প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করি। কোনো মানুষ দরিদ্র থাকবে না। নানাভাবে তাদের এগিয়ে নেওয়ার কাজ করছি।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গণভবনে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছে খালেদা জিয়া। আজ কৃষকের ঘরে সার পৌঁছে যায়। তাদের কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়েছি। এটা দিয়ে কৃষি উপকরণ কিনতে পারে। ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। এর মাধ্যমে ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের কাছে পৌঁছে যায়। জেলেদের ৪০ কেজি করে চাল দিই।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ৯৬ সালে ১৬০০ মেগাওয়াট ছিল। আমরা ৪ হাজার তিনশ করে যাই। পরে বিএনপির আমলে কমে গেছে সেটা। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর এখন ২৫ হাজার মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করি। শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পায়। শিক্ষার্থীদের বই, বৃত্তি, উপবৃত্তি দিচ্ছি। ডিজিটাল সেন্টার করে দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল সেন্টার করে দিচ্ছি। ইনকিউবেটর, হাইটেক পার্ক করে দিয়েছি। আজকের বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ। ৭৩ শতাংশ লোক ইন্টারন্টে ব্যবহার করে। ঘরে ঘরে মোবাইল ফোন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, স্বামী পরিত্যক্তাদের ভাতা দিচ্ছি। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের স্বীকৃতি ও তাদের ভাতাও দিচ্ছি। ৫ কোটি মানুষের পারিবারিক কার্ড করে দিয়েছি। এটা দিয়ে স্বল্পমূল্যে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারে।
তিনি বলেন, ১৮ জন কৃষককে গুলি করে হত্যা করেছে খালেদা জিয়া। আজ কৃষকের ঘরে সার পৌঁছে যায়। তাদের কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়েছি। এটা দিয়ে কৃষি উপকরণ কিনতে পারে। ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। এর মাধ্যমে ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের কাছে পৌঁছে যায়। জেলেদের ৪০ কেজি করে চাল দিই।
ডেঙ্গু প্রতিরোধ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মশা মেরে শেষ করা যাবে না। ডেঙ্গু প্রতিরোধে এবং মশার হাত থেকে বাঁচতে নিজেদের সচেতন হতে হবে। মশারি ব্যবহার করতে হবে। ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে।
আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসলে দেশে কোনও কাঁচা রাস্তা থাকবে না বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ধারাটা বজায় রাখতে পেরেছি, যার জন্য গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়নটা করতে পেরেছি। আমি জানি, এখনও অনেক গ্রামে কাঁচা রাস্তা আছে। সেগুলো আল্লাহর রহমতে থাকবে না। আবারও যদি জনগণের সেবা করবার সুযোগ পাই, নিশ্চয়ই আমরা সেগুলোও করে দেবো। কারণ, প্রত্যেকটা গ্রাম শহরের মতো করে গড়ে উঠবে।
আমার গ্রাম, আমার শহর গঠনে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে রাস্তা-ঘাট, পুল-ব্রিজ… আজকে যে পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের অভিযোগ দিয়েছিল, চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম নিজের অর্থে করবো, সেই চ্যালেঞ্জ মাথায় রেখে নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু করেছি। পদ্মা রেললাইনও করে দিয়েছি। এখন আর যোগাযোগের অসুবিধা নেই।
জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা তৃণমূলের মানুষের ভোটে নির্বাচিত, জনগণের সেবক। জনগণের কল্যাণে কাজ করা— এটা আপনার আমার সবার দায়িত্ব। এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে মানুষের সেবা করে, মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করে, আপনারা এগিয়ে যাবেন। কারণ, একবার যখন মানুষ আপানাদের ভোট দিয়েছে, তারা যেন আবারও ভোট দিতে পারে, সেই আস্থা-বিশ্বাস আপনাদের অর্জন করতে হবে।
তিনি বলেন, আজকের উন্নয়নটা দীর্ঘদিনের কষ্টের ফসল। এটা যেন আর নষ্ট না করতে পারে। কারণ, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ পর্যন্ত যতটা এগিয়ে ছিলাম, বিএনপি-জামায়াত জোট সেটা পিছিয়ে দিয়েছিল। ২০০৯-২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা, এটা যেন অব্যাহত থাকে।
জনগণের কাছে আমার এটাই আহ্বান থাকবে— জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলে এসডিজি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উচ্চাসনে নিয়ে গিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়নি, ব্যর্থ হবে না, ব্যর্থ হতে দেবো না।
মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের দাঁড়াতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কেউ যেন মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদে সম্পৃক্ত না হয়, সে দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। সরকার মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডাসহ সব ধর্মীয় প্রার্থনালয় সংস্কারে অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
দেশে প্রথমবারের মতো উদযাপিত হচ্ছে জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস। এ উপলক্ষে সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর, পৌর মেয়র ও কাউন্সিলর, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ প্রায় আট হাজার জনপ্রতিনিধি অংশ নেন। তবে সাময়িক বরখাস্ত ও মামলার আসামিদের ডাকা হয়নি।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা সারাদেশ থেকে আসা জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা তৃণমূল পর্যায়ের জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। আপনাদের উপস্থিতিতে গণভবনের মাটি ধন্য হয়েছে। তৃণমূল মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে আপনারা এখানে এসে বক্তব্য দিয়েছেন, আপনাদের আমি ধন্যবাদ জানাই।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, নারায়ণগঞ্জের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, খুলনার মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, সিলেটের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীসহ বিভিন্ন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা।