কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় পুলিশি অভিযানে রক্ষা পেল তরুনির প্রাণ। অপহরন করে মুক্তিপন দাবী ও দলবদ্ধভাবে ধর্ষনের ঘটনায় ৩ জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার ও অপরাধকর্মে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল জব্দ করেছে পুলিশ।
শনিবার বিকাল ৩ টায় অটো আটকে টাকা দাবী করছে এমন সংবাদ এসেছিল পাকুন্দিয়া থানায়। সংবাদটি গুরুত্ব দিয়ে সাথে সাথেই পাকুন্দিয়া থানার এসআই দীন মোহাম্মদ, এসআই নাজিম উদ্দিন এবং এএসআই মোঃ রাকিব উজ্জামান খান, ছুটে চলে যায় তারাকান্দি এলাকায়। সেখানে যেয়ে অটো আটক অবস্থায়ও পায়। পরে জানতে পারে অটোতে আসা এক তরুনীকে পরিত্যক্ত একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরিত্যক্ত টিনের ঘরে ঘটে ভিন্ন ঘটনা। একের পর এক যুবক কর্তৃক জোরপূর্বক ধর্ষিত হয়ে যাচ্ছিল তরুণীটি। মাটি থেকে উঠে দাড়াতেই না পারলেও বারংবার পাশবিকতার শিকারে কুকড়ে যাচ্ছিল তার জীর্ণ দেহ। ইতিমধ্যেই ৫ জন কর্তৃক ধর্ষিত হয়েছে তরুণীটি। পুলিশের অবস্থান বুঝেই সটকে পরে প্রায় সকল অপরাধীরা। তবে মোঃ কাউসার আহম্মেদ (২৪),ও জুবায়েদ হাসান শুভ (১৮), দ্বয়কে ঘর থেকে পালানোর সময় দৌড়ে ধরে ফেলে পুলিশের টিম। পরে পুলিশের অভিযানে তোফাজ্জল হোসেন রাজু (২৪) নামে ঘটনার এক সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়।
জানা যায়, গত শনিবার বিকাল অনুমান ৩ ঘটিকার সময় গাজীপুর এসকে ট্রিমস গার্মেন্টস কর্মী ১৮ বছরের তরুনী নিজ বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানাধীন চরতেরটেকিয়া আসার পর তার বন্ধু সাব্বির হোসেন (১৮) এবং ভিকটিমের বন্ধু সাব্বির হোসেনের মামা সম্পর্কে অটো ড্রাইভার হুমায়ুন কবির (২১) এবং সাব্বিরের বন্ধু আশরাফসহ পাকুন্দিয়া উপজেলার তারাকান্দি গ্রামস্থ তারাকান্দি বাজারে ঘুরতে যাওয়া অবস্থায় ভয়-ভীতি দেখিয়ে স্থানীয় অভিযুক্ত-মোঃ কাউসার আহম্মেদ (২৪),জুবায়েদ হাসান শুভ (১৮),মেহেদী হাসান (২২),হৃদয় (৩২),বাবু (২২),তোফাজ্জল হোসেন রাজু (২৪), ইয়াসিন (২৫) গন অটোরিক্সাটিকে তারাকান্দি ফাজিল মাদ্রাসার মাঠে নিয়ে যায় এবং মুক্তিপণ বাবদ ভিকটিমের বন্ধু সাব্বিরের কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করে।আসামীরা তাদেরকে আরো বলে যে, মুক্তিপণের টাকা না দিলে ভিকটিমকে এবং তাদের সাথে থাকা অটোরিক্সা ছাড়বে না।
আসামীরা অটোরিক্সার ড্রাইভার ও ভিকটিমের বন্ধু আশরাফ সহ মাদ্রাসার মাঠে রেখে ভয় দেখিয়ে ভিকটিমকে মাদ্রাসার পাশে জনৈক রানা ভূঞার একটি পরিত্যক্ত টিনের ঘরে নিয়ে গিয়ে অভিযুক্তদের মধ্যে প্রথমে হৃদয়, পরে মেহেদী, বাবু, কাউসার এবং সবশেষে জোবায়ের হোসেন শুভসহ ৫ জন অপরাপরদের সহযোগিতায় ঘরের পাশের পূর্ব কোনায় মাটিতে ফেলে ভিকটিমকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক পর্যায়ক্রমে ধর্ষন করতে থাকে। ঘটনার সময় মাদ্রাসার মাঠে থাকা সাব্বিরের বন্ধু আশরাফ মুক্তিপনের টাকা সংগ্রহের কথা বলে কৌশলে থানায় এসে থানা পুলিশকে অবগত করলে পাকুন্দিয়া থানার এসআই মোঃ দ্বীন ইসলাম, এসআই নাজিম উদ্দিন, এএসআই মোঃ রাকিব উজ্জামান খান, তাৎক্ষনিক অভিযান পরিচালনা করে ধর্ষনের ফলে অসুস্থ অবস্থায় ভিকটিমকে উদ্ধার করে ৩ জন আসামীকে গ্রেফতারসহ অপরাধ কাজে ব্যবহৃত একটি সুজুকি মোটর সাইকেল উদ্ধারপূর্বক জব্দ করেন।
এ ঘটনায় ভিকটিমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পাকুন্দিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা রুজু করা হয়।এ মামলার তদন্তকারী অফিসার পাকুন্দিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ মোবারক হোসেন।ভিকটিমকে চিকিৎসার জন্য ওসিসি, ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।ধর্ষনের ঘটনা প্রমাণে সহায়ক আলামত জব্দ করা হয়েছে।এ ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ পিপিএম (বার) সহ ঊর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ভিকটিম ও আটক অপরাধীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। জড়িত পলাতক সকল আসামী গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে।রবিবার এ বিষয়ে মিডিয়া সেল গ্রুপে বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আল আমিন হোসাইন।