কুষ্টিয়ায় চেকপোস্ট পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পালানোর সময় অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে ধাক্কা লেগে আসিফ (২০) নামের এক মোটরসাইকেলচালক নিহত হয়েছে। এ এ ঘটনায় আসিফের সঙ্গে থাকা তাঁর খালাতো ভাই আকিব (২১) গুরুতর আহত হয়েছে। গুরুতর আহত আকিবকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) বেলা ৩টার দিকে কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গা সড়কের আইলচারা ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা এলাকায় এ দূর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের ধাওয়ায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এ দূর্ঘটনা ঘটে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। তারা বলছে, চেকপোস্ট দেখে পালানোর সময় এ দূর্ঘটনা ঘটেছে। নিহত আসিফ চুয়াডাঙ্গা জেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের কবিখালী খালপাড়া এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে এবং চুয়াডাঙ্গা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র।
আসিফের স্বজনদের সূত্রে জানা গেছে, আসিফ ও আকিব চুয়াডাঙ্গা থেকে মোটরসাইকেলে কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার আইলচারা ইউনিয়নের বল্লভপুর মাঠপাড়া এলাকায় তাঁর চাচাতো বোনের বাড়িতে দাওয়াত খেতে আসছিলেন। দাওয়াত খেয়ে দুপুরে চুয়াডাঙ্গার উদ্দেশ্যে রওনা দেন তাঁরা।
শামীম আহম্মেদ নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, কুষ্টিয়া-চুয়াডাঙ্গা সড়কের স্টিল ব্রীজের কাছে মাঝে-মধ্যেই চেকপোস্ট বসায় হালসা ও পাটিকাবাড়ী ক্যাম্পের পুলিশ। আজও সেখানে তারা চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন ধরনের গাড়ির কাগজ চেক করছিল। দুপুরের দিকে একটি মোটরসাইকেলে দুই যুবক কুষ্টিয়া থেকে চুয়াডাঙ্গার দিকে যাওয়ার সময় চেকপোস্ট দেখে তাদের মোটরসাইকেল ঘুরিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের পেছনে ধাওয়া দেয়।
শামীম আহম্মেদ আরও বলেন, কিছু দূর যাওয়ার পর বাগডাঙ্গা মোড়ের কাছে দুই যুবকের মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে ধাক্কা খান। এতে ঘটনাস্থলেই একজন মারা যান। স্থানীয় ফারুক হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলটি সদর থানার ভেতর। আজ সেখানে মিরপুর থানার আওতায় হালসা ক্যাম্প পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে মোটরসাইকেলের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করছিল। তাঁর দাবি, পুলিশ পেছন থেকে ধাওয়া দেওয়ার কারণে মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারায়।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে হালসা ক্যাম্পের এ.এস.আই শরিফুল ইসলাম বলেন, তাঁরা পুলিশ দেখে পালানোর চেষ্টা করেন। তাঁদের পেছনে কেউ ধাওয়া করেননি। কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) তাপস কুমার সরকার জানান, দু’জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাদের মধ্যে আসিফের মৃত্যু হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই হয়েছে। আরেকজনকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার অবস্থাও গুরুতর।
এ ব্যাপারে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তফা হাবিবুল্লাহ জানান, ওই রাস্তায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটে। সে জন্য সদর, ইবি ও মিরপুর থানার আওতায় হালসা ক্যাম্প পুলিশ দিন ভাগ করে যৌথভাবে টহল দিয়ে থাকে। তারই অংশ হিসেবে আজ হালসা ক্যাম্প পুলিশ ব্রিজের কাছে তল্লাশি চালাচ্ছিল।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা জানান, আমি ঘটনাস্থলে না গেলেও শুনেছি যে চেকপোস্টে পুলিশ দেখে ওই দুই যুবক পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশের সন্দেহ হলে পুলিশ তাঁদের ধাওয়া দেয়। এই ঘটনায় অ্যাম্বুলেন্সটির চালককে আটক করা হয়েছে।