বাংলাদেশের স্বপ্নের পরম্পরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, মুক্তির মহানায়ক, স্বাধীনতা নামক মহাকাব্যের অমর কবি, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত ও আদর্শের সুযোগ্য উত্তরসূরি। তিনি বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার শেষ আশ্রয় স্থল। সংকটে তিনি পরিত্রাতা। সংগ্রামে তিনি অবিচল আস্থার মূর্ত প্রতীক।
বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকান্ডের পর শেখ হাসিনা চরম দুঃসময়ে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছেন। গণতন্ত্রের সংগ্রামে দীর্ঘ পথ হেঁটেছেন। বারবার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। আওয়ামী লীগকে জনপ্রিয় দল হিসাবে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এনেছেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির পাশাপাশি সব রকম শোষণ, বঞ্চনা, অন্যায়, অবিচার, জুলুমের বিরুদ্ধে সবসময় রাজনৈতিকভাবে সোচ্চার, প্রতিবাদী ভূমিকা রেখে এসেছেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিজয় লাভ করে ২১ বছর দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসেন। সরকার গঠন করে শেখ হাসিনা যে অসম্ভব কাজ করেছেন ১৫ আগস্টের ঘাতকদের বিচার এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন বাংলাদেশের গণতন্ত্র বিকাশে তার কোনো বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার সততা, নিষ্ঠা, ঐকান্তিকতা, যুক্তিবাদী মানসিকতা, দৃঢ় মনোবল, প্রজ্ঞা ও অসাধারণ নেতৃত্ব বাংলাদেশকে বিশ্ব পরিমন্ডলে অন্যরকম উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং তিনি বিশ্বনন্দিত নেত্রী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
শেখ হাসিনার শাসনামলকে মূলত চার ভাগে ভাগ করা যায়। জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার, সামরিক ও আধাসামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম-সফলতা। জাতির পিতার হত্যাকারী ও মুক্তিযুদ্ধের ঘাতক যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা এবং অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে উন্নয়নের সড়কে নিয়ে আসা।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলার। মেট্রোরেল ও পদ্মা সেতু উদ্বোধন দুটিই উন্নয়নের মাইলফলক। বিদ্যুতের উৎপাদন ২৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা ও প্রায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন, রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে আনয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, গড় আয়ু প্রায় ৭৩ বছরে উন্নীত করা, জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন, সাক্ষরতার হার ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত করা, বছরের প্রথম দিনে শিক্ষার্থীর হাতে বিনামূল্যে নতুন বই পৌঁছে দেওয়া, মাদ্রাসা শিক্ষাকে মূলধারায় সম্পৃক্ত করা ও স্বীকৃতিদান, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন ও চিকিৎসাব্যবস্থার আধুনিকায়ন, প্রতি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ, নারীনীতি প্রণয়ন ও নারীর ক্ষমতায়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও আইসিটি খাতে বিপ্লব সাধন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় অসামান্য সাফল্যে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে ও বিশ্বে পঞ্চম স্থানে আসীন করা, দেশকে উন্নয়নশীল বিশ্বের কাতারে শামিল করাসহ বাংলাদেশের অসংখ্য কালোত্তীর্ণ অর্জনের কারিগর সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা।
গত ১৪ বছরে দেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনায় আছে বলেই এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত-স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ে কাজ করছে। এজন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১ প্রণয়ন করে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ধারাবাহিকভাবে সরকার পরিচালনায় আছে বলেই এসব অর্জন সম্ভব হয়েছে। সরকারের সময়ে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। অনেক বাধাবিপত্তি পেরিয়ে গত বছরের জুন মাসে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করা হয়েছে। দেশের অনেক মহাসড়ক চার বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত করা হয়েছে। অন্যগুলোর কাজ চলছে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল এবং বিমানবন্দর-কুতুবখালী এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ খুব শিগগিরই যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে এবং স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে এখন স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-২ এর জন্য কাজ চলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন রক্ষা পায় এবং উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে, সে জন্য ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রণয়ন করা হয়েছে।
বর্তমান সরকারের আমলে পরিবহণ ও যোগাযোগ খাত উন্নয়নের বড় ধরনের একটি বিপ্লব হয়েছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু গতবছরের ২৫ জুন খুলে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল চালু হয়েছে গত বছর ২৮ ডিসেম্বর। এ ছাড়া সারা দেশের সড়ক ও মহাসড়ক নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ স্থাপনের জন্য চলতি বছরে একসঙ্গে চালু হয় ১০০টি সেতু ও দুই হাজার কিলোমিটারের ১০০ সড়ক। সম্প্রতি চালু হয়েছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্প। পাশাপাশি বর্তমান সরকারের অন্যান্য মেগা প্রকল্প কর্ণফুলী টানেল, ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ, বাস রেপিড ট্রানজিট (বিআরটি) সহ বেশিরভাগ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। মোদ্দাকথা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল রূপকার।
শান্তি, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত শেখ হাসিনা একজন অসাধারণ লেখক এবং সম্পাদকও। প্রথম বই ওরা টোকাই কেন (১৯৮৯)-এর ধারাবাহিকতায় একে একে প্রকাশিত হয়েছে শেখ হাসিনার আরও কয়েকটি মূল্যবান বই, যেমন বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র, দারিদ্র্য দূরীকরণ: কিছু চিন্তাভাবনা, বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নয়ন, বিপন্ন গণতন্ত্র লাঞ্ছিত মানবতা, সহেনা মানবতার অবমাননা, সাদাকালো, শেখ মুজিব আমার পিতা ইত্যাদি। দুই খণ্ডে বাংলায় ও ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর রচনাসমগ্র এবং নির্বাচিত প্রবন্ধ। রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যতটা আলোচিত হয়েছেন লেখক শেখ হাসিনাও ঠিক ততটা আলোচনা পাওয়ার দাবিদার। আমরা মনে করি তাঁর সংগ্রামী জীবন ও রাজনীতি যেমন গবেষণার বিষয় তেমনি তাঁর লেখকসত্তাও গভীর গবেষণার দাবি রাখে।
আপনারা জানেন বাংলার মানুষের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক এবং সামাজিক মুক্তির লক্ষ্যে নিরলস সংগ্রামের পাশাপাশি এদেশের সাংস্কৃতিক জাগরণেও শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে চলেছেন। শিক্ষাজীবনে তিনি বাংলা সাহিত্যের ছাত্রী আর তাঁর নিজ রাজনৈতিক জীবনেও রয়েছে সাহিত্যের নিবিড় প্রভাব। আমাদের লেখক-সাহিত্যিক এবং সংস্কৃতিজনের যে কোনো প্রয়োজনে, দুর্যোগে তিনি পাশে দাঁড়ান। তাঁর প্রেরণাতেই করোনাকালীন ভয়াবহ দুঃসময়ে সারাদেশে দুঃস্থ-কবি লেখক-শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীদের পাশে সহায়তার হাত বাড়িয়েছি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
তিনি যেমন সাহিত্য-সংস্কৃতিকে তাঁর আপন ভুবন মনে করেন তেমনি এদেশের কবি-লেখক-শিল্পীরাও শেখ হাসিনাকে তাঁদের আপনজন হিসেবে বরণ করে নিয়েছেন। বাংলা সাহিত্যের স্মরণীয় বহু কবিতা, কথাসাহিত্য ও অন্যান্য রচনায় শেখ হাসিনা ভাস্বর হয়েছেন অনন্য উচ্চতায়। আমাদের প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শেখ হাসিনার বইয়ের ভূমিকায় লিখেছিলেন-“গভীর এক বেদনাবোধ থেকে শেখ হাসিনা অবলোকন করেছেন পরিপাশ্বর্কে। সেই বেদনাবোধ ছড়িয়ে আছে তাঁর রচনার অধিকাংশ স্থানে।
আমরা সবাই জানি কী তাঁর বেদনা; কী তাঁর শোক। বঙ্গবন্ধুসহ পুরো পরিবারকে হারিয়ে যিনি সমগ্র দেশবাসীকে বরণ করে নিয়েছেন আপন পরিবার হিসেবে; তাঁর পক্ষেই সম্ভব অসাধারণ ও অতুলনীয় ত্যাগ, শ্রম, মেধা ও দক্ষতায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশকে উন্নতি ও সমৃদ্ধির দিকে এভাবে অব্যাহত এগিয়ে নেয়া, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
পরিশেষে বলতে হয়, আমাদের ক্ষুধা-দারিদ্র্য-মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ-সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদের নানামুখী ভয়-ভীতি-বিপদ থেকে উদ্ধার করে অনন্ত অভয় পথে, অন্ধকার থেকে আলোকিত অভিযাত্রার দিকে যিনি নিয়ে চলেছেন; তিনি আর কেউ নন- শেখ হাসিনা তার নাম।
শুভ জন্মদিন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
লেখক : গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী