নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিবেকবান লোকও ভোট দিতে যায়নিঃ ডা. শাহাদাত হোসেন

৭ জানুয়ারীর একতরফা প্রহসনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিবেকবান লোকও ভোট দিতে যায়নি বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ও চট্টগ্রাম ৯ সংসদীয় আসনে বিগত নির্বাচনের প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। 
সোমবার (৮ জানুয়ারী) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারীর নির্বাচন ছিল বিগত দুটি নির্বাচনের মতো আরেকটি নজিরবিহীন ভোটবিমুখতার জাতীয় নির্বাচন। ভোটের দিন চট্টগ্রামের ভোট কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি এতটাই কম ছিল যে কোথাও কোথাও মসজিদ থেকে মাইকিং করেও ভোটার আনা যায়নি। ঐদিন ভোট উৎসবের পরিবর্তে চট্টগ্রামে ভোট বর্জনের এক নীরব প্রতিবাদ ফুটে উঠেছে। সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরুর তিন ঘণ্টা পরেও ভোট দেয়ার হার ছিল ৩ শতাংশ, কোথাও ৫ কিংবা ৮ শতাংশ। এতো জাল ভোট দেওয়ার পরও চট্টগ্রাম নগরীর ৮ সংসদীয় আসনে ২৬ শতাংশ, ১০ আসনে ২১ শতাংশ, ১১ আসনে ২০ শতাংশ ভোট পড়েছে দেখানো হয়েছে। এসব আসনে নৌকা ও লাঙ্গলের প্রার্থীর সাথে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিল। তারা ভোটারদের কেন্দ্রে আনার একটা চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ব্যতিক্রম ছিল চট্টগ্রাম ৯ আসন।
এই আসনে নৌকার প্রার্থীর সাথে শক্তিশালী কোন স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিল না। তাই ভোটারদের কেন্দ্রে আনার জন্য কারোর চেষ্টাও ছিল না। ভোট কেন্দ্রে অন্য প্রার্থীর পোলিং এজেন্টও দেখা যায়নি। তেমন গণসংযোগও করেনি কোন প্রার্থী। তারপরও এই আসনে ভোট পড়েছে দেখানো হয়েছে ৩৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। অন্য তিন আসনের চেয়ে চট্টগ্রাম ৯ আসনে ভোটারের সংখ্যাও কম। তারপরও সেখানে নৌকার প্রার্থীকে ১ লাখ ৪০ হাজার ৮৭৪ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে দেখানো হয়েছে। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লাঙ্গলের প্রার্থীকে দেওয়া হয়েছে ১৯৮২ ভোট। এই ভোটের তারতম্য থেকে বুঝা যায়, এই আসনেই সবচেয়ে বেশি জাল ভোট দেওয়া হয়েছে। জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামীলীগের জাল ভোটই যে একমাত্র সম্বল সেটাই প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি সহ ৬৩ টি রাজনৈতিক দলের বর্জনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই নির্বাচন। কম ভোটার উপস্থিতি ছাড়াও চট্টগ্রামে দিনভর ভোটকে কেন্দ্র করে অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ, হামলা, গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ, জাল ভোট, ব্যালট পেপার ছিনতাই, এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা, নৌকার পক্ষে প্রকাশ্যে সিল মারার ঘটনা ঘটেছে। ভোট গ্রহণ শেষে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল জানিয়েছেন, ৪০ শতাংশের মতো ভোট পড়েছে। অবশ্য তিনি ৩ টার সময় বলেছিলেন ২৬ শতাংশ ভোট পড়েছে। তাতে শেষ এক ঘণ্টায় ভোট পড়েছে দেখানো হয়েছে ১৩ শতাংশের বেশি। তবে সিইসির এই হিসাব ধরলেও বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ভোট পড়া নির্বাচনের মধ্যে অন্যতম হল এই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
তিনি বলেন, আন্দোলনরত বিএনপিসহ সমমনা দল ও অধিকাংশ জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষা ও দাবিকে অগ্রাহ্য করে তামাশার নির্বাচন করেছে সরকার। এই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। জালিয়াতির নির্বাচনে দেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে সম্পূর্ণরূপে অপমান করা হয়েছে। বিগত নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে গরু ছাগল দেখা গেছে, এবারের ভোটের দিন যুক্ত হয়েছে বানর ও কুকুর। চট্টগ্রামের অনেক কেন্দ্রে ৭/৮ বছরের বাচ্চাদেরও ভোট দিতে দেখা গেছে। প্রহসনের তামাশার ভোট, যেখানে নিজেরা নিজেরা ভোট করছে সেখানেও এ অবস্থা। বিএনপি কী কারণে ভোট বর্জন করেছে, তা প্রমাণিত।
শেয়ার করুন:

Recommended For You