দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে ২৯৭ জন সংসদ সদস্য শপথ নিয়েছেন। এখন নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পালা। এরই মধ্যে নতুন মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকজন নেতা ফোন পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
বুধবার (১০ জানুয়ারি) প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এ ছাড়া মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে ৩৬ জনের নাম মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে যারা মন্ত্রী হতে যাচ্ছেন তাদের সবাইকে বৃহস্পতিবার শপথ নিতে আসার জন্য ফোন দেওয়া হচ্ছে।
মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে কল পেলেন যারা:
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এখন পর্যন্ত আ. ক. ম মোজাম্মেল হক, ওবায়দুল কাদের, নূরুল মজিদ হুমায়ূন, আসাদুজ্জামান খান কামাল, ড. দীপু মনি, মো. তাজুল ইসলাম, মুহাম্মদ ফারুক খান, আবুল হাসান মাহমুদ আলী, আনিসুল হক, মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, মো. আব্দুস শহীদ, সাধন চন্দ্র মজুমদার, র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, মো. আব্দুর রহমান, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, আব্দুস সালাম, মহিবুল হাসান চৌধুরী, ফরহাদ হোসেন, মো. ফরিদুল হক খান, মো. জিল্লুল হাকিম, সাবের হোসেন চৌধুরী, জাহাঙ্গীর কবির নানক, নাজমুল হাসান, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, সামন্ত লাল সেনকে মন্ত্রী পদে শপথ নিতে কল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার তারা বঙ্গভবনে শপথ নেবেন।
স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, সামন্ত লাল সেন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন বলে জানা গেছে।
প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন যারা:
বেগম সিমিন হোমেন (রিমি), নসরুল হামিদ, জুনাইদ আহমেদ পলক, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মো. মহিববুর রহমান, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জাহিদ ফারুক, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, বেগম রুমানা আলী, শফিকুর রহমান চৌধুরী, আহসানুল ইসলাম (টিটু)।
বুধবার রাত পৌনে ৯টায় সচিবালের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন এসব নাম ঘোষণা করেন। শপথ নেওয়ার পর পরই তাদের দপ্তর বণ্টনের প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলেও তিনি জানান। এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন সংসদ সদস্য শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
বুধবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগের পাশাপাশি তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সম্মতিও দেন রাষ্ট্রপতি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন সংসদ সদস্য শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনেও সম্মতি দিয়েছেন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলেও গণ্য করার কথা বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
এর আগে সকাল ১০টায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য হিসাবে শপথ নেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ নবনির্বাচিত ২৯৮ জন সংসদ সদস্য। তার আগে সংসদ সদস্য হিসাবে প্রথমে শপথ গ্রহণ করেন বর্তমান স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরী। এরপর স্পিকার হিসেবে তিনি শেখ হাসিনাসহ অন্য সংসদ সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান। জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র হিসেবে বিজয়ীরাও এদিন শপথ নেন।
সংসদ নেতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো সংসদ নেতা হলেন তিনি। একাদশ সংসদে মতিয়া চৌধুরী ছিলেন সংসদ উপনেতা। এবারও এ পদে তাকে বেছে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। চিফ হুইপ হয়েছেন গত সংসদে এ পদে দায়িত্ব পালন করা নূর-ই-আলম চৌধুরী। শপথ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদ গঠিত হয়। বাকি ছিল প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের বিষয়টি। রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেওয়ার পর যে কর্মকাণ্ডও সম্পন্ন হয়েছে।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয় পেয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে ২২২টি আসনে বিজয়ী হয়েছে নৌকার। জোট শরিকরাও নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে দুটি আসন পেয়েছেন। জাতীয় পার্টি পেয়েছে ১১; কল্যাণ পার্টি পেয়েছে একটি আসন। প্রথমবারের মতো স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২ আসনে বাগিয়ে নিয়েছেন। যদিও তাদের মধ্যে বেশিরভাগই আওয়ামী লীগের নেতা।