চুলের বৃদ্ধিতে নাভিতে তেল দিন!

তেল মালিশ বা ব্যবহারের বহুবিধ উপকারের বিষয়ে সবারেই কম-বেশি জানা আছে। শরীরের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ নাভি। প্রায়ই নানা স্বাস্থ্য সমস্যার সমাধান হিসেবে অনেকেই নাভিতে তেল দিতে বলেন। প্রাচীন আয়ুর্বেদশাস্ত্রে নাভিতে তেল মালিশের নানা উপকারের উল্লেখ আছে। নাভিকে শরীরের সেই অলৌকিক বিন্দু হিসেবে ধরা হয়, যার মাধ্যমে নানা ছোট-বড় রোগ থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়ও নাভির সাহায্যে শরীরের নানা সমস্যা দূর করার কথাও রয়েছে। এ কারণেই ঠোঁট ফাটা থেকে শুরু করে বাত, পিত্ত দোষ বা হজমে সমস্যায় নাভিতে তেল দিতে বলা হয়। এমনকি চুলের বৃদ্ধিতেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে নাভিতে তেল মালিশ করা।

এই শাস্ত্র মতে, নাভি হলো এমন একটি স্থান, যেখানে শরীরের সব শক্তি সঞ্চিত থাকে। তাই শরীরের এই অংশটি মালিশ করলে নানা ধরনের উপকার পাওয়া যায়। আয়ুর্বেদশাস্ত্র বলছে, প্রতিদিন শরীরে তেল মাখুন আর নাই মাখুন কিন্তু নাভিতে তেল দিতেই হবে। তাতে নাকি শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, নাভির পিছনে পেকোটি গ্রন্থি নামক একধরনের গ্রন্থি রয়েছে। এটি শরীরের স্নায়ু ও অঙ্গগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত। শরীরের সমস্যা দূর করতে পেকোটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। পেকোটি পদ্ধতি অর্থ নাভিতে তেল দেওয়া।

আয়ুর্বেদ মতে, নাভিতে তেল লাগালে শুধু শরীরকে বিবিধ রোগ থেকে দূরে রাখা যায় এমনটা নয়। এই পদ্ধতি মানলে মাঝবয়সেও তারুণ্য ধরে রাখতে পারবেন আপনি।

নাভিতে তেল মালিশের উপকারিতা— 

হজম শক্তি বাড়ায় : নাভিতে তেল মালিশ করলে পেটে রক্তচলাচলের পরিমাণ বাড়ে। ফলে হজমশক্তি বাড়ে। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তাদেরও উপকার হয়।

মন শান্ত করে : নাভিতে তেল মালিশে মন শান্ত হয়। এমনও বলা হচ্ছে আয়ুর্বেদে। মনসংযোগ বাড়ে, আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ আসে। উদ্বেগ কমে।

নাভি পরিষ্কার থাকে : নাভিতে যদি নিয়মিত তেল দেওয়া হয় তাহলে নাভি পরিষ্কার থাকে। কারণ দেহের একটি ছোট্ট অংশ নাভি। এই অংশের গঠনও অত্যন্ত জটিল। তাই তেল ছাড়া নাভির ময়লা পরিষ্কার করা যায় না। তেল দিলে দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

চুলের বৃদ্ধি : প্রায় ৭২ হাজার শিরা-উপশিরা নাভির সঙ্গে যুক্ত। তার অনেকগুলিই শেষ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে মাথার ত্বকে। আয়ুর্বেদ বলছে, নাভিতে তেল মালিশ করলে এই শিরা-উপশিরার মাধ্যমে চুলের পুষ্টি হয়। ফলে চুলের বৃদ্ধি হয় দ্রুত।

পেটের সমস্যা দূর করে : নাভিতে নিয়মিত তেল দিলে পেটের সমস্যা দূর করে বলে প্রচলিত ধারণা রয়েছে। আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞদের কথায়, পেটের সমস্যা সর্ষের তেলের সঙ্গে সামান্য হলুদ মিশিয়ে নাভিতে দিতে তা অনেক বেশি কার্যকর হয়।

যৌনক্ষমতা : অনেকের মতে, নারী কিংবা পুরুষের যে কেউই যদি নাভিতে নিয়মিত নিম তেল বা নারকেল মালিশ করেন, তা হলে যৌনক্ষমতা বাড়ে।

মাসিকের ব্যথা কমায় : মাসিকের ব্যথা কমাতে নাভিতে তেল দিলে সাময়িক স্বস্তি পাওয়া যায়। পেটে ব্যথা অনেকটা কমে যায়।

গাঁটের ব্যথা কমে : এই জাতীয় ব্যথা কমানোর দাওয়াই হিসেবে আয়ুর্বেদে বলা হয়েছে নাভিতে তেল মালিশ করার কথা। এমনও উল্লেখ রয়েছে, এতে নাকি হাড়ের ঘনত্ব বাড়ে।

চোখের সমস্যা কমে : সারা দিন কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে থাকা বা বই পড়ার মতো অভ্যাসের ফলে চোখ শুকিয়ে যেতে পারে। চিকিৎসার পরিভাষায় যাকে বলে ‘ড্রাই আইজ’। নাভিতে নিয়মিত তেল মালিশে এই সমস্যাও কমতে পারে।

উজ্জ্বল ত্বক : নাভিতে নিয়মিত অলিভ তেলের মালিশ ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে ত্বকে রক্ত চলাচলের পরিমাণ বাড়ে। কমে ত্বকে দূষিত পদার্থের পরিমাণ। তাতেই উজ্জ্বল হয় ত্বক।

নাভিতে বিশেষ তেল বিশেষ নিয়মে ব্যবহার করতে হবে। একটি ছোট পাত্রে নারকেল আর নিম তেল ভালো করে মিশিয়ে নিন। ঘুমানোর আগে দুই ফোঁটা তেল নাভিতে দিন। এভাবে রেখে দিন। এরপর ২ থেকে ৩ মিনিট আঙুলের সাহায্যে আলতো করে মালিশ করুন।

এই দুটো তেল ত্বককে ভেতর ও বাইরে থেকে উজ্জ্বল করতে কার্যকর। আয়ুর্বেদ অনুযায়ী, নিম ও নারকেল তেল ত্বককে মসৃণ রাখে এবং পরিষ্কার করতে কাজ করে। ঘুমানোর আগে নাভিতে নারকেল ও নিমের তেলের মিশ্রণ লাগালে ব্রণ, শুষ্ক ও প্রাণহীন ত্বক থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এই দুটো তেলের অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল গুণ রয়েছে। তাই ভেতর থেকে ফুটিয়ে তোলে তারুণ্য।

শেয়ার করুন:

Recommended For You