(কাহিনি সংক্ষেপ : আজিম নামের একজন স্বল্পশিক্ষিত কৃষক বাড়িতে যুবতী স্ত্রী ও ১১ মাসের কন্যা সন্তান পরীকে রেখে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য ভারতে চলে যায়। যুদ্ধ শেষে বিজয়ীর বেশে দেশে ফিরে সে জানতে পারে তার ভালোবাসার একমাত্র অবলম্বন কন্যা পরী কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। মুহূর্তে ম্লান হয়ে যায় তার যুদ্ধ-জয়ের সকল আনন্দ। সে তখন পাগলের মতো প্রলাপ বকতে বকতে বলতে থাকে, ‘যুদ্ধে কত সহযোদ্ধাই তো শহীদ হলো। আমি কেন শহীদ হলাম না? শহীদ হলে আমাকে তো এতো নিদারুণ কষ্ট ভোগ করতে হতো না। এই হৃদয়ভাঙা ব্যথা আমি কেমনে সইবো?’)
৩.
গোহালবাড়ি চরের দুই সেরা লাঠিয়াল আজিম আর আবুল। দুজন দুজনের প্রাণের বন্ধু। একজনকে ছাড়া অন্যজনের এক মুহূর্তও কাটতে চায় না। মাঠে হাল চাষ থেকে শুরু করে খেলার মাঠ কিংবা গল্পের আসর, সব জায়গায়ই দুজন পাশাপাশি থাকে। দুজনই ভাল লাঠি খেলে বলে সমাজে তথা নারী মহলে তাদের একটু বেশিই মূল্য দেওয়া হয়। গোহালবাড়ি চরের প্রতিটি মেয়েই আজিম ও আবুলের জন্য পাগল। তারা সব সময় তাদের দুজনের পিছু পিছু ঘুরঘুর করে। কিন্তু কোন মেয়েই তাদের দুজনের মন জয় করতে পারেনি। দুবন্ধুই এতোদিন তাদের স্বপ্নের নায়িকা খুঁজে বেড়িয়েছে। কিন্তু তারা তাদের মনের মত মানুষ খুঁজে পায়নি।
গতকাল বালিয়াডাঙ্গী স্কুল মাঠে খেলতে গিয়ে হঠাৎ করেই দুবন্ধুর চোখ আটকে যায় দুটি মেয়ের উপর। এতোদিন তাদের কল্পনার ক্যানভাসে যেমন মনের মানুষ খুঁজে বেড়িয়েছে এ যেন হুবহু তাদের কল্পনার মানসপ্রিয়া। আপেল রাঙা গাল, কাজল কালো চোখ, মেঘ বরণ কেশ, লিপস্টিক রাঙা ঠোঁটে মিষ্টি হাসি, দেখলেই যে কোন পুরুষের ঘুম হারাম হয়ে যায়। দুই বন্ধুর হয়েছেও তাই। গতকাল সারা রাত তাদের দুবন্ধুর চোখে এক ফোঁটা ঘুমও আসেনি। কত মেয়েই তো তাদের আশেপাশে ঘুর ঘুর করে। কই— তারা কেউ তো দুজনের মনে ভালোলাগার পরশ বুলাতে পারেনি।
সমস্যা হলো এমন দুজন মেয়েকে তাদের ভালো লেগেছে যে— কোথায় তাদের বাড়ি, কী তাদের ঠিকানা তার কিছুই জানা নেই।
আজিম আবুলকে বলে, দোস্ত গতকাল সারা রাত একটুও ঘুমাতে পারিনি। বারবার সেই নিষ্পাপ মিষ্টি মুখের ছবি আমার মনের জানালায় এসে উঁকি দিয়ে গেছে। মনে হয়েছে ওকে ছাড়া আমার জীবনই বৃথা হয়ে যাবে। যে করেই হোক তুই ওদের ঠিকানা খুঁজে বের কর।
— চিন্তা করিস না দোস্ত। মেয়ে দুটির বাড়ি বালিয়াডাঙ্গীর আশেপাশের কোন গাঁয়েই হবে। তাছাড়া বেশভূষা দেখে মনে হয়েছে ওরা দুজন কোন স্কুল বা মাদ্রাসার নবম-দশম শ্রেণিতে পড়াশুনা করে। আমরা যদি সকাল ৯টার আগ থেকে একদিন তারাবাড়িয়া দাখিল মাদ্রাসা, একদিন দুবলিয়া হাই স্কুল আর একদিন সুজানগর হাই স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকি, আমি হলফ করে বলতে পারি তাহলে ওদের দুজনের খোঁজ পাওয়া যাবে।
— আবুল তোর কথার মধ্যে আশার আলো দেখতে পাচ্ছি। আমারও তাই মনে হয়। মনে হয় ওরা দুজন কোন দাখিল মাদ্রাসা কিংবা হাই স্কুলে পড়াশুনা করে। তোর কথামতো ৩ দিন সময় ব্যয় করলেই আশা করি আমাদের স্বপ্ন সফল হবে। আমরা দুজন খুঁজে পাবো দুজনের স্বপ্নের নায়িকাকে।
— খুঁজে পেলেই হবে না দোস্ত। জানিস তো, সমতলের মেয়েরা চরের ছেলেদের তেমন একটা পছন্দ করে না।
— হ্যাঁ তোর কথা আমি মেনে নিচ্ছি। কিন্তু গতকাল মেয়ে দুটি কেমন যেন আগ্রহ নিয়ে আমাদের দিকে তাকাচ্ছিল। ওদের চোখের দৃষ্টিতে ছিল প্রাণের পরশ। দোস্ত আমি ওদের দুজনের হৃদয়ে ভালোলাগার ঘোর দেখতে পেয়েছি।
— মেনে নিচ্ছি তোর কথা। ওদের চোখে ভালোলাগার ঘোর লক্ষ্য করেছি। কিন্তু আমাদের কপালই তো খারাপ। প্রকৃতির খেয়ালে সমতলের বাপ দাদার ভিটে-মাটি হারিয়ে আজ আমরা চরের বাসিন্দা হয়েছি। কঠোর পরিশ্রম করে নিজেদের ভাগ্য ফিরিয়েছি। কিন্তু দুঃখ কী জানিস, সমতলের গোহালবাড়ি গাঁয়ের বাসিন্দা থেকে হয়ে গেছি গোহালবাড়ি চরের বাসিন্দা। তাই অনেকে আমাদের একটু অন্য দৃষ্টিতে দেখে।
— দেখুক। তাতে আমার মনে কোন কষ্ট নেই। মনে রাখিস আমি আজিম। আমার লাঠির সামনে যেমন কেউ দাঁড়াতে পারে না। আমার মনের মানুষের সামনেও কেউ দাঁড়াতে পারবে না। যত বাধাই আসুক না কেন, আজ প্রতিজ্ঞা করে বলছি— সব বাধা দূর করে আমার মনের মানুষকে আপন করে নেবই নেব। এখন ওসব চিন্তার সময় না। ওদের দুজনকে খুঁজে বের করাই এখন আমাদের বড় কাজ।
— তাহলে আগামীকাল সকাল থেকেই শুরু হোক আমাদের অপারেশন।
— ঠিক আছে, তাই হোক। তাহলে আগামীকাল আমরা কোথায় যাচ্ছি?
— তারাবাড়িয়া মাদ্রাসায়।
পরের ২ দিন সকাল ৯টার আগ থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত দুবন্ধু তারাবাড়িয়া মাদ্রাসা ও দুবলিয়া হাই স্কুল গেটে অবস্থান করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসলেও তারা হতাশ হয় না। তাই ৩য় দিনে যথাসময়ে তারা গিয়ে হাজির হয় সুজানগর হাই স্কুল গেটে। আর সত্যি কথা বলতে কী—এদিন ভাগ্যদেবী যেন তাদের পানে মুখ তুলে চায়। খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হলো না। মাত্র ১৫ মিনিট অপেক্ষা করার পরই দেখা মিলল দুবান্ধবীর। দুজন কী যেন কথা বলতে বলতে স্কুলের দিকে আসছিল। হঠাৎ করেই আজিমের সাথে তার পছন্দের মানুষের চোখাচোখি হয়ে যায়। দেখে মনে হয় মাত্র দুদিনেই তার সেদিনের সেই উচ্ছলতা হারিয়ে গেছে। তার চোখে বেদনাভরা করুণ চাহনি। মনে হলো সে যেন আজিমকে কিছু বলতে চায়। আবুলের চোখও তার প্রিয় মানুষের চোখে আটকে গেছে। গেট দিয়ে স্কুলে ঢুকার পর দুবান্ধবী পিছন ফিরে দুজনের দিকে হাসিমাখা দৃষ্টিতে তাকাতে দেখে দুবন্ধুর মনের চিন্তা অনেকটাই দূর হয়ে যায়।
তারপর দুবন্ধু দুজনের দিকে চোখ তুলে চাইলো। তাদের চোখে মুখে তখন বিশ্ব জয়ের হাসি। এখন তাদের অপেক্ষা করতে হবে স্কুল ছুটি না হওয়া পর্যন্ত। ছুটির পর মেয়ে দুটিকে ফলো করে তাদের নাম ঠিকানা জোগাড় করতে হবে। তাছাড়াও তাদের সাথে ভাল আচরণ করে ভাব জমানোরও চেষ্টা করতে হবে।
— আমি তোকে বলেছিলাম না তিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যে কোন এক জায়গায় ওদের দুজনের খোঁজ পাওয়া যাবে। আবুল উৎফুল্ল কন্ঠে বলে।
— তুই যে যথার্থ বলেছিস আমি তখনই স্বীকার করেছিলাম।
— শুধু স্বীকার করলে হবে না বন্ধু।
— বল কী করতে হবে?
