শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর পশ্চিমে দেশটির মিত্ররা গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশকে অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে ভারত ও চীনের সঙ্গে তার স্বার্থের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিমাণ এখন প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার। ২০১৬ সাল থেকে চীনের বৈশ্বিক অবকাঠামো বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) সদস্যও বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী নিয়ে চীনের অর্থায়নে নতুন একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা নয়াদিল্লির সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশ সরকার নদীর উল্লেখযোগ্য অংশে ড্রেজিং ও বাঁধ নির্মাণের জন্য চীনের একটি প্রস্তাব বিবেচনা করছে। তিস্তা রিভার কম্প্রিহেনসিভ ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড রেস্টুরেশন প্রজেক্টের অর্থায়ন ধরা হয়েছে প্রায় ১০০ কোটি ডলার।
প্রায় এক দশক ধরে আলোচনার পরও বাংলাদেশ ও ভারত পানিবণ্টন চুক্তি সই ব্যর্থ হয়েছে। এরপর চীনের পক্ষ থেকে প্রস্তাব আসে (তিস্তা প্রকল্পের)। ২০১১ সালে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিরোধিতার কারণে একটি সম্ভাব্য চুক্তি স্থগিত করে ভারত।
ভারতের শিলিগুঁড়ি করিডোরকে বলা হয় চিকেন নেক। এই করিডোরটি প্রস্তাবিত ওই তিস্তা প্রকল্পের কাছে। ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ সংকীর্ণ একটি অংশের মাধ্যমে ভারতের অন্য ভূখণ্ডের সঙ্গে এই করিডোর উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে সংযুক্ত করেছে। ভূ-রাজনৈতিক দিক দিয়ে এর রয়েছে স্পর্শকাতরতা।
ভারতের আশঙ্কা, বাংলাদেশের সঙ্গে উন্নয়ন কাজের আড়ালে করিডোরের কাছে চীন তাদের উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করতে পারে। হোসেন বলেন, এসব ঘটনা অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতির বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে প্রভাব ফেলতে পারে।
বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের পর গণতান্ত্রিক পশ্চাদপসরণের আশঙ্কায় পশ্চিমা দেশগুলোতে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন সমালোচিত হয়। হাসিনার বিজয় ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা বাংলাদেশের নির্বাচনকে ‘অবাধ ও সুষ্ঠু’ হিসেবে স্বীকৃতি দেবে না। ৯ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনা বিএনপিকে অজ্ঞাত ‘বিদেশি প্রভুদের’ পক্ষে কাজ করার অভিযোগ করেন।
বাংলাদেশের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্কের জন্য পরিচিত। বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি বুধবার নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ইইউর সঙ্গে মাহমুদের ‘দৃঢ় সম্পর্ক’ এবং ইউরোপ সম্পর্কে তার ‘গভীর বোঝাপড়ার’ প্রশংসা করেন।
হোয়াইটলি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ও ইইউ’র মধ্যকার সম্পর্ক নতুন অংশীদারিত্ব ও সহযোগিতা চুক্তির (পিসিএ) মাধ্যমে পরিচালিত হবে। তিনি বলেন, এই আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক চুক্তিটি শিগগিরই আলোচনা করা হবে এবং এটি বিদ্যমান চুক্তির চেয়ে অনেক বেশি ‘রাজনৈতিক’ হবে।