পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমাদের সরকার বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচিত সরকার, জনগণের সরকার এবং ভারত-রাশিয়া-চীন, যুক্তরাষ্ট্র-ইউরোপীয় ইউনিয়ন-যুক্তরাজ্যসহ কূটনৈতিক সম্পর্কের সব দেশের সাথেই আমাদের চমৎকার সম্পর্ক।
রোববার (২৮ জানুয়ারি ) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চীন ও নেপালের রাষ্ট্রদূত এবং জাতিসংঘের বাংলাদেশ সমন্বয়কের সাক্ষাত শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাতকালে চীন ও নেপাল উভয় দেশের রাষ্ট্রদূত তাদের নিজ নিজ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভিনন্দনপত্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের হাতে তুলে দেন।
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের (Yao Wen) সাক্ষাত নিয়ে মন্ত্রী হাছান বলেন, চীন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী। চীন থেকে আমরা বেশি আমদানি করি, কম রপ্তানি করি। আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধির আলোচনায় চীন বাংলাদেশ থেকে পাট, চামড়া, মাংস, সী-ফুড, মাছ এবং আম আমদানিতে আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। জুলাই বা আগস্ট মাসে আমরা আম রপ্তানি শুরু করতে পারি। চীন একটি বড় বাজার। সেখানে আমাদের পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার নিয়ে আলোচনা করেছি।
বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানবতার মা প্রধানমন্ত্রী বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন, আমাদের জনগণও তাদের দুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। কিন্তু এখন কক্সবাজারে স্থানীয়রাই সংখ্যালঘু, রোহিঙ্গা বেশি। এবং নিরাপত্তা, মাদকসহ নানা সমস্যা সেখানে সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা বলেছি, রোহিঙ্গাদের পূর্ণ অধিকারসহ নিজ দেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনই একমাত্র সমাধান। চীন এ বিষয়ে কাজ করছে এবং প্রত্যাবাসন যাতে শুরু হয় সে লক্ষ্যে কাজ করতে একমত হয়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বৈরী পরিবেশ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, চীন আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছে, সুবিধাজনক সময়ে সেটি হওয়ার জন্য আলোচনা চলছে। জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেটর গুয়েন লুইসের (Gwyn Lewis) সঙ্গে বৈঠক নিয়ে ড. হাছান জানান, জাতিসংঘের মহাসচিব তার চিঠিতে ও আমার সাথে কাম্পালায় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনকে পুণনির্বাচিত হওয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং বিশ্বনেতাদের কাছেও তার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। কিন্তু এর সাথে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল যে বিবৃতি দেয়, মাঝেমাঝে তা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। এটি নিয়ে আমি তার সাথে আলোচনা করেছি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘পক্ষপাতদুষ্ট ও ভুল উৎস থেকে তারা যে সংবাদ পায়, সেটি যেন না হয়। তারা যাতে ভেরিফায়েড সোর্স থেকে তথ্য পায় এবং আগুনসন্ত্রাস চালিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা, ঘুমন্ত মানুষকে দগ্ধ করা, ২৮ অক্টোবরের ঘটনাপ্রবাহ সেগুলো যে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের রিপোর্টে আসেনি সেটি আমি তাকে জানিয়েছি। জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেটর বলেছেন বিষয়টি তিনি দেখছেন।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আলোচনার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, ইউক্রেন যুদ্ধ ও পরে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর সেদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি বেশি নিবদ্ধ হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জন্য আন্তুর্জাতিক সহায়তাও অর্ধেকে নেমে এসেছে। আমি বলেছি, রোহিঙ্গা ইস্যু যেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্পটলাইটে থাকে। জাতিসংঘের কো-অর্ডিনেটর বলেছেন, এটি নিয়ে জেনেভায় আন্তুর্জাতিক ওয়ার্কিং গ্রুপ কাজ করছে এবং এ নিয়ে বৈঠক আসন্ন।
নেপালের রাষ্ট্রদূত ঘনশ্যাম ভান্ডারীর (Ghanashyam Bhandari) সঙ্গে মানুষে-মানুষে যোগাযোগ, যাতায়াত বৃদ্ধি, বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের উত্তরের সীমান্ত থেকে নেপাল মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে। ১ লাখ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতার সম্ভাবনার দেশ নেপালের সাথে ইতিমধ্যেই আমাদের বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি হয়েছে, এর ট্যারিফ নিয়ে আলোচনা চলছে।