উখিয়ার শ্রম বাজার দখলে নিচ্ছে রোহিঙ্গারা

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রচণ্ড চাপের মুখে কক্সবাজারের উখিয়ার স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা। হুমকির মুখে পড়ছে উখিয়ার শ্রমবাজার। রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে স্বল্পমূল্যে শ্রম দেয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকে।

মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং) উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, রিক্সা, ব্যাটারি চালিত টমটম , ব্যাটারি চালিত মিনি টমটম,মাহিন্দ্র গাড়ীর চালকের মধ্যে নতুন করে বেড়েছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা। এছাড়াও খাবার হোটেল, আবাসিক হোটেল, কৃষি কাজ, গ্রামীণ অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ, জেলেদের ফিশিং বোট, ব্যবসা বানিজ্য দখলে নিয়েছে রোহিঙ্গারা।

কুতুপালং এলাকার আলী মিয়া নামের এক স্থানীয় দিনমজুর বলেন, দিনে এনে দিনে খাওয়া বুভুক্ষ মানুষ আমরা। একদিন কাজ না করলে বা কাজ না পেলে পরিবারের সবাইকে না খেয়ে থাকতে হয়। আগের মত মানুষের বাসায় কাজ পাই না। সবাই রোহিঙ্গা নিয়ে কাজ সেরে নিচ্ছে। রোহিঙ্গাদের মজুরি অপেক্ষাকৃত কম হবার কারণে তাদেরকে কাজে নিয়োগ করে থাকে বেশি। মজুরি একটু বেশি বলে স্থানীয় শ্রমিকদের এখন কেউ নিতে চায় না। এদিকে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন এনজিও থেকে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সামগ্রী পেয়ে থাকে। সাথে উপরি হিসেবে দৈনিক কাজ করেও টাকা আয় করছে। কিন্তু স্থানীয়রা না পায় কাজ, না পায় ত্রাণ। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের কী অবস্থা হবে?

জানা যায়, বেশিরভাগ শিশু কিশোর যুবকেরা ক্যাম্পের বাইরে এসে চায়ের দোকানে, সমুদ্রে মাছ ধরা, কৃষি কাজে শ্রমিক হিসাবে ব্যবহার ও ওয়ার্কশপে কাজ করছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, পাহাড়ে, নদীতে, সাগরে, কর্মক্ষেত্রে শুধু রোহিঙ্গা আর রোহিঙ্গা। শ্রমবাজারসহ চারদিকে রোহিঙ্গাদের বিচরণ। অনেকেই অটোরিকশা চালাচ্ছে। তারা অর্ধেক ভাড়ায় যাত্রী পরিবহন করায় বেকার বসে থাকতে হচ্ছে স্থানীয়দের।

দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়দের অধিকার আদায়ে আন্দোলন করছে পালংখালী অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি। এ কমিটি আহবায়ক রবিউল হোছাইন বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের বিভিন্ন এনজিও সংস্থায় শিক্ষিতদের চাকরি দেয়ার ব্যাপারে মন্ত্রী, এমপিসহ উর্ধতন মহলের নির্দেশনা থাকার সত্ত্বেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কর্মরত বিভিন্ন এনজিও সংস্থা তা উপেক্ষা করছে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করতে আসা বেশিরভাগ এনজিও কোন নিয়মনীতি না মেনে মনগড়া কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব এনজিওতে স্থানীয় দক্ষ, অভিজ্ঞ ও যোগ্যতাসম্পন্ন লোকদের চাকরি না দিয়ে কম দামে রোহিঙ্গাদের নিয়োগ ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বহিরাগত লোকজনদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।

উখিয়ার হাতিমোরা এলাকার মো. করিম বলেন, কম বেতন পেলেও রোহিঙ্গা কাজ করতে চলে যায়। এ কারণে আমরা কাজ পাচ্ছি না।

আক্ষেপ করে পাতার বাড়ি এলাকার শিমুল বড়ুয়া বলেন, যেখানে একজন শ্রমিকের দিনে মজুরি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা সেখানে রোহিঙ্গারা ৩০০ টাকায় কাজ করতে চলে যাচ্ছে।

প্রতিদিন একাধিক নারী-পুরুষকে চেকপোস্টসহ উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আটক করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে রোহিঙ্গাদের অজুহাত হচ্ছে, তাদের হাতে টাকা দরকার, তাই কাজ করতে বের হচ্ছেন।

সম্প্রতি পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের পৃথক অভিযান পরিচালনা করে ৬৩ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করেছে। উখিয়া থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, বিভিন্ন চোরাপথে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে বিভিন্ন অপরাধ করছে রোহিঙ্গারা। অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় টমটম ও সিএনজি চালনোর মাধ্যমে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। এইসব অপ্রাপ্তবয়স্ক চালকদেরও আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের কারণে দিন দিন স্থানীয় শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়ছে। আর যে সমস্ত অসাধু অর্থলোভী মানুষ নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য কম টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা শ্রমিক ব্যবহার করছে তাদেরকে আইনের আওয়তায় নিয়ে না আসলে স্থানীয় শ্রমবাজারসহ পাড়া-মহল্লায় রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ দিন দিন বাড়তে থাকবে।

ছড়িয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের তালিকা করে সরকারকে কঠিন পদক্ষেপ নেয়ার দাবি সুশীল সমাজের।

Recommended For You