
বরগুনার বেতাগীতে ১২৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৭টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ ভারপ্রাপ্তদের দিয়েই চলছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। বদলি, অবসর, মৃত্যু, সৃষ্ট পদসহ নানা কারণে পদগুলো শূন্য হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিজানুর রহমান খান।
প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হল- ভোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলীয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদালয়, পূর্ব গাবতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বুড়ামজুমদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ বুড়ামজুমদার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হোসনাবাদ মোহাম্মাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেশান্তরকাঠি এমএ খান প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিবিচিনি দেশান্তরকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝোপখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, করুণা মোকামিয়া সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়, চরখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুমড়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাসন্ডা সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়।
বেতাগী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বেতাগী উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় মোট ১২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে ১২৯ জন প্রধান শিক্ষকের এবং ৬৯৮ জন সহকারী শিক্ষকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে প্রধান শিক্ষক রয়েছেন ৫১ জন এবং প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্বে রয়েছেন ৪১ জন। বাকি ৩৭টি বিদ্যালয় চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (সহকারী শিক্ষক) দিয়ে। এ ছাড়া উপজেলার মোট ১২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭২ জন সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য রয়েছে।
ঝোপখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সিমা আক্তার বলেন, ‘এমনিতেই আমাদের স্কুলে একজন সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। তারপর আবার প্রধান শিক্ষকও নেই। বর্তমানে সহকারী শিক্ষকদের দিয়েই স্কুলের কার্যক্রম চলছে। যিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন তাকে সব সময় স্কুলের খাতাপত্র নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। এ জন্য তিনি ছাত্র–ছাত্রীদের পাঠদানে তেমন মনোযোগ দিতে পারেন না।’
নাম প্রকাশ না করা শর্তে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা একজন বলেন, ‘সবরকম যোগ্যতা থাকা সত্বেও অনেক শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না। কিসমত ভোলানাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্বে থাকা জ্যুতিকা রাণী পদোন্নতি পাওয়ার আগেই মারা যান। অনেকে ভারপ্রাপ্ত কিংবা চলতি দায়িত্ব নিয়েই অবসরে গেছেন। বর্তমানেও অনেকে অবসরের পথে। তবুও পদোন্নতি ও প্রধান শিক্ষকের স্কেল কোনোটাই মিলছে না।’
পূর্ব করুণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক আব্দুল মন্নান বলেন, ‘২৪ বছর সহকারি শিক্ষক হিসেবে কাজ করার পর আমাকে প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক পদের সকল ধরনের কাজ করেও প্রাপ্য সম্মান ও সুবিধা কোনটাই পাচ্ছি না। বরং চলতি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পদে পদে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়।’
বেতাগী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘যেসব বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে তার তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি প্রদানের জন্য ১০৭ জন সহকারী শিক্ষকের তালিকা তৈরি করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। এছাড়া সহকারী শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির আলোকে কার্যক্রম চলমান আছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব শূন্য পদগুলো পূরণ করা হবে।’