রবিবার ৭ জানুয়ারি সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার ১৩ বছর পূর্ণ। ২০১১ সালের এই দিনে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ-র গুলিতে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয় ফেলানী।
দীর্ঘ সাড়ে চার ঘন্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে ফেলানীর নিথর দেহ। গণমাধ্যমসহ বিশ্বর মানবাধিকার সংগঠন গুলাের তীব্র সমালােচনার মুখে পড়ে ভারত। পরে বিএসএফ এর বিশেষ কাের্ট দুই দফায় বিচারীক রায়ে খালাস দেয়া হয় অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘােষকে। এ রায় প্রত্যাক্ষান করে ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠন মাসুম এর সহযাগিতায় ভারতীয় সুপ্রিম কাের্টে রীট আবেদন করে ফেলানীর পরিবার। এই হত্যাকান্ডের এক যুগ পার হয় ১৩ বছর পড়লেও এখনাে ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় ফেলানীর পরিবার।
জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলােনীটারী গ্রামের দরিদ্র নূরুল ইসলাম পেটের তাগিত আর দশজনের মতাে পারি জমান ভারতে। পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতের বঙ্গাইগাও এলাকায়। নূরুল ইসলামর বড় মেয়ে নিহত ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয় বাংলাদেশে। বিয়ের উদ্দেশ্যে নিজ দেশে আসার জন্য ৭ জানুয়ারী শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে ভারতের কাঁটাতার বেয়ে আসতে ধরে। দালালের মাধ্যমে ফুলবাড়ির অনন্তপুর সীমান্তে মই বেয়ে কাঁটাতার টপকিয়ে পার হয় ফলানীর বাবা। পরে ফেলানী কাটাতার পার হবার সময় ভারতীয় বিএসএফ’র গুলিত বিদ্ধ হয় সে। গুলি বিদ্ধ হয়ে আধা ঘন্টা ধরে ছটফট করে কাঁটাতারই ঝুলন্ত অবস্থায় নির্মমভাব মৃত্যু হয় কিশােরী ফেলানীর। এর পর সকাল পৌনে ৭টার থেকে নিথর দেহ কাঁটাতাঁর ঝুলন্ত থাকে দীর্ঘ সাড়ে ৪ঘন্টা।
এঘটনায় বিশ্বব্যাপী তােলপাড় শুরু হলে ২০১৩ সালর ১৩ আগষ্ট ভারতের কােচবিহার জেনারেল সিকিউরিটি ফাের্সেস কাের্ট ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। বিএসএফ এর এ কাের্টে স্বাক্ষী দেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামী অমিয় ঘােষকে খালাস দেয় বিএসএফ এর বিশেষ কাের্ট। পরে রায় প্রত্যাক্ষান করে পুন:বিচারের দাবী জানায় ফেলানীর বাবা। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পূর্ন:বিচার শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও আদালত স্বাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। ২০১৫ সালের ০২ জুলাই এ আদালত পুনরায় আত্মস্বীকৃত আসামী অমিয় ঘােষকে খালাস দেয়। রায়ের পরে একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম) ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রীম কাের্টে একটি রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টােবর রিট শুনানীর তালিকা ভুক্ত হয়।কিন্তু ২০১৬, ২০১৭ এবং ২০১৮সালে কয়েক দফা শুনানী পিছিয়ে যায়। পরে ২০২০ সালর ১৮ মার্চ করােনা শুরুর আগে শুনানীর দিন ধার্য হলেও শুনানী হয়নি আজ পর্যন্ত। এদিকে মেয়ের হত্যাকারীর বিচার না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেন ফলানীর বাবা নুরুল ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম।
ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম বলেন, ফেলানী হত্যার ১৩ বছর হয় গেলেও বিচার পাই নাই। ভারতীয় সুপ্রিম কাের্টে বিচারটা নিয়া গেলাম, কয়েকবার শুনানীর তারিখ দিলেও তা পিছিয়ে গেছে। কয়েক দিন আগে শুনলাম শুনানী হবে। তবে কবে হবে এর কােন তারিখ পাইনি। আমি আমার মেয়ে ফেলানী হত্যাকারীর বিচার মরার আগে যেতে চাই।
কুড়িগ্রামর পাবলিক প্রসিকউটর এ্যাড.এসএম আব্রাহাম লিংকন জানান, ভারতের মহামান্য সুপ্রিম কাের্ট ফেলানী হত্যা মামলার রীট তালিকাভূক্ত রয়েছে। সেটি যত দ্রুত শুনানী হবে ততই মামলাটির অগ্রগতি হবে।