ডেঙ্গু মোকাবিলায় জনস্বাস্থ্য নীতি সমন্বয়ের তাগিদ

আইইডিসিআর পরিচালক ড. তাহমিনা শিরিন বলেন, ‘মশার জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। অতএব বর্তমানে উপলব্ধ জৈবিক ও নিরাপদ কীটনাশক একইসঙ্গে মাটিতে এবং স্প্রের মাধ্যমে প্রয়োগ করে বাংলাদেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ অবিলম্বে কার্যকর হতে পারে।’

ডেঙ্গু মোকাবিলার জন্য কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা বা অনুমোদিত ভ্যাকসিন নেই। সেজন্য কার্যকর মশা ব্যবস্থাপনা এবং জনস্বাস্থ্য নীতিকে আরও উন্নত ও সমন্বিত করার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব বাংলাদেশি অ্যাফিলিয়েটেড মাইক্রোবায়োলজিস্টস (আইএসবিএম) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে বিশেষজ্ঞরা এ মত দেন।

দেশে চলমান ডেঙ্গু সংকট বিষয়ে জুম প্লাটফর্মে আয়োজিত ওয়েবিনারটির শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশে ডেঙ্গু মহামারি পরিস্থিতি: নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিকারে সম্ভাব্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা’। দুই ঘণ্টার এ আয়োজনে বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী, পেশাজীবী, সংবাদকর্মীসহ মোট ১৪৪ জন অংশ নেন।

ওয়েবিনারে আমন্ত্রিত বক্তা ছিলেন বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক প্রফেসর ডা. তাহমিনা শিরিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও প্রথিতযশা মেডিকেল এনটোমোলজিস্ট ড. কবিরুল বাশার, সিঙ্গাপুরের এনভায়রনমেন্টাল হেলথ ইনস্টিটিউটের পরিবেশ বিষয়ক এপিডেমিওলজি এবং টক্সিকোলজি বিভাগের পরিচালক ডা. সিম শুজেন, কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ক্লিনিকাল প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মোরশেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাকিলা নার্গিস খান এবং থাইরোকেয়ার লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট ডা. আনোয়ারুল ইকবাল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক এবং আইএসবিএমের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ওয়েবিনারটির সহ-আয়োজক ড. সঙ্গীতা আহমেদ দেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেন।

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির এপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. জি ইউ আহসান আলোচনা পর্বটি সঞ্চালনা করেন। আইএসবিএমের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের অধ্যাপক আনোয়ার হক তার স্বাগত বক্তব্যে জনস্বাস্থ্যের জন্য বৈজ্ঞানিক ফলাফল ছড়িয়ে দিতে মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার ওপর জোর দেন এবং রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে জনসাধারণের সম্পৃক্ততার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বাংলাদেশে তথা সমগ্র বিশ্বে ডেঙ্গুর বর্তমান অবস্থা এবং কীভাবে এটি মারাত্মক জীবন-হুমকির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে সে বিষয়ে বেশ কিছু প্রয়োজনীয় ধারণা এবং মতামত বিনিময় হয় ওয়েবিনারে।

আইইডিসিআর পরিচালক ড. তাহমিনা শিরিন দেশে ডেঙ্গুর অবস্থা এবং এডিস মশার বিস্তার নিয়ন্ত্রণে তার সংস্থার উদ্যোগ সম্পর্কে অবহিত করেন।

তিনি বলেন, ‘এডিস মশার প্রজননস্থল হিসেবে গাছের টব এবং ছাদের ওপরের বাগান ছাড়াও প্রধানত ওয়াসার ওয়াটার মিটার এবং নির্মাণাধীন ভবনের আশপাশের এলাকাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। মশার জৈবিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। অতএব বর্তমানে উপলব্ধ জৈবিক ও নিরাপদ কীটনাশক একইসঙ্গে মাটিতে এবং স্প্রের মাধ্যমে প্রয়োগ করে বাংলাদেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ অবিলম্বে কার্যকর হতে পারে।’

আলোচকরা জনস্বাস্থ্য সচেতনতার অংশ হিসেবে ব্যক্তিগত সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা জানান, ঘরোয়া পদ্ধতিতে মশা প্রতিরোধে পুদিনা, গাঁদা ফুল এবং তুলসী পাতা ব্যবহার করা যেতে পারে।

আলোচকরা বলেন, ‘এই মুহূর্তে যেহেতু ডেঙ্গু সংক্রমণ মোকাবিলার জন্য কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই এবং কোনো অনুমোদিত ভ্যাকসিনও নেই, সেজন্য দেশে ডেঙ্গু মোকাবিলায় কার্যকর মশা ব্যবস্থাপনা এবং জনস্বাস্থ্য নীতিকে আরও উন্নত ও সমন্বিত করা দরকার।’

ওয়েবিনারে ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন তৈরির বিষয়েও আলোচনা করা হয়।

আইএসবিএমের যুগ্ম-সম্পাদক ডা. মনোয়ার হোসেন অতিথিসহ শ্রোতাদের ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানেন।

শেয়ার করুন:

Recommended For You