
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, সারাদেশে ৪৩ লক্ষ মামলা পেন্ডিং রয়েছে। মাত্র ১৮শ’ বিচারক দিয়ে এতগুলো মামলার বিচারকাজ সম্পন্ন করা সহজ কথা নয়। মামলার জট কমিয়ে জনগণ যাতে সহজে ন্যায়বিচার পায় সেজন্য বিচারক ও আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বর্তমানে মামলা নিষ্পত্তির হার ১২৫ শতাংশে উন্নীত করা গেলে কয়েক বছরের মধ্যে মামলাজট কমানো সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।
বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ৬তলা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ আমানুল্লাহ আল হাদীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী তিনি তার বক্তবে আরও বলেন, ১৯৭১ সাল আমাদের গৌরবের। একাত্তরের চেতনাকে আমাদের মনে-প্রাণে ধারণ করতে হবে। একাত্তরের চেতনা ধারণ করতে না পারলে ত্রিশ লক্ষ শহীদের সাথে বেইমানি করা হবে। আমরা যদি আমাদের দেশকে উন্নত করতে পারি, তবে আমাদের অন্যদেশে কাজ করতে যেতে হবে না। আমি একদিনে প্রধান বিচারপতি হইনি। এর পেছনে অনেকের অবদান রয়েছে। সবচেয়ে বেশি অবদান সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের শিক্ষকদের। বাবা-মা আমাদের জন্ম দিয়েছেন তবে শিক্ষকদের অবদান আমাদের জীবনে অনস্বীকার্য। সততা ও নৈতিকতা ছাড়া জীবনে সফলতা পাওয়া যায় না।
সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. অলিউর রহমানের সঞ্চালনায় এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মো.সাইফুর রহমান, সদর-০২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, জেলা ও দায়রা জজ চাঁদ মো. আবদুল আলিম আল রাজী, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির , পুলিশ সুপার কাজী মনিরুজ্জামান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বাবু প্রমুখ।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুন্সি মো. মশিয়ার রহমান, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ এস এম আফজাল হোসেন, সাবেক অধ্যক্ষ শেখ আব্দুল ওয়াদুদ, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রিংকন বিশ্বাস প্রমুখ।
এর আগে প্রধান বিচারপতি সাতক্ষীরা আইনজীবি ভবনে ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নামে একটি বিশ্রামাগার উদ্বোধন করেন।
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট বৃহস্পতিবার ছিল প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দীকির বিচারিক জীবনের শেষ কর্মদিবস। ৬৭ বছর পূর্ন করে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর তিনি অবসরে যাবেন। প্রধান বিচারপতি সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ১৯৭৫-৭৬ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। এখান থেকেই তিনি আইএসসি (বর্তমানে ইন্টারমিডিয়েট) পরীক্ষায় পাশ করেন। ১৯৫৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্মগ্রহন করেন হাসান ফয়েজ সিদ্দীকি।
তার পিতা আব্দুল গফুর মোল্লার সরকারি চাকুরির সুবাদে তিনি দীর্ঘকাল সাতক্ষীরায় থেকেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে ১৯৮১ সালের ২১ আগস্ট কুষ্টিয়া জেলা আদালতে আইনজীবি হিসাবে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট এবং ১৯৯৯ সালের ২৯ মে আপিল বিভাগের আইনজীবি হিসাবে কাজ করার সুযোগ পান। ২০০৯ সালের ২৫ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগে এবং ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ আপিল বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসাবে নিয়োগ পান তিনি। এরপর ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসাবে তিনি রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের কাছ থেকে শপথ বাক্য পাঠ করেন।