— আপাতত সুজানগর বাজার থেকে পেট ভরে মিষ্টি খাওয়ালেই হবে। পরে পাবনার রূপকথা সিনেমা হলে ময়না মতি ছবির সাথে সেদিনও পেট পুরে খাওয়াতে হবে।
— এতটুকুতেই থেমে গেলি? আরও কিছু চাইলেও আমি না করতাম না। জানিস তো—আকাশের চাঁদ হাতে পেলে মানুষ কেমন খুশি হয়। আমি আজ আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছি।
— বুঝতে পেরেছি তুই আজ অনেক খুশি। কিন্তু এখানে এখন দাঁড়িয়ে থেকে কোন লাভ নেই। স্কুল ছুটি হতে এখনও অনেক দেরি আছে। চল ততক্ষণে মিষ্টির দোকান থেকে ঘুরে আসি। আমার আর তর সইছে না।
— চল দোকানে। আজ তোর জন্য পেট চুক্তি।
— চল যাই।
মিষ্টির দোকানে বসে দুজন মিষ্টি খাওয়ার পর গল্পগুজব করতে করতেই সূর্যটা পশ্চিম আকাশে হেলে পড়ে। এখন আর দেরি করা ঠিক হবে না। তাই তারা স্কুল গেটে এসে অপেক্ষা করতে থাকে। অল্প সময়ের মধ্যেই স্কুলের ছুটির ঘণ্টা বেজে উঠল। তারপর দুবন্ধুকে আশ্চর্য করে দিয়ে সবার আগে দুবান্ধবী স্কুল গেট পেরিয়ে বাইরে এসে দাঁড়াল। এদিক ওদিক চোখ মেলে তাকাতেই তাদের চোখে ধরা দিল বিশ্ব বিজয়ী উৎফুল্ল দুবন্ধুর হাসিখুশি মুখ। তারপর কোন দিকে না তাকিয়ে খুবই ভদ্র বালিকার মতো তারা গন্তব্যের পথে যাত্রা শুরু করল। নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে দুবন্ধুও তাদের অনুসরণ করতে থাকল। কিছু সময় পরই লোকালয় পেরিয়ে দুবান্ধবী এসে পড়ল ফাঁকা মাঠের ভেতরে। তখন দ্রুত পা চালিয়ে দুবন্ধু ওদের দুজনের সন্নিকটে চলে এলো। তারপর আজিমের ইশারায় আবুল পার্শ্বনায়িকাকে জিজ্ঞাসা করলো— দুবান্ধবীর নাম পরিচয় কি জানা যায়?
ইঙ্গিত ভরা দৃষ্টি ফেলে মেয়েটি সাথে সাথে উত্তর দিল, অচেনা মানুষের কাছে নাম পরিচয় বলবো কেন?
— নাম পরিচয় বললেই তো চেনা-জানা হয়ে যায়। আমার বন্ধুর নাম আজিম। সে আশেপাশের ২০ গাঁয়ের মধ্যে লাঠি খেলায় সেরা। আর আমি তার বন্ধু আবুল। আমিও লাঠি খেলি। আমাদের বাড়ি গোয়ালবাড়ির চরে।
— এসব কিছুই আমাদের জানা আছে।
— তাহলে আমরা তো অচেনা কোন মানুষ নই। আমাদের কাছে নিজেদের নাম পরিচয় দেওয়াই যায়, কি বলো?
— না, আগে তো কোনদিন দেখা হয়নি।
— এখন তো দেখা হলো, কথাও হলো। এখন নিশ্চয়ই সমস্যা দূর হয়ে গেছে।
— তা গেছে। কিন্তু সখির অনুমতি ছাড়া আমি কোন কথা বলতে পারব না।
— ঠিক আছে। সখির অনুমতি নিয়েই বলো। আর একটা প্রশ্ন তোমার সখির কী হয়েছে? সে কি অসুস্থ? তাকে এতো মলিন লাগছে কেন?
— হ্যাঁ সে অসুস্থ।
— তার কী অসুখ? ডাক্তার দেখাও না কেন?
