রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণহীন অপরাধ : ৬ বছরে মামলা ২৯ হাজার ৫৯

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার ছয় বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়েছে। যার মধ্যে মাদক ব্যবসা, অপহরণ, ধর্ষণ, মারামারি এবং বিশৃঙ্খলা নিত্যদিনের ঘটনা। এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ৬ হাজার ৮৩৭ জনকে আসামি করে ২৯ হাজার ৫৯টি মামলা হয়েছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের পরিসংখ্যানমতে, গেল ৬ বছরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ২৩৮টি অস্ত্র মামলা, ৯৪টি ধর্ষণ বা ধর্ষণ চেষ্টার মামলা, ৪৪টি অপহরণ মামলা, ২৪৩টি হত্যা মামলা, ৩৭টি মানবপাচার মামলা, ৬২টি ডাকাতির মামলা, ৪২টি ফরেনার্স এক্ট মামলা, ৬৫টি বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা এবং সর্বোচ্চ ২০৫৭টি মাদক মামলা রেকর্ড হয়েছে। এছাড়া গত ৬ বছরে রোহিঙ্গাদের দ্বারা পুলিশ আক্রান্ত হয়ে ৭ মামলায় ৭৭ জন রোহিঙ্গাকে আসামি করা হয়েছে। যেখানে সর্বমোট ২৯ হাজার ৫৯টি মামলায় এই পর্যন্ত ৬ হাজার ৮৩৭ রোহিঙ্গাকে আসামি করা হয়।

পুলিশ বলছে, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, মানবপাচার ও আধিপত্য বিস্তারসহ ১৪ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত কিছু রোহিঙ্গা।

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার ছয় বছরে পা দিয়েছে শুক্রবার (২৫ আগস্ট)। কূটনৈতিক জটিলতায় আটকে আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। যদিও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেছিল মিয়ানমার সরকার। কিন্তু সেই প্রত্যাবাসন আজও শুরু হয়নি।

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যত দেরি হচ্ছে তত বাড়ছে অপরাধ। ক্যাম্পে খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, গ্রুপে-গ্রুপে গোলাগুলি, আধিপত্য বিস্তার, মাদক, অস্ত্রসহ নানা সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দারা রয়েছেন আতঙ্কে।

রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধের কথা তুলে ধরে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেছেন, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদক, কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন আলোচিত হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে রোহিঙ্গারা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, অল্প জায়গায় বহু মানুষের বসবাসের কারণে রোহিঙ্গারা মাদকসহ নানা অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্প এখন নানা অপরাধের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অপরাধ-কর্ম নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ক্রমাগত অপরাধ-কাণ্ডে জড়িয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। মাদক ব্যবসা, অপহরণ ও ছিনতাইসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের জনজীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের পাবলিক প্রসিকিউটর এড ফরিদুল আলম বলেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন ব্যবস্থায় এমন কোনো অপরাধ নেই যা রোহিঙ্গারা করে না।

এদিকে রীতিমতো স্থানীয়দের টার্গেট কিলার হিসেবে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।

প্রসঙ্গত, রাখাইন রাজ্যে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তল্লাশিচৌকিতে হামলার অভিযোগে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন শুরু করে। এ সময় গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। তাদের নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসে রোহিঙ্গারা। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পে ১১ লাখ ১৮ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নেন। শুরু থেকে বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা রোহিঙ্গাদের খাদ্য ও চিকিৎসাসহ বিভিন্ন সহায়তা দিয়ে আসছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশন অফিস ৩৪টি শরণার্থী ক্যাম্পে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

Recommended For You