সিন্ডিকেটের কবলে নিত্যপণ্যের দাম

সিন্ডিকেট কবলে পড়ে নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে। জীবনযাত্রার চলমান অচলাবস্থার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হতাশ নি¤œ ও মধ্যআয়ের মানুষগুলো। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য নেই। যা আয় করেন তার বেশিরভাগই চলে যায় নিত্যপণ্যের বাজারে। সিন্ডিকেটের কাছে সবাই যেন অসহায় পড়েছে। একবার একটি পণ্যের দাম বাড়লে সেটা আর কমতে চায় না। দ্রব্যমূল্য নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। কারণ, পণ্যের বাজার সকালে এক রকম- বিকেলে আরেক রকম পরের দিন আরেক রকম। যেসব পণ্যের দাম বাড়ার কথা নয়, সেইসব পণ্যেরও দাম বাড়ছে যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণ ছাড়াই। ফলে বাজারে গিয়ে পছন্দের পণ্যই চাহিদামতো কিনতে পারছেন না অনেকেই। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি রাখতে গিয়ে জরুরি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না কিনেই ঘরে ফিরছেন। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারকে আরো কঠোর আইন করতে হবে।

বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ, রসুন, ডিম, ডাল। মাছ-মাংস কিনতেও হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা। বেশ কয়েক মাস ধরে অস্থির মাছ, মাংসের বাজার, কাঁচাবাজার, এমনকি মসলাজাত পণ্যের বাজার। স¤প্রতি দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে শুরু হয়েছে তদারকি ও আমদানি। ভারত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পর আরও ৯ দেশ থেকে পেঁয়াজের আমদানির অনুমতিও দেওয়া হয়েছে। এরপরও নিয়ন্ত্রণে নেই পণ্যের কেনাবেচা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেলো, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা কেজিতে। মহল্লার কোনো কোনো দোকানদার ১০০ টাকাও রাখছেন। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়।

কয়েক দিনের ব্যবধানে রসুনের দামও কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। পাঁচভাই ঘাটলেন ব্যবসায়ী নাজমুল বলেন, মাস দেড়েক আগেও রসুনের কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে ছিল। সেটা বাড়তে বাড়তে ২৫০ টাকায় এসেছে। গত দুই থেকে তিন দিনের ব্যবধানেই আমদানি করা রসুনের কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায়। দেশি রসুন কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। এই বিক্রেতা আরও বলেন, পাইকারিতে দাম বাড়ায় খুচরায়ও বেড়েছে। তদারকি-অভিযান শুরু হলে পণ্যটির দাম হয়তো কিছুটা কমবে।

বাজারে পেঁয়াজ, রসুনের মতো বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে আদা। কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়ে ইন্দোনেশিয়ার আদা ২৫০ থেকে ২৬০ এবং মিয়ানমারের আদা ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে, দাম কমার পর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৪ টাকায়। খোলা সয়াবিন প্রতি লিটার ১৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা চিনি প্রতিকেজি ১৩০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ১৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

কিন্তু বাজারে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকায় খোলা চিনি পাওয়া গেলেও প্যাকেটজাত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। মসুরের ডাল কেজিতে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে চিকন দানার মসুর ডালের কেজি ১৪০-১৫০ টাকা , মোটা দানা ১১০ টাকা ১২০।

অন্যদিকে, কোরবানির ঈদের পর থেকেই বাড়ছে আলুর দাম। বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের ছুটি, বৃষ্টি, পরিবহন সংকটের কারণে আলুর পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় দাম বেশি। যদিও বাজারে পর্যাপ্ত আলু রয়েছে। উল্টো কেজিতে প্রায় ১০ টাকা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।
কাঁচাবাজারের দামের কথা বলাই বাহুল্য। বাজারে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বেশির ভাগ সবজি।

প্রতি কেজি পটল, চিচিঙা, ছোট শসা, জালি কুমড়া এবং কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। ঝিঙা, বরবটি, রান্না করার শসা, কচুর মুখী, করলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। গোল বেগুন প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। কাঁচামরিচ প্রতিকেজি ২০০ টাকায় এবং টমেটো ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া বাজারে বিভিন্ন শাকের দাম কিছুটা স্থিতিশীল। ক্রেতারা বলছেন, শাকের আঁটির আকার ছোট হয়েছে। প্রতি আঁটি লাল, মুলা, কলমি শাক ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে পুঁই, মিষ্টি কুমড়া, লাউ শাকের আঁটি ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।

বাজারে প্রতি ডজন মুরগির ডিম পাওয়া যাচ্ছে ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকায়। মাংসের বাজারের চিত্রও অভিন্ন। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগি কিনতে কেজিতে খরচ ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা। গরু ও খাসির মাংস আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।

মাছের বাজারেও নেই সুখবর। বাজারে বেড়েছে ইলিশের সরবরাহ তবে মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে এখনও। ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রামের ইলিশের কেজি ১ হাজার টাকারও বেশি। আর ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকায়। প্রতিকেজি রুই ও কাতলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। তেলাপিয়ার কেজি ২৫০ থেকে ২৭০ টাকা, পাঙাশ ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, চাষের কই ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

শেয়ার করুন:

Recommended For You