
(কাহিনি সংক্ষেপ : আজিম নামের একজন স্বল্পশিক্ষিত কৃষক বাড়িতে যুবতী স্ত্রী ও ১১ মাসের কন্যা সন্তান পরীকে রেখে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য ভারতে চলে যায়। যুদ্ধ শেষে বিজয়ীর বেশে দেশে ফিরে সে জানতে পারে তার ভালোবাসার একমাত্র অবলম্বন কন্যা পরী কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। মুহূর্তে ম্লান হয়ে যায় তার যুদ্ধ-জয়ের সকল আনন্দ। সে তখন পাগলের মতো প্রলাপ বকতে বকতে বলতে থাকে, ‘যুদ্ধে কত সহযোদ্ধাই তো শহীদ হলো। আমি কেন শহীদ হলাম না? শহীদ হলে আমাকে তো এতো নিদারুণ কষ্ট ভোগ করতে হতো না। এই হৃদয়ভাঙা ব্যথা আমি কেমনে সইবো?’)
৯.
আজিম আর আবুল দুবন্ধু যেমন তাদের মনের মানুষকে প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে তেমনি তাদের আছে পরম দেশাত্মবোধ। খুব বেশি লেখাপড়া না জানলেও ইদানীং তারা দুজনই বেশ রাজনীতি সচেতন হয়ে উঠেছে। শুধু তারা দুজনই না, গাঁয়ের অনেক ছেলেই এখন রাজনীতির সাথে জড়িয়ে গেছে। এর কারণ হিসাবে বলা যায় বছর খানেক আগে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান পাবনায় জনসভা করতে এসেছিলেন। জনসভার আগে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা জেলার প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে ঘুরে এলাকার যুবক ছেলেদের সেই জনসভায় যোগদানের আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে গোহালবাড়ির চর থেকে আজিম, আবুল, বয়জার, দিরাই সোনাইসহ অনেক যুবক ছেলে জনসভায় যোগদান করেছিল। জনসভায় যোগ দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুনে তারা জানতে পারে কিভাবে পাকিস্তানি অবাঙালি শাসকেরা বাঙালিদের শোষণ আর নির্যাতন করছে। তারা আরও জানতে পারে শেখ মুজিব উত্থাপিত ৬ দফা দাবির কথা, যা পূরণ হলে গ্রামের অসহায় নিঃস্ব কৃষকেরা একটু শান্তিতে থাকতে পারবে। জনসভার ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমানের এই কথা শোনার পর থেকে আজিম, আবুল, বয়জারসহ গ্রামের সব যুবক ছেলেরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হয়ে পড়ে। তখন থেকেই গ্রাম পর্যায়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠতে থাকে। মাঝে মাঝেই থানা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে আওয়ামী লীগের জনসভা হলে তারা গাঁয়ের সব যুবক ছেলেরা মিছিল করে গিয়ে সেই জনসভায় যোগদান করত। প্রতিদিন সন্ধ্যায় খেলার মাঠে লঠিলেখা শেষে নিজেদের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে আলাপ আলোচনা করতে শুরু হত। আর এ ভাবেই গ্রাম পর্যায়ে ধীরে ধীরে আওয়ামী লীগের শক্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে।
বিভিন্ন জনসভায় যোগ দিয়ে তারা যতটুকু জানতে পেরেছে পাকিস্তান রা ষ্ট্র সৃষ্টির ইতিহাস এবং পশ্চিম পাকিস্তানি অবাঙালি শাসকেরা বাঙালিদের উপর যে শোষণ ও নির্যাতন চালিয়েছে তার একটা চিত্র ওদের মনে আঁকা হয়ে গেছে।
তারা জানতে এবং বুঝতে পেরেছে, বাঙালিরা স্বাধীনচেতা জাতি। দেশের স্বাধীনতার জন্য বাঙালিরা যুদ্ধ করেছে মোঘলদের বিরুদ্ধে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে ফাঁসিকাষ্ঠে জীবন বিসর্জন দিয়েছে বাংলা মায়ের বীর সন্তান তিতুমীর, মাস্টার দা সূর্য সেন, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, ক্ষুদিরামসহ নাম না জানা শত বাঙালি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ সরকার দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের স্বাধীনতা প্রদান করে। পাকিস্তান রাষ্ট্রে দুটি প্রদেশ ছিল-পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান। দুই প্রদেশের মধ্যে যেমন ভৌগলিক দূরত্ব ১০০০ মাইল বা ১৫০০ কিলোমিটার, তেমনি তাদের ভাষা ও সংস্কৃতিও আলাদা। সম অধিকারের ভিত্তিতে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র গঠন করা হলেও, রাষ্ট্রক্ষমতা ক্রমে পশ্চিম পাকিস্তানি অবাঙালি শাসকগোষ্ঠির হাতে কুক্ষিগত হতে থাকে। পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি অবাঙালি শাসকেরা শাসনের নামে বাঙালিদের উপর শোষণ আর নির্যাতন করে এসেছে। সরকারি অফিস আদালত সবই পশ্চিম পাকিস্তানে হওয়ায় প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকা স্বত্বেও পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের পক্ষে ১০০০ মাইল পাড়ি দিয়ে সেখানে গিয়ে সরকারি চাকরি গ্রহণ করা কষ্টসাধ্য ছিল। অনেক কষ্ট স্বীকার করে