অর্থের কাছে হেরে যাচ্ছে মেধাবী সাদিয়ার শিক্ষা জীবন

পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছেন সাদিয়া। তার পড়া লেখার প্রতি ছিল এক ভিন্ন রকম আগ্রহ। স্বপ্ন ছিল তার ডাক্তার হওয়া। পাবনার ঈশ্বরদী পৌরসভার বাবুপাড়া এলাকার মেধাবী শিক্ষার্থী সাদিয়া।

২০১৭ সালে ৫ম শ্রেণীতে পড়াশোনা করার সময় ঈশ্বরদী রেলগেট এলাকার গ্রীন জুয়েলস কিন্ডার গার্টেন থেকে অর্জন করেন জিপিএ ৫।

সাদিয়ার মায়ের দুই মেয়ে নিয়ে জীবন যাপন করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় পরবর্তীতে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ওঠার পর সাদিয়াকে জামালপুরের সরিষাবাড়ি ফুফুর বাসায় পাঠিয়ে দেয় । এবং সেখানে থেকেই পড়াশোনা করতে থাকে।

এরপর ২০২০ সালে চিল্ডেস হোম পাবলিক স্কুল থেকে অষ্টম শ্রেণীতে জেএসসি পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ অর্জন করেন। সবশেষে ২০২৩ সালে একই স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগ কৃতিত্বের সঙ্গে অর্জন করেন গোল্ডেন জিপিএ -৫।

এরপরেই বাধে বিপত্তি। এতদিন কম খরচে পড়াশোনার খরচ চালানো গেলেও ভবিষ্যতের দিনগুলোতে পড়াশোনা করানো সম্ভব হবে কি না দুশ্চিন্তায় সাদিয়া ও তার মা।

এ বিষয়ে সাদিয়ার মা কান্নায় ভেঙে পড়েন,সাদিয়া মা বলেন, সাদিয়ার বাবা বেচে থাকা অবস্থায় বায়িং হাউজের কন্ট্রোলার কোয়ালিটি পদে চাকরি করতেন। তার স্বপ্ন ছিলো তার ছোট মেয়ে সাদিয়াকে পড়াশোনা করিয়ে ডাক্তার বানাবেন।

কিন্তু আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমি যখন মেয়েদের দায়িত্ব নেই তখন আমার খুবই কষ্টসাধ্য হচ্ছিল। মেয়েটা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ রেজাল্ট নিয়ে এসএসসি পাস করল। কিন্ত আমার সামর্থ্য নাই মেয়েকে আর পড়াশোনা করানোর৷ সাদিয়ার বাবার দেখা স্বপ্ন এখন শুধুই স্বপ্ন।

তাদের ঠিকমতো খেতে দিতে পারি না৷ ভাল ভাল কাপড় কিনে দিতে পারিনা৷ কয়েক বছর যাবত ঈশ্বরদীর শাহানুর হার্ডওয়ার এর মালিকের স্ত্রী আমার চাচাতো বোনের বাসায় আশ্রয় নেই। সেখানে দুই মেয়েকে নিয়ে আমরা বসবাস করি। নূন আনতে পান্তা ফুরায় এমন অবস্থায় সরকারি সহযোগিতা কিংবা দেশের বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে আমি আমার মেয়েকে ডাক্তার বানিয়ে তার বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ ।

এ বিষয়ে মেধাবী শিক্ষার্থী সাদিয়া বলেন, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন বাবা মারা যায়। মায়ের মুখে শুনেছি বাবার ইচ্ছে ছিলো আমাকে পড়াশোনা করিয়ে ডাক্তার বানাবে। আমি আমার মতো ভালোভাবেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। মাধ্যমিক পরিক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেছি।

তবে সবার কাছে শুনেছি উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনার খরচ বেশি। এবার আর হয়তো আমার পড়াশোনা হবে না। বন্ধ হয়ে যাবে পড়াশোনা। বাবার স্বপ্ন হয়তো আর পূরণ হবেনা। আমি ডাক্তার হতে পারব না। এখন উপরে আল্লাহ আর নিচে শেখ হাসিনা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

এসকল বিষয়ে সাদিয়ার বড় বোন বলেন, আমার বয়স যখন ১৪ বছর তখন আমার বাবা মারা যায়। আমার বাবা বলতেন আমার ছোট মেয়েকে ডাক্তার বানাবে। কিন্ত ডাক্তার বানানোর ইচ্ছে থাকলেও বাবা মারা যাওয়ার পর সেই ইচ্ছে পূরণে আমার মা অনেক চেষ্টা করে চলছেন।

তবে এখন আমার মায়ের পক্ষেও কষ্টকর হয়ে পড়েছে জীবিকা নির্বাহ করা। আমি ছোট ছোট বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়িয়ে নিজের খরচ নিজে চালিয়ে নিলেও আমার ছোট বোনকে দিয়ে তো এসব করানো যাচ্ছেনা। তার পড়াশোনায় ক্ষতি হবে। এখন কি করব কিছু ভেবে পাচ্ছিনা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলাকার স্থানীয়রা বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী সাদিয়ার চালচলন ও পড়াশোনার প্রশংসা করার মতো, সাদিয়া অনেক মেধাবী মেয়ে। অনেক ভদ্র ও নম্র স্বভাবের,পড়াশোনাও ভালো।

কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে পড়াশোনা বন্ধের দিকে৷ এখন সরকার যদি সু-নজর দেয় তাহলে এই মেধাবী শিক্ষার্থীর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে।

আওয়ামিলীগ নেতা আসাদুর রহমান বিরু বলেন, আমি আওয়ামিলীগের বড় নেতাদের সাথে সাদিয়ার ব্যপারে কথা বলব৷ তারা যেনো সাদিয়ার পাশে দাঁড়ায়। সাদিয়ার মতো একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর যদি পড়াশোনা আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এটা খুবই দুঃখজনক।

সাদিয়ার পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয় একারণে আর্থিকভাবে পাশে দাড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সূবীর কুমার দাস।

তিনি বলেন, যেহেতু সাদিয়া একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। তার মতো শিক্ষার্থী দেশ ও দশের উপকারে আসবে৷ আমি কথা দিলাম সাদিয়ার পাশে আমি থাকব তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে পড়াশোনা যাতে চালিয়ে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা আমি করব৷

শেয়ার করুন:

Recommended For You