শীতে জীবনযাত্রা স্থবির 

তীব্র শীত ও ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলাবাসির জীবনযাত্রা জুবুথুবু সাথে স্থবির হয়ে পড়েছে। গভীর রাতে থেকে হিমেল বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টির ফোটার মতো হালকা ঝড়ে পড়া ঘনকুয়াশা শীতকে আরও তীব্র করে তুলেছে। হাঁড় কাপানো শীতে চরম বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের দিনমজুর মানুষজন। শীত উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে ছুটে চলছেন তারা। 
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, রবিবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় জেলার বিভিন্ন রাস্তায় যানবাহন হেড লাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে। শহরের রিকশা চালক আলী হোসেন বলেন, এত বেশি শীত যে, গরম কাপড় পরেও শীত মানছে না। হাত-পা বরফের মত শক্ত হয়ে গেছে। রাস্তায় চলাফেরা করতে সমস্যা হচ্ছে। টমটম চালক হিরন মিয়া বলেন, ঘনকুয়াশা ও ঠান্ডার কারণে যাত্রীরা বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। রিকসা নিয়ে বসে আছি। ভাড়াও নাই। আয় ও কমে গেছে। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। সপ্তাহ পার হলে সমিতির টাকা দিতে হয়। শহরতলীর মুসলিমবাগ আবাসিক এলাকার রিকশা চালক হৃদয় বলেন, রাতে শীতে ঘুমাতেও পারিনি। এখন সকাল সকাল উঠে কাজে বের না হলে পেটেও কিছু পড়বে না। বাধ্য হয়েই কাজে বের হইছি।
এখনই হাত পা শক্ত হয়ে যাচ্ছে। ভ্যান গাড়িতে শীতের কাপড় বিক্রি করেন হোসেন মিয়া। তিনি বলেন, কনকনে শীতে আমি ভ্যান নিয়ে বের হয়েছি। ভ্যান না বের করলে খাবো কি, পেটের টানে বাধ্য হয়ে বসেছি। শীত বাড়লে বিক্রি বাড়ে, তাই এই শীতেও আমি ভ্যান নিয়ে ঘুরছি বসছি। তবে সারাদিন ঘুরা যাবে কিনা বুঝতেছি না। শহরের সিন্দুরখান রোডের ভ্যানচালক সায়মন মিয়া বলেন, সংসারের চাকা ঘুরাতে প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করেও ভ্যান নিয়ে বের হয়েছি।
শীতে শরীর কাপছে, তবু ঠেলা ঠেলতে হবে আমাকে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, উপজেলায় শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেশি। এবারও শীতকালীন স্বাভাবিক তাপমাত্রায় সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, হাঁপানি, টনসিলাইটিস, ব্রঙ্কিওলাইটিস ও সাইনোসাইটিসসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশি আসছে। এসব রোগ থেকে সুরক্ষায় শীত এড়িয়ে চলতে হয়। প্রয়োজনে নিতে হয় চিকিৎসকের পরামর্শ।
শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক প্রতিবেদককে বিবলু চন্দ্র দাশ জানান, তাপমাত্রা ওঠানামা করায় শ্রীমঙ্গলে জেঁকে বসেছে শীত। গত দুই সপ্তাহ থেকে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি থেকে ১১ ডিগ্রির ভেতরে ওঠানামা করছে। তবে আজ (২৮ জানুয়ারি) রবিবার সকাল ৬টায় শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৫ ডিগ্রি এবং সকাল ৯টায় ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিসুর রহমান আনিস জানান, রবিবার (২৮ জানুয়ারি) শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। শ্রীমঙ্গলে চলতি শীত মৌসুমে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আজ অনুভূত হচ্ছে।
গতকাল এ উপজেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এর আগে ২৩ জানুয়ারি শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.২ ডিগ্রি এবং এর আগে ২০ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল।
শেয়ার করুন:

Recommended For You