পূর্ব পাকিস্তানের কোন নাগরিক সেখানে গিয়ে চাকরির আবেদন করলেও ভাষাগত বৈষম্যের কারণে তাদেরকে বঞ্চিত হতে হত। আর বাঙালিরা ভীতু জাতি- এই মিথ্যা অযুহাতে সেনাহাহিনীর চাকরি থেকেও তাদের বঞ্চিত করা হত। তাইতো দ্বিধাহীনভাবে বলা যায়, সরকারি ও সেনাবাহিনীর চাকরিতে ছিল পশ্চিমাদের একচেটিয়া দখল। শুধু তাই না সেই সময় দেশের একমাত্র রপ্তানি পণ্য পূর্ব পাকিস্তানের সোনালী আঁশ পাট রপ্তানির টাকায় পশ্চিম পাকিন্তানে গড়ে তোলা হচ্ছিল অফিস-আদালত, রাস্তা-ঘাট, কলকারখানা। যার ফলে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈকভাবে বাঙালিরা দিন দিন পিছিয়ে পড়ছিল। তাছাড়া পশ্চিম পাকিস্তান ছিল উঁচু উঁচু পাহাড়-পর্বতে ভরা। সেখানে কৃষিকাজ হত না বললেই চলে। আর সুজলা সুফলা পূর্ব পাকিস্তান ছিল কৃষি নির্ভর দেশ। এখানে ধান, পাট, আখ, পেঁয়াজ, রসুন, ডাল, তৈল বীজসহ প্রচুর পরিমান ফসল উৎপন্ন হত। এ অঞ্চলের ৮০ ভাগ মানুষের পেশা ছিল কৃষিকাজ। অথচ সারা বছর রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে কৃষক যে ফসল ফলাত বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় প্রতি বছর বন্যায় ফসল হারিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের গরিব কৃষকেরা দিন দিন আরও নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছিল।
পূর্ব পাকিস্তান যে শুধু অর্থনৈতিকভাবেই পিছিয়ে পড়ছিল তা কিন্তু নয়। দেশ স্বাধীনের মাত্র এক বছরের মাথায় ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের জাতির পিতা ও গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকা এসে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙালিদের মুখের ভাষা বাংলাকে সম্পূর্ণভাবে অবজ্ঞা করে দেশের মাত্র ১৭ শতাংশ মানুষের মুখের ভাষা উর্দ্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্র ভাষা হিসাবে ঘোষণা করে বলেন, ‘Urdu and urdu shall be state language of Pakistan’ । জিন্নাহ সাহেবের এই ঘোষণার সাথে সাথে সভায় উপস্থিত ছাত্র জনতা না না বলে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। শুরু হয় দেশের সংখ্যাগরিষ্ট বাঙালিদের মুখের ভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা করার দাবিতে আন্দোলন। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুযারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বের হওয়া ছাত্রদের মিছিলের উপর পুলিশ নির্মমভাবে গুলি বর্ষণ করে। সেই গুলিতে শহীদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ নাম না জানা অনেকে।
ষড়যন্ত্র যে এখানেই থেমে গেল, তা নয়। ১৯৫৪ সালে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে শাসক দল মুসলিম লীগকে পরাজিত করে মওলানা ভাষানীর নেতৃত্বে যুক্ত ফ্রন্ট জয়লাভ করে। এই নির্বাচনে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে শাসক দল মুসলিম লীগের জনবিচ্ছিন্নতা ও পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মনোভাব পরিষ্কার বোঝা যায়। এই পরাজয়কে শাসক দল যেমন মেনে নিতে পারেনি, তেমনি তারা কেন্দ্র কিংবা প্রদেশে কোথাও বাঙালিদের কর্তৃত্ব মেনে নিতে মানসিকভাবে রাজি ছিল না। নির্বাচনে জয়লাভের পর শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠন করা হয়। ৪ সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রিসভার অত্যতম সদস্য ছিলেন তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এই মন্ত্রিসভা বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যমত রাষ্ট্রভাষা ও ২১ ফেব্রুযারিকে শহীদ দিবস ও সরকারি ছুটি হিসাবে ঘোষণা করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সরকার গঠনের মাত্র ১৫ দিনের মাথায় পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রী পরিষদ বাতিল করে পূর্ব পাকিস্তানে কেন্দ্রের শাসন জারি করেন। তারপর কেন্দ্রীয় সরকারের চক্রান্তে যুক্তফ্রন্ট দলগুলোর মধ্যে শুরু হয় মতভেদ। এই সুযোগকে গ্রহণ করে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানে কেন্দ্রের শাসন বলবৎ থাকে। স্বাধীনতা লাভের ৯ বছরের মাথায় গভর্নর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ প্রথমবারের মত পাকিস্তানের সংবিধান প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং ১৯৫৬ সালে তা চালু হয়। সংবিধান অনুযায়ী পাকিস্তানকে ইসলামি প্রজাতন্ত্র এবং সরকারিভাবে প্রথমবারের মত বাংলা ও উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। নতুন সংবিধান অনুযায়ী ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত হন। তার অগণতান্ত্রিক আচরণ ও হস্তক্ষেপের ফলে ১৫৫৬-৫৮ সালের মধ্যে কেন্দ্রে তিনটি মন্ত্রীসভার পতন ঘটে। একই সময়ে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের মধ্যে গোলযোগে পরিষদ কক্ষের ভেতরে ডেপুটি স্পিকার সাহেদ আলী আহত হন এবং পরের দিন হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর ঘটনাকে অযুহাত হিসাবে গ্রহণ করে প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা বেসামরিক শাসনের অবসান ঘোষণা করেন।
