নরসিংদীর রায়পুরায় ডাচ্ বাংলা ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার কার্যক্রম বন্ধ করে তালাবদ্ধ করে গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে উদ্যােক্তা উধাও আর আরএম এর দেয়া মানসিক চাপে বিপর্যস্ত হয়ে  আত্মহ-ত্যা করেন  উক্ত শাখার এরিয়া ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুম (৪৫)। 
গ্রাহকদের টাকা নিয়ে শাখার পরিচালক  উধাও হয়ে যাওয়ার পর তাকে চাপ দিলে আব্দুল কাইয়ুম শনিবার বিষপান করে।  সোমবার রাতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। গণমাধ্যমের সাথে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আব্দুল কাইয়ুম এর স্ত্রী আমেনা বেগম। জানা যায়, আলগী বাজার আউটলেট (এজেন্ট শাখা)র গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়ার পর থেকেই কাইয়ুমের উপর মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করছেন ব্যাংকটির আর.এম. রেদোয়ান মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। এক পর্যায়ে রেদোয়ান গ্রাহকদের সকল টাকা পরিশোধ করতে হবে এ সংক্রান্তে কাইয়ুম এর কাছ থেকে জোরপূর্বক ভাবে একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়।
নিহত আব্দুল কাইয়ুম উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের রামনগর মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা। সে এরিয়া ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন। তার অধিনে রায়পুরায় ৩০টি আউটলেট (এজেন্ট শাখা) ছিলো। অন্যদিকে এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার পরিচালক শহিদুল ইসলাম লিটনের বাড়ি একই উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে। ঘটনার পর থেকে তিনি এখনো পলাতক রয়েছেন। রায়পুরা উপজেলার মহেষপুর ইউনিয়নের আলগী বাজারের সততা এন্টারপ্রাইজের কার্যালয় তালাবদ্ধ থাকার খবর পেয়েই ওই শাখার ভুক্তভোগীরা কার্যালয়ের সামনে ভিড় করতে থাকেন।
এদিকে নিহতের স্বজনরা জানান, বারবার কর্তৃপক্ষের এমন চাপ সইতে না পেরে কাইয়ুম শনিবার সকালে নিকটস্থ মাহমুদাবাদ বাজার থেকে একটি বিষের বোতল কিনে এনে বিষপান করে। বিষপানের কিছুক্ষন পর স্বজনরা টের পেয়ে প্রথমে কাইয়ুমকে ভৈরবের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখান থেকে জহিরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও তার অবস্থার অবনতি দেখে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কাইয়ুম সোমবার রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় মৃত্যু বরন করেন বলে জানান তার স্ত্রী আমেনা বেগমসহ স্বজনরা।
নিহতের স্বজনরা আরও জানায়,  কাইয়ুমের মৃত্যুর ব্যাপারে ব্যাংকটির কর্মকর্তা (আর.এম) রেদোয়ান মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম দায়ী। এ ঘটনার পর থেকে ব্যাংকটির অন্যান্য কর্মকর্তারা নিজেদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে গেছে বলে অভিযোগ তাদের। ডাচ্ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড এই শাখার  উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটন। তার উপর অভিযোগ উঠেছে । প্রায় ১০ কোটির বেশি টাকা নিয়ে তিনি এখন পলাতক রয়েছেন। সততা এন্টারপ্রাইজ নামে এই ব্যাংকের কার্যালয় তালাবদ্ধ। তালাবদ্ধের খবর পেয়ে রোববার থেকেই ওই শাখার ভুক্তভোগীরা ভিড় করেন।
জানা গেছে, এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার পরিচালক শহিদুল ইসলাম লিটন। তিনি উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি এ ঘটনার পর থেকে পলাতক। ভুক্তভোগীরা অন্য অন্য শাখায় অনলাইনে নিজের হিসাবে টাকা দেখতে না পেয়ে, কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। এসময় এজেন্ট ব্যাংকিং ইনচার্জ ও অন্যান্য কর্মচারীদের কাছে নিজেদের জমা রাখা টাকা দাবি করেন গ্রাহকেরা।
ভুক্তভোগী গ্রাহকেরা জানান, ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের সুনাম থাকায় বিশ্বস্ত হিসেবে অনেকেই এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন। তাদেরকে শাখা থেকে জমা রশিদও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকের উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটন হাজার হাজার গ্রাহকদের না জানিয়ে সুকৌশলে ওই টাকা মূল শাখায় জমা না দিয়ে নিজের একাউন্টে অন্তত ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে রোববার শাখাটি তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায়।
মহেষপুর ইউনিয়নের বেগমাবাদ হুগলাকান্দি গ্রামের লিপি বেগম নামের এক নারী গ্রাহক বলেন, ‘১৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা রেখেছিলাম ব্যাংকে। হঠাৎ শুনি ব্যাংকের লোকেরা টাকা নিয়ে পালিয়েছে। এখানে এসে ব্যাংক তালাবদ্ধ দেখছি। স্বামী বিদেশে কষ্ট করে পাঠানো জমানো টাকা রাখতাম। ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ মনে করে সর্বত্র টাকা জমা করেছিলাম। আমি এখন কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। টাকা ফেরত চাই।’
চাঁনপুর ইউনিয়নের মাঝেরচর এলাকার হিরন মিয়া নামের আরেক গ্রাহক বলেন, ‘৭লাখ টাকা ডিপোজিট করেছিলাম। চলতি হিসাবে ৫০ হাজারের মতো ছিল। এমন প্রতারণা মেনে নেওয়া যায়না। আমারসহ গ্রাহকের টাকা উদ্ধারে যথাযথ ব্যাবস্থা চাই।’
ভুক্তভোগী শংকর লাল দাস বলেন, ’গরু বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা রেখেছিলাম’। ‘কোথায় গেলে আমার টাকা পাবো’? এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন তিনি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রতারক সেই উদ্যোক্তার নামে সাধারণ ডায়েরি ও আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এমনটাই জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোজলিন শহিদ চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টির কথা শুনেছি। ভুক্তভোগীদের সর্বাত্মক সহযোগিতায় আমাদের কাজ। অভিযোগ পেলে ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের লোকদের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার চেষ্টা করবো।