— আজ ডাক্তারের সাথে দেখা হয়েছে। আশা করি অচিরেই অসুখ ভাল হয়ে যাবে।
— এত হেয়ালি ভরা কথা বলছ কেন? কোথায় ডাক্তারের সাথে দেখা হলো? আর ডাক্তারের সাথে দেখা হলেই কি অসুখ ভালো হয়? না ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ খেতে হয়?
— মনের অসুখ, তাই ওষুধ খেতে হয় না। ডাক্তারের সাথে দেখা হলেই অসুখ ভালো হয়ে যায়।
— ভালো। খুব ভালো। তা ডাক্তারের সাথে কখন দেখা হলো?
— প্রথম দেখা হয়েছে আজ সকালে স্কুল গেটে। তখন থেকেই তার অসুখ কমতে শুরু করেছে। আর এখন ডাক্তার তার পাশেই আছে। এ ভাবে আর কয়দিন ডাক্তারের সান্নিধ্য পেলে সে পুরাপুরি সুস্থ হয়ে যাবে।
— হেয়ালি করে এসব কী বলছো? একটু পরিষ্কার করে বল?
— আর কত পরিষ্কার করে বলব বলুন তো? কয়েকদিন আগে বালিয়াডাঙ্গী স্কুল মাঠে লাঠি খেলা দেখতে গিয়েই আমার সখি প্রেমরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। আজ সকালে সেই প্রেমিক পুরুষ স্কুল গেটে হাজির হওয়ার পর থেকেই তার মন ভালো হতে শুরু করেছে। এবার বুঝেছেন? নাাকি আরও পরিষ্কার করে বলতে হবে?
— না। আর পরিষ্কার করে বলতে হবে না। আরও একটা প্রশ্ন ছিল। অনুমতি দিলে করতে পারি।
— বলুন।
— শুধু কি তোমার সখিই সেই রোগে আক্রান্ত হয়েছে? নাকি আশেপাশের আর কারো মনেও এর ছোঁয়া লেগেছে?
— সেটা বলা যাবে না। অনুমান করে নিতে হবে।
— আমি মনে হয় অনুমান করতে পেরেছি। অনেক কথাই তো হলো। এখন মনে হয় ঠিকানা দিতে আপত্তি নেই?
— না তা নেই। আমার সখি দাসপাড়া গাঁয়ের আহেদ আলী সরদারের কন্যা মনোয়ারা। আমি একই গাঁয়ের সানোয়ারা। বাবার নাম দবির প্রামানিক।
— আমাদের দুজনের নাম পরিচয় বলতে হবে?
— লাগবে না। আপনাদের দুজনকেই আমরা ভালোভাবে চিনি।
— আর একটা কথা। তোমার সখি বোবা নাকি? এখন পর্যন্ত তার একটা কথাও শুনতে পেলাম না।
— আপনার চোখে কি কোন সমস্যা আছে? দেখতে পাচ্ছেন না সেই কখন থেকে আমার সখি আপনার বন্ধুর সাথে চোখের ভাষায় কথা বলছে?
— তাই নাকি। আমি তো খেয়ালই করিনি।
— তা করবেন কেমন করে। আপনার চোখও যে আর একজনের উপর আঠার মতো লেগে রয়েছে।
— তাতে কি কারো মনে কোন কষ্ট আছে?
— কষ্ট থাকলে কেউ সেই সুযোগই পেত না।
— অনেক কথাই বলা হলো। আমরা কি মাঝে মাঝে দুবান্ধবীর সাথে দেখা করার অনুমতি পাবো?
— তা পেতে পারেন। তবে কোন লোকালয়ে নয়। তা হতে হবে বিকেল বেলায় স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে কোন নির্জন প্রান্তরে।
— তাই হবে। বন্ধু আজিম তুই কি আজ চোখে চোখেই তোর প্রিয়ার সাথে কথা বলা শেষ করবি?
— নারে আবুল। চোখে চোখে কথা বলে আজ আমি যে স্বর্গের আনন্দের সাগরে ভেসেছি, মুখে কথা বলে সে আনন্দ নষ্ট করতে চাই না। নিশ্চয়ই আমাদের আবার দেখা হবে। সেদিন না হয় বেশি কথা বলে আজকের ঘাটতি পূরণ করে নেব।
— ঠিক আছে।
প্রথম দিনেই এতো বেশি সময় নেওয়া ঠিক হবে না। আজকের মতো আমরা আসি— বলে দুবান্ধবীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দুবন্ধু ফিরতি পথ ধরল। তারা যেন তাদের মন দুটি বন্ধক রেখে গেল দুবান্ধবীর হৃদয়ের গহীনে।