
হাঁস পালন অপেক্ষাকৃত কম পুঁজিতে বেশি লাভ। বিল, জলাশয় ও নদীতে উন্মুক্ত পানি থাকায় সেখানে হাঁস পালন বাণিজ্যিক রূপ লাভ করেছে। পাবনা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত ইউনিয়নের চান্দাই গ্রামের ইউসুফ আলী হাঁস পালন করে সচ্ছল জীবন ফিরে পেয়েছেন।
এ হাঁসের নাম হলো খাকি ক্যাম্ববেল। নদীর তীর, পুকুর পাড় ও আর্দ্র ভূমিতে হাঁস পালন খুবই লাভজনক। হাঁস একটি গৃহপালিত পাখি। দেশের গ্রাম অঞ্চলে অধিকাংশই হাঁস পালন করে থাকে। বাড়িতে হাঁস পালন করা খুবই সহজ। বর্তমানে হাঁস পালন করে অনেক বেকার যুবক তাদের আর্থিক সচ্ছলতা এনেছে। হাঁস মূলত জলচর প্রাণি। এ দেশের আবহাওয়া হাঁস পালনে খুবই উপযোগী। হাঁস পালন করলে একদিকে যেমন আর্থিক সচ্ছলতা এবং অন্যদিকে ডিম ও মাংস উভয়ই পাওয়া যায়। মাছের সঙ্গে হাঁসের চাষ একটি সমন্বিত খামার পদ্ধতি। একে অন্যের সহায়ক। পুকুরে মাছ ও হাঁস পালন পদ্ধতির সমন্বয় ঘটাতে পারলে সীমিত জায়গায় উৎপাদন বেশি পাওয়া যায়। অল্প জায়গায় মাছ ও হাঁস পালন পদ্ধতি অনেক উন্নত এ দেশে চালু আছে। মাছ চাষের জন্য পুকুরে হাঁস পালন করলে খুব কম খরচে অনবরত জৈবসার পাওয়া যায়।
বিশ্বে অনেক প্রজাতির হাঁস রয়েছে। এদের জাত যেমন ভিন্ন তেমনি নামও ভিন্ন ভিন্ন। তবে আমাদের দেশেও বেশ কিছু জাতের হাঁস পালন করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে প্রচলিত হাঁসের জাতগুলো হলো খাকি ক্যাম্পেবেল, ইন্ডিয়ান রানার, বেইজিং, সিলেট মিটি ও নাগেশ্বরী ও দেশি হাঁস ইত্যাদি। হাঁস বিভিন্ন পদ্ধতিতে পালন করা যায়। এর মধ্যে একটি হচ্ছে মুক্ত জলাশয়ে হাঁস পালন। এ পদ্ধতিতে ২৫-১০০টি হাঁস মুক্ত পুকুরে, লেকে অথবা ধান কাটার পর পরিত্যক্ত জমিতে পালন করা যায়। দিনের বেলায় হাঁস পানিতে থাকতে পছন্দ করে। শুধু রাত যাপনের জন্য ঘরের প্রয়োজন। হাঁস চাষে সুবিধা হলো হাঁস খাল-বিল-পুকুর থেকে তার কিছু খাবার সংগ্রহ করে নেয়।
আটঘরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হাঁসের খামারির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। খামারিরা বলছেন, হাঁস পালন অপেক্ষাকৃত কম পুঁজিতে বেশি লাভ। বিল-জলাশয় ও নদীর উন্মুক্ত পানি থাকায় সেখানে হাঁস পালন বাণিজ্যিক রূপ লাভ করেছে। চরের মাঠ-ঘাটে, খাল-বিল, ডোবা বা ফসলের ক্ষেতে হাঁস চড়ানো হয়। সেখানেই দল বদলে ছুটে চলে শত শত হাঁস। খাবার সংগ্রহ করে আবার দিন শেষে খামারে ফিরে আসে দলবেঁধে। খামারিরা হাঁস পালন করে বেশ খুশি।
খামারিরা জানালেন, হাঁসের খাবার এবং হাঁস চড়াতে কোনো ঝমেলা নেই। হাঁস পালন করে অনেকেই হয়েছেন সামলম্বী। দারিদ্রতা দূর করে অনেকেই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। কর্মসংস্থান হয়েছে অনেকের। সারা বছরই হাঁস পালন করা যায়- তবে শীতের সময় হাঁস এবং হাসের ডিমের চাহিদা বেশি থাকায় এ সময়টাতে হাটবাজারে হাসের জমজমাট কেনা বেচা হয়ে থাকে। খামারি ইউসুফ আলী জানান, সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া একটি হ্যাচারি থেকে খাটি ক্যাম্পবেল জাতের ১ হাজার ২শ হাঁসের বাচ্চা কিনে আনি। প্রতিটি বাচ্চার দাম ৩২ টাকা পিচ পরেছে।
বর্তমানে আমার প্রতিটি হাঁস সাড়ে চারশ থেকে ৫শ টাকা পিচ দাম হ্যাকা হচ্ছে। এই হাঁসের মাংস বেশি হয়। মাংস খেতে বেশ সুস্বাদু। ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস কিনতে প্রতিদিন ব্যাপারিরা এসে ভিড় করছে। তবে আমার খরচখড়চা বাদ দিয়ে ভালো টাকা লাভ হবে বলে জানান এই খামারী।