সাতক্ষীরায় সন্ত্রাসীরা পুনরায় দখল নিল খলিশাখালির ১৩’শ বিঘা জমি 

সাতক্ষীরায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আবারও স্বকীয় ভূমিদস্যু ও চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা।স্থানীয় প্রশাসনের ব্যস্ততার সুযোগ বুঝে জেলার দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালির ১৩’শ বিঘা জমি পুনরায় দখল নিয়েছে।খলিশাখালির বিস্তীর্ণ এসব রেকর্ডিয় জমি সরকারি সম্পত্তি উল্লেখ করে গত কয়েক বছর ধরে তা দখল করার চেষ্টা করছিল ভূমিহীনদের নাম দিয়ে একদল চিহ্নিত ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা।
বুধবার (৩ জানুয়ারী)সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার খলিশাখালিসহ জেলার দেবহাটা কালিগঞ্জ আশাশুনি তালা খুলনার ডুমুরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা জমিরগুলো দখল করে নেয়।স্থানীয় মৎস্য ঘের ব্যবসায়ী শফি ইসলাম জানান,বুধবার(০৩ জানুয়ারী)বিকাল ৫ টার দিকে শতাধিক চিহ্নিত সন্ত্রাসী অস্ত্রসস্ত্র প্রদর্শন করে স্লোগান দিতে দিতে এসে মৎস্য ঘেরটি দখল করে নেয়।তবে ঘেরে থাকা কর্মচারীরা ভীতু সন্ত্রস্ত হয়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করে।
সাতক্ষীরার দেবহাটার খলিশখালির জমি দখলের নেতৃত্ব প্রদানকারী অসংখ্য মামলার আসামী চিহ্নিত সন্ত্রাসী আকরাম হোসেন সাংবাদিকদের জানান,১৯৪৭ সালের দিকে জমির সিএস মালিক ইশ্বরচন্দ্র ঘোষের ছেলে চন্ডীচরণ ঘোষ খলিশাখালির এক হাজার ৩২০ বিঘা জমি ফেলে রেখে চিরদিনের জন্য ভারতে চলে যান। পরবর্তীতে ওই সম্পত্তি সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়।তবে তথ্য গোপন রেখে দেবহাটার শিমুলিয়া এলাকার কাজী গোলাম ওয়ারেশের বাবা মালেক কাজী ও তাদের সহযোগীরা জাল জালিয়াতির মাধ্যমে সেটেলমেন্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কাল্পনিক কাগজপত্র তৈরি করে।পরে আদালতে আশ্রয় নিয়ে কয়েকজন মিলে ওই জমি দখল করে মাছ চাষ করে আসছেন।তারা জমির কাগজপত্র তৈরী করে নিয়েছেন এবং নিয়মিত খাজনা করাদি পরিশোধ করে এসেছেন।
অপরদিকে দখলকৃত ১৩শ বিঘা জমির মধ্যে থাকা ৩০ বিঘা জমির রেকর্ডিয় মালিক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাপ দাদার আমল থেকে এই জমি শান্তিপূর্ণভাবে ভোগ দখল করে আসছি।নিয়মিত খাজনা করাদি পরিশোধ করেছি।গত বছর আমরা সকল জমির মালিক মৎস্য ঘের করার জন্য জমি লীজ দিয়েছিলাম।লীজ গ্রহীতা বছর শেষে জমির পানি শুকিয়েছে।এই সুযোগে সন্ত্রাসীরা মৎস্য ঘেরটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে শুনেছি।
দেবহাটা থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই শেখ মো.গোলাম আজম বলেন, আংশিক জমি দখলের কথা শুনেছি।তবে পুরোপুরি সঠিক না।যদি আইন লঙ্ঘনের মত কোন ঘটনা ঘটে,তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গত ২০২১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ভোররাতে নোড়ারচকের সন্ত্রাসী ইসমাইল মেম্বর,আকরাম ডাকাত,কালু ডাকাত,গফুর মাস্তানের নেতৃত্বে মুহুমুহু গুলি ও বোমাবর্ষণ করে খলিশাখালির ১৩২০ বিঘা রেকর্ডিয় জমি জবরদখল ও মৎস্য ঘেরগুলো লুটপাট করে।এরপর থেকে খলিশাখালি এলাকাটি দাগী অপরাধীদের আঁখড়ায় পরিণত হয়।
সে সময় মৎস্য ঘেরে থাকা প্রায় চার কোটি টাকার মাছ বিক্রি করে ভাগবাটোয়ারা করে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।জমিগুলো খাস হিসেবে উল্লেখ করে এলাকার গরীব মানুষদের বন্দোবস্ত দেওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে। আর এই টাকার ভাগাবাটোয়ারায় যুক্ত হয় প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা,লোভী রাজনীতিক, নামধারী কিছু সাংবাদিকসহ দুর্নীতিবাজদের একটি চক্র। যদিও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বর্তমান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির সে সময় সুস্পষ্ঠভাবে বলেছেন জমিগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন রেকর্ডিয় সম্পত্তি এবং সেখানে সরকারের কোন দাবী নেই।
পরবর্তীতে প্রশাসনের সহায়তায় ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর সন্ত্রাসীরা জমি ছেড়ে চলে যায়।
শেয়ার করুন:

Recommended For You