আয়ের ১০ শতাংশই ব্যয় হয় ধূমপানে: বৈধ বয়স বাড়াবে ব্রিটেন

ধূমপানের জন্য প্রতিবছর বৈধ বয়স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। গতকাল বুধবার ম্যানচেস্টারে কনজারভেটিভ পার্টির এক সম্মেলনে সুনাক এ ঘোষণা করেন। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে বর্তমানে সিগারেট কেনার বৈধ বয়স ১৮ বছর হলেও প্রতিবছর এই ন্যূনতম বয়স বাড়তে থাকবে। ফলে যাদের ১৪ বছর বয়স, তারা আর কখনোই সিগারেট কিনতে পারবে না। যেখানে ২০৩০ সালের পর যুক্তরাজ্যে ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে।

বিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটেন সরকার ইলেকট্রনিক সিগারেট বা ভেপ, এদের মোড়ক এবং ফ্লেভার সরবরাহের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের পরিকল্পনা করছে। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে এ প্রস্তাব গৃহীত হলেই সিদ্ধান্তটি কার্যকর করা হবে।

সুনাক এ বিষয়ে বলেন, ‘উন্মুক্ত ভোট ব্যবস্থায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। রাজনীতিকদের “বিবেকের বিষয়” হিসেবে বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হবে। ধূমপানের কারণে প্রতি বছর ১ হাজার ৭০০ কোটি পাউন্ড খরচ হয়, এটি জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। এ পদক্ষেপটি যুক্তরাজ্যকে ২০৩০ সাল নাগাদ ধূমপানমুক্ত হতে সহায়তা করবে।’

বহুজাতিক তামাকজাত পণ্যের প্রতিষ্ঠান ইম্পিরিয়াল ব্র্যান্ডস পিএলসি যুক্তরাজ্যের সর্ববৃহৎ সিগারেট বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান। চলতি বছর লন্ডনে এ প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার দর ৪ দশমিক ৩ শতাংশ পড়ে গেছে। আরেক বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো পিএলসির বেশির ভাগ আয় আসে ব্রিটেনের বাইরের বাজার থেকে। এ প্রতিষ্ঠানটিরও শেয়ার দর ১ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে।

কার্যকর হলে এটি হবে বিশ্বের কঠোরতম ধূমপান বিরোধী আইনগুলোর একটি। যদিও এ ধরনের আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য প্রথম না। গত বছর নিউজিল্যান্ড ২০০৮ সালের পর জন্মানো কোনো ভোক্তার কাছে সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধে আইন পাস করে। যুক্তরাজ্যে বর্তমানে সিগারেট কেনার বৈধ বয়স ১৮।

তামাকদ্রব্যের প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে ভেপ— তামাক বাষ্পীভূত করার মতো ডিভাইস এবং মুখে খাওয়ার নিকোটিনের মতো বিকল্প তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সুনাক বলেন, ‘ভেপ ব্যবহার মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আগেই যুক্তরাজ্যের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যেখানে যুক্তরাজ্যে এখন অপ্রাপ্তবয়স্কদের পাঁচজনের একজনই ভেপের মতো পণ্য ব্যবহার করে।’

সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গকে দেওয়া ইম্পিরিয়াল ব্র্যান্ডের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সময়ের সঙ্গে সিগারেটের বৈধ বিক্রি বন্ধের এ প্রস্তাব অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতি বয়ে আনতে পারে। ভেপিংয়ের ওপর কার্যকর নীতি তৈরি করতে তারা সরকারের সঙ্গে কাজ করতে রাজি, যেন অপ্রাপ্তবয়স্কদের ধূমপানের অভ্যাস গড়ে ওঠা প্রতিরোধ করা যায়।

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বলছে, তারা সরকারের ধূমপানের হার কমানোর লক্ষ্যকে সমর্থন করে। তবে এ পদক্ষেপটি তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতিগুলো প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে পুলিশের জন্য বাড়তি বোঝা হতে পারে।

গত বছর ধূমপায়ীদের ওপর সরকার একটি জরিপ প্রতিবেদন তৈরি করে। এ প্রতিবেদন অনুসারে, করোনা মহামারির সময় ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী ধূমপায়ীর সংখ্যা এক–চতুর্থাংশ থেকে বেড়ে এক–তৃতীয়াংশ হয়েছে। জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের ৯ জনের একজনই ধূমপান করেন।

প্রতিবেদন অনুসারে, যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা অঞ্চলগুলোতে ধূমপানের পেছনে ব্যয় আয়ের তুলনায় অস্বাভাবিক। উত্তর–পূর্ব ইংল্যান্ডের গড় ধূমপায়ীরা তাঁদের আয়ের ১০ শতাংশেরও বেশি তামাকের পেছনে ব্যয় করেন।

সায়েন্স মিডিয়া সেন্টারে প্রকাশিত বিবৃতিতে ক্যানসার রিসার্চ ইউকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিকেলে মিচেল বলেন, ‘তামাকজাত পণ্য বিক্রিতে বয়স বাড়ানোর নীতি প্রথম ধূমপানমুক্ত প্রজন্ম তৈরির জন্য একটি জরুরি পদক্ষেপ।’

শেয়ার করুন:

Recommended For You