১৯৫৮ সালের অক্টোবর মাসে প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা দেশে সামরিক শাসন জারি করার সাথে সাথে সংবিধান বাতিল, আইন পরিষদ ও মন্ত্রীসভা ভেঙ্গে দেওয়া হয়। সেনা প্রধান আইয়ুব খানকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জার এই গণতন্ত্রবিরোধী কার্যক্রমের প্রধান ইন্ধনদাতা ছিলেন সেনা প্রধান আইয়ুব খান। পরে উচ্চাভিলাসী আইয়ুব খান ইস্কান্দার মির্জাকে পদচ্যুত করে নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসাবে ঘোষণা করেন। ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার হীন উদ্দেশ্যে তিনি রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মানুষের বাক স্বাধীনতাকে সম্পূর্ণভাবে হরণ করেন এবং মৌলিক গণতন্ত্র নামের এক বিশেষ ধরণের গণতন্ত্র চালু করেন। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানিদের বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতিবাদে ১৯৬১ সালের শেষ দিকে পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৬২ সালের জানুয়ারি মাসে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে গ্রেফতার করা হয়। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে সারা পূর্ব পাকিস্তানে গণতন্ত্র উদ্ধারের লক্ষ্যে সরকার বিরোধী আন্দোলন আরও বেগবান হয়। একই বছরে পাকিস্তানের শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের লক্ষ্যে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। এই কমিশনের রিপোর্ট বাতিল এবং বিজ্ঞানভিত্তিক গণতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যাবস্থা প্রবর্তনের দাবিতে ছাত্র সমাজ ব্যাপক ছাত্র আন্দোলন শুরু করেন। এই আন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান ’রাজনৈতিক দলবিধি’ প্রবর্তন করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য হন।
রাজনৈতিক কর্মমাণ্ডের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর দেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৬৬ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ৬ দফা দাবিনাম পেশ করেন। ৬ দফার মূল দাবি ছিল প্রদেশগুলোর আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসন। পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম লাভের পর থেকেই পশ্চিমা অবাঙালি শাসকদের পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণের উপর শোষণ ও নির্যাতনের ফলে বাঙালিরা সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে একেবারে পঙ্গু হয়ে পড়েছিল। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন স্বায়ত্বশাসিত পূর্ব পাকিস্তানের শাসন ভার যদি বাঙালিদের হাতে আসে তাহলে হয়তোবা তারা সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে নিজেদের অত্বিত্ব রক্ষা করতে পারবে। তাইতো তিনি ৬ দফার মধ্যে আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেছিলেন। ৬ দফা দাবিনামা পেশ করেই তিনি ঘরে বসে থাকলেন না। বরং সারা পূর্ব পাকিস্তানের আনাচে-কানাচে ঘুরে সভা-সমাবেশ করে দেশের মানুষের সামনে পশ্চিম পাকিস্তানিদের শোষণের চিত্রসহ ৬ দফা দাবিনামার যোক্তিকতা তুলে ধরতে শুরু করলেন। দেশের অবহেলিত জনগণ পাকিস্তানিদের শোষণ ও নির্যাতনের যাতাকল থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে আওয়ামী লীগের পতাকা তলে একত্রিত হতে শুরু করলেন। জনসম্পৃক্তার সাথে সাথে শেখ মুজিবের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে দেখে তাকে বাগে আনার জন্য প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান দেশের বিভিন্ন স্থানে তার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলখানায় আটক করতে শুরু করলেন। কিন্তু কোন জেল-জুলুমের ভয় দেখিয়ে কোনমতেই তাকে দমানো গেল না।