্স থিয়েটারের পরিবেশনায় সমবেত নৃত্য পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ডালিয়া আহমেদ ও আব্দুল্লাহ বিপ্লব। জাতীয় পিঠা উৎসব ১৪৩০ চলবে প্রতিদিন বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত।

শেয়ার করুন:

Recommended For You