ভারতের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির সরকার কি তবে দেশের ইংরেজি নামটা বাদ দিতে চলেছেন? ভারতীয় রাজনীতিতে এই আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর পাঠানো চিঠির বদৌলতে।
জি-২০ নেতাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’। প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের দাবি, ওই আমন্ত্রণপত্রে চিরাচরিতভাবে ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে লেখা হয়েছে প্রেসিডেন্ট অব ভারত।
এই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠছে, আসন্ন বিশেষ অধিবেশনে কী এই সংক্রান্ত প্রস্তাব পেশ করতে চলেছে নরেন্দ্র মোদির সরকার?
জানা গেছে, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু জি-২০ সমাবেশে অংশ নেয়া রাষ্ট্রনেতাদের একটি নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। সেই উপলক্ষে আমন্ত্রণপত্রও যাচ্ছে নিমন্ত্রিতদের কাছে। আমন্ত্রণপত্রটি ঘিরে তোলপাড় পড়ে গেছে জাতীয় রাজনীতিতে।
প্রশ্ন উঠেছে, হঠাৎ এমন বদলের কারণ কী? এই বিষয় নিয়েই বিজেপিকে তুমুল আক্রমণ করেছেন কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ। এক্স-এ (সাবেক টুইটার) রমেশ বলেন, তা হলে যেটা শুনেছিলাম, সেটাই সত্যি! আগামী ৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি ভবনে জি-২০ নেতাদের নৈশভোজের আমন্ত্রণপত্রে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’, অথচ চিরাচরিতভাবে ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’ লেখার কথা।
এদিকে আনন্দ বাজার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর পরে সরকারি নথিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পদের পরিচয়লিপিও বদলে গেছে। তবে ‘তাৎপর্যপূর্ণভাবে’ সরকারি ঘোষণাপত্রে নয়, বরং সরকারে থাকা বিজেপির দেওয়া ‘সরকারি তথ্যে’!
বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্র মঙ্গলবার তার এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) প্রধানমন্ত্রী মোদির আসন্ন ইন্দোনেশিয়া সফরের ঘোষণা সংক্রান্ত একটি সরকারি নথি প্রকাশ করেছেন। সেখানে মোদির পদ লেখা হয়েছে, ‘প্রাইম মিনিস্টার অফ ভারত’। যদিও সরকারি প্রথা অনুযায়ী তার পদটিকে ‘প্রাইম মিনিস্টার অফ ইন্ডিয়া’ লেখা হয়।
আগামী ৭ সেপ্টেম্বর মোদি ইন্দোনেশিয়ায় যাবেন ২০তম ‘আশিয়ান-ইন্ডিয়া শীর্ষ সম্মেলনে’ যোগ দিতে। সরকারি নথিতে অবশ্য ওই সম্মেলনের নামের ক্ষেত্রে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটি রাখা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কূটনৈতিক বিভ্রাট এড়াতেই এই পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও সরকারি ভাবে এখনও এ বিষয়ে কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।
কংগ্রেসের এই আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই আরও একটি জল্পনা শুরু হয়েছে। তা হলো, সংসদের আসন্ন বিশেষ অধিবেশনে কি দেশটির নাম ইন্ডিয়া থেকে সব ভাষাতেই ভারত করার প্রস্তাব আনতে চলেছে মোদি সরকার? বিশেষ অধিবেশন কী কারণে তা এখনও স্পষ্ট নয় কারও কাছেই।
অনেকের দাবি, ‘এক দেশ এক ভোট’ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিল আনা হতে পারে। অনেকেরই আবার দাবি, নারী সংরক্ষণ বিল পেশ হতে পারে। এই প্রেক্ষিতেই জি-২০ নেতাদের নৈশভোজে আমন্ত্রণের চিঠিতে ভারতের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণপত্র ঘিরে নতুন জল্পনা দানা বাঁধতে শুরু করেছে। যদিও শুরু থেকেই এ বিষয়ে সরকারের মুখে কুলুপ।
বিজেপিবিরোধী দলগুলো যে জোট তৈরি করেছে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইন্ডিয়া’। তাতে কংগ্রেস, তৃণমূল, শিবসেনা (উদ্ধব শিবির), এনসিপি, এসপি, জেডিইউ, ডিএমকের মতো একাধিক বিজেপি-বিরোধী দল রয়েছে। প্রথমে পাটনা, তারপর বেঙ্গালুরু হয়ে ইন্ডিয়ার নেতারা সম্প্রতি মুম্বইয়েও মিলিত হয়ে বিশদে আলোচনা সেরেছেন। তৈরি হয়েছে সমন্বয় কমিটিও।
আগামী লোকসভা ভোটে ইন্ডিয়া মোদির বিজেপিকে কড়া টক্করের মুখে ফেলতে চলেছে বলে বিশ্বাস বিরোধী নেতাদের। চুপ নেই বিজেপিও। ‘ইন্ডিয়া’ নামটি নিয়ে একাধিকবার সরাসরি কটাক্ষ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তাতে গলা মিলিয়েছেন বিজেপির বড় বড় নেতারা। এবার কি সেই ইন্ডিয়া নাম বদলে দেশের নাম শুধু ভারত করার লক্ষ্যে হাঁটতে শুরু করল মোদি সরকার?