গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আইনের শাসন এবং স্বকীয় চিন্তাধারার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিতে বৈশ্বিকভাবে তার অবস্থান সুদৃঢ় করছে বলে মন্তব্য করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ।
রবিবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নৈশভোজে এ কথা বলেন তিনি। তার সম্মানে এই ভোজের আয়োজন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই সফরে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দ্বার উন্মোচন হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ। খবর প্রবা।
মাখোঁ বলেন, ‘আগামীকাল আমি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শনে যাচ্ছি, যেখানে আপনার বাবার স্মৃতি রয়েছে, যাঁর নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীনতা পেয়েছে। আমি মনে করি, এ দেশের শহীদদের প্রতি সম্মান জানানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অর্জনগুলো স্বীকার করা।’
অনুষ্ঠানের শুরুতে ঢাকায় উষ্ণ অর্ভ্যথনা জানানোর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। বক্তব্যের একপর্যায়ে ভাঙা ভাঙা বাংলায় তিনি বলে ওঠেন, ‘চিরদিন তোমার আকাশ তোমার বাতাস আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি’। তখন করতালি দিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অন্যরা।
এর আগে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর জোট জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষ করে নয়াদিল্লি থেকে ঢাকায় পৌঁছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। রাত ৮টা ১০ মিনিটে একটি বিশেষ ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন তিনি। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে মাখোঁকে লালগালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
বিমানবন্দর থেকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সদ্য চালু হওয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পাড়ি দিয়ে হোটেলে পৌঁছেন। কোনো বিদেশি অতিথি হিসেবে তিনিই প্রথম দ্রুতগতির এই উড়ালপথ ব্যবহার করলেন।
প্রায় তিন দশক পর বাংলাদেশ সফর করছেন কোনো ফরাসি প্রেসিডেন্ট। এর আগে ১৯৯০ সালে ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁ বাংলাদেশে আসেন। ২০২১ সালে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে দ্বিপক্ষীয় সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্টকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান। সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এমানুয়েল মাখোঁ ঢাকা সফরে এলেন।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, এমানুয়েল মাখোঁ বাংলাদেশে ১৯ ঘণ্টা অবস্থানকালে ব্যস্ত সময় পার করবেন। এ সময় তিনি রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি বাংলার পরিবেশ ও বাঙালি সংস্কৃতি উপভোগ করবেন।
সফরের দ্বিতীয় দিনে আজ সোমবার সকালে প্রেসিডেন্ট মাখোঁ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করবেন তিনি। সেখান থেকে তিনি যাবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন। এ সময় কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। দুই নেতার বৈঠকে রোহিঙ্গা কিংবা জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হতে পারে। পাশাপাশি বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের বিষয়টিও প্রাধান্য পাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সবশেষে একটি যৌথ প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ ছাড়া দুপুর ১২টার দিকে ঢাকায় ফরাসি দূতাবাসে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন মাখোঁ। সেখানে মধ্যাহ্ন ভোজেও অংশ নেবেন তিনি। সফর শেষে বেলা আড়াইটার দিকে তার ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে। বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে এমানুয়েল মাখোঁর এ সফরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এতে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের পাশাপাশি বিনিয়োগ সম্ভাবনা ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বাড়বে বলে তারা মনে